আজ সারাটা দিন নি:সঙ্গতার চক্রবুহ্যে খাবি খেয়ে খেয়ে কোয়ারেন্টাইনে দশম দিনটা পার করলাম, চারদেয়ালের মাঝখানে, আমার মতো অনেক মানুষই এমন বন্দি কারাগারে। করোনার কারনে নিজের মনের কথা বলার মত মানুষ এবং সময় দুটোই কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। একমাত্র মানুষই কখনোই একা বসবাস করতে পারেনা। পরিবার এবং সমাজের সাথে মিলেমিশে বসবাস করে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন সংকটকাল এলো যে -পৃথিবীর তাবৎ মানুষ ঘরবন্দি, যদিও বা বাইরে বের হয় এক ঝলক, তবুও একই ভয়, কি জানি কি হয় ! এসো না এসো না, কাছে এসো না, তুমি কিংবা আমি কার সাথে করোনা কেউ জানি না ! অদ্ভুত একটা দূরত্ব, অদ্ভুত একটা ভয়। সব কিছু কেমন থমকে আছে, গাছেদের মতো। দিন দিন আমরা অনেকেই পরিবার এবং কাছের মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি।একসাথে খাওয়া, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, সব কিছু থেকে অনেক দূরে। পরিবারের মানুষগুলো পর্যন্ত কখনো কখনো বড্ড বেশী দূরে চলে যাচ্ছে, যদি একটু গা গরম, জ্বর, হাঁচি, কাঁশি হয় তবে তো হয়েই গেল। বহু দূর ….বহুদূর…. তোমার আমার বসবাস সাভার, আর মধুপুর ! বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষও বটে, এই করোনা থেকে পরিত্রাণ পেতে। যদি এভাবেই দূরত্বে থেকে চলে যায় করোনা, তবে আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। সব জটিলতা কাটিয়ে একটি সুন্দর, সাফল্যমণ্ডিত, ভালবাসাময় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে। এবং নিজেদেরকে অনেক বেশী মানবিক হিসেবে পূর্ণতা প্রদান করতে সবার সাথে মিলেমিশে, বিপদে আপদে কাজ করে যেতে হবে।করোনার এই অসময়ে বার বার শুধু একটাই চিন্তা কোন টিকা আবিষ্কার হলো কিনা ? কবে হবে ? কবে সব কিছু ঠিক হবে, নাকি হবেই না কোন দিন ? আমার ছোট মেয়েটা বার বার বলছে মা পার্মানেন্টলি তোমাকে মাস্ক পরতে হবে। তুমি প্রাকটিস করো। আমি মোটেও মাস্ক পরে থাকতে পারি না, শ্বাস কষ্ট হয়, বমি বমি লাগে, বিমানে পুরোটা পথ একটা নয় দু দুটো মাস্ক পরে আসতে হয়েছে, কত বড় শাস্তি আমার জন্য আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। গতকাল আমার বড় মেয়ে তার ক্লাসের সহপাঠি জেসির সাথে কথা বলছিল ফোনে, হঠাৎ
চিৎকার করে বলে উঠলো মা গুড নিউজ, এডেলএইডে একটাও করোনা নাই, তোমাকে মাস্ক অন করতে হবে না এনি মোর। হ্যাপি স্মাইল করো মা ! আমি হাসলাম ! ঠিক এমনি করেই যেন কোভিড শূন্য হয় একদিন পৃথিবী থেকে।
বড্ড একা একা লাগছে …. পুরোটা দিন আজ জানালা বিলাসে মেতে ছিলাম। প্রচুর গান শুনেছি, আর বই পড়েছি।
ইনস্টাগ্রামে ঢু মেরেছি, আমপান নিয়ে ভয় হচ্ছে
বলেই হয়ত বলা কথা বার বার ফোন করে আব্বা আম্মাকে সতর্ক করছি। ঘূর্ণিঝড়, খুব ভয়ঙ্কর। সব দিকে কেবল বিপদের ঘন্টা হাতে দাঁড়িয়ে আছে সময়।
এই হলো একাকীত্বের অভিসাপ মনে হয়। সব কিছু কেমন গুলায় ফেলছি।
আর তো মাত্র ক’টা দিন, “তারপর এক কাপ চা একটা রুটি ছুট্টি “
আমাদের কোয়ারেন্টাইনের প্রহর শেষ হবে ২৩ মে।
সবাই ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন।
দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে “বিষাদ-সিন্ধু” আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।