শাহরাস্তি – Shahrasti
বাংলার অন্যতম সুফি মুসলিম ব্যাক্তিত্ব হলেন হযরত সৈয়দ শাহরাস্তি (রঃ)। উত্তর-পূর্ব বাংলায় মুসলমানদের আন্দোলন এবং বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচারে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পূর্ব এশিয়ায় দীর্ঘ ভ্রমনের মধ্যেই তিনি এদেশে সুফিবাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করেন। তাঁকে চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সমাহিত করা হয় এবং তাঁর সম্মানে এই স্থানটির নামকরণ করা হয়। চাঁদপুরের পূর্বের নাম ছিল শাহরাস্তি। এছাড়া, এই জেলার একটি থানা, উপজেলা, ডাকঘর, এবং স্কুল তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষাঃ
শাহরাস্তির জন্ম তারিখ এবং জন্মস্থানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, জানা যায় তিনি সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহন করেন এবং পরবর্তীতে শিশুকালেই তাঁর পরিবারের সাথে ইরাকের বাগদাদে গমন করেন। হযরত শাহরাস্তি (রঃ) ইসলামিক স্টাডিজ এবং ইসলামিক থিওলোজি বিষয়ে লেখাপড়া করেন। দীর্ঘ লেখাপড়া এবং ধ্যান চর্চার পর তিনি আত্মিক শুদ্ধতা (কামালিয়াহ) অর্জন করেন।
ভারতে গমনঃ
লোককথায় আছে হযরত শাহরাস্তি (রঃ) একদল মুসলিম সাধকের সাথে ভারতে আগমন করেন। প্রত্যেক সাধকের কাছেই ছিল একমুঠো করে মাটি। তাঁদের সেখানেই স্থায়ী হতে হয়েছিল যেখানকার মাটির রং তাঁদের হাতে থাকা মাটির সাথে হুবহু মিলে গিয়েছেল। ১৩০০ সালে ভারতে আগমন করেন হযরত শাহরাস্তি (রঃ)। তাঁর হাতের মাটির রঙ কুমিল্লার মাটির রঙের সাথে মিলে যায় এবং তিনি কুমিল্লায় একটি পাহাড়ের উপর অবস্থান গ্রহন করেন। তবে এই স্থানটি সঠিক ছিল না। পরবর্তীতে যে স্থানের সাথে হযরত শাহরাস্তির কাছে থাকা মাটির রঙ হুবহু মিলে যায় সেখানে তাঁর কাছে একটি বাঘ এসেছিল এবং তিনি সেখানেই স্থায়ী হন।
জীবনের বাকি অংশে হযরত শাহরাস্তি (রঃ) ইসলাম প্রচারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর নির্দেশনায় হাজার হাজার হিন্দু এবং বৌদ্ধ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। হযরত শাহরাস্তি (রঃ) এর ভাই সৈয়দ শাহ মাহবুব এবং আরও দুজন সঙ্গী তাঁর সাথে ছিল। হযরত শাহরাস্তি (রঃ) অবিবাহিত ছিলেন তাই তাঁর ভাতিজা সৈয়দ শাহ গিয়াসউদ্দিন হযরত শাহরাস্তির উত্তরাধিকারি ছিলেন। হযরত শাহরাস্তির উত্তরাধিকারিরা এখনও তাঁর দরগার পাশে বাস করেন। চাঁদপুরে হযরত শাহরাস্তির দরগার রয়েছে ব্যাপক খ্যাতি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন এই দরগায়।
হযরত সৈয়দ শাহরাস্তি (রঃ) এর মাজার এবং মসজিদ
কিভাবে যাবেন
কিভাবে পৌঁছাবেন: চাঁদপুর জেলা
পানি যোগে
রেল পথে
কোথায় থাকবেন
চাঁদপুরে থাকার জন্য ছোট হোটেল থাকলেও সেগুলো মোটেও মানসম্মত নয়। আপনার সুবিধার্থে এই জেলায় থাকার জন্য কিছু হোটেল সম্পর্কে তথ্য নিম্নে প্রদান করা হলঃ
১। ভাই ভাই আবাসিক হোটেল;
ঠিকানাঃ তালতলী বাসস্টেশন, চাঁদপুর;
২। হোটেল সকিনা
ঠিকানাঃ নতুন বাজার, চাঁদপুর;
৩। হোটেল অতিথি
ঠিকানাঃ ম্যাটারনিটি রোড, চাঁদপুর;
কি করবেন
১। ছবি তুলতে পারেন।
২। স্থানীয়দের কাছ থেকে হযরত শাহরাস্তির জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন।
Courtesy: http://offroadbangladesh.com
অবস্থান
শাহরাস্তি উপজেলার উত্তরে চাঁদপুর জেলার কচুয়া ও কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলা অবস্থিত। এছাড়া দক্ষিণে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার চাটখিল ও রামগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ পূর্বকোন বেগমগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কুমিল্লা জেলার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে হাজীগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।
প্রশাসনিক এলাকা
উপজেলাটিতে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। একমাত্র পৌরসভাটি হচ্ছে শাহরাস্তি পৌরসভা। ইউনিয়ন পরিষদগুলো হচ্ছেঃ
- পশ্চিম চিতোষী
- পূর্ব চিতোষী
- উত্তর মেহের
- দক্ষিণ মেহের
- উত্তর রয়শ্রী
- দক্ষিণ রয়শ্রী
- উত্তর সূচিপাড়া
- দক্ষিণ সূচিপাড়া
- টামটা উত্তর
- টামটা দক্ষিণ
ইতিহাস
১৯৮৩ সালে তৎকালীন আই,জি মোঃ হোসাইন আহাম্মদ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ ছাত্তারের প্রচেষ্টায় হাজীগঞ্জ থানা/উপজেলা পূর্ব অংশ নিয়ে শাহরাস্তি উপজেলার যাত্রা শুরু হয়। ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে সৃষ্টি এ উপজেলা বাংলাদেশে আগত ৩৬০ জন আওলিয়ার মধ্যে হযরত শাহরাস্তি (রহ.) এর মাজার অবস্থিত। এতে উক্ত উপজেলার সাধারণ মানুষ এ উপজেলার নাম হযরত শাহরাস্তির (রহ.) নামানুসারে করার সমর্থন দেন। সেই থেকে এটি শাহরাস্তি উপজেলার নামকরণ করা হয়।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,০৩,৯৫২ জন। যার মধ্যে পুরুষ – ৯৮,৮৩০ জন এবং মহিলা- ১,০৫,১১২ জন।
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- ডঃ ছাত্তার সাহেব
- রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম)
- মোঃ হোসাইন আহাম্মদ (ex আই,জি, পি )
বিবিধ
এ উপজেলার আয়তন ১৫৪.৩১ বর্গ কি. মি। নির্বাচনী এলাকা হলো ২৬৪, চাঁদপুর -৫। মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১০টি, হাট বাজার ২৯টি, ব্যাংক১৩টি
দর্শনীয় স্থান
- শাহিরাস্তি (রহ.) মাজার শরীফ
- শ্রী শ্রী মেহার কালিবাড়ী
- খিলা বাজার ব্রীজ
- চিকটিয়া ব্রীজ
- নোয়াগাঁও ঐতিহাসিক বড় বাড়ি জামে মসজিদ
- ডাকাতিয়া নদী।