প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন কষ্ট থাকে। তবে আমার কষ্ট একটু ভিন্ন। আমার জীবন সব সময় অম্লান বেদনায় ভরপুর। আর জীবনে সব সময় কষ্ট থেকে যাবে।এ কষ্টের আর শেষ হবে না। কষ্ট সব সময় আমার পিছু হাটবে।
প্রিয়জন হারানোর কত বেদনা, দুঃখ, কান্না, বেদনার তা এখন আমি বুঝি। প্রিয়জন হারালে মনে হয় পৃথিবীর সব কিছু হারিয়েছি। প্রিয়জনের মধ্যে সবচেয়ে কাছের মানুষ হচ্ছে মা। প্রিয় মাকে যদি কেউ হারায় তাহলে মনে হয় পৃথিবীর সব কিছু হারালো। সে যদি তার মাকে খুব ভালবাসে। মায়ের কাছ থেকে আমরা সব পেয়েছি। পৃথিবীর এমন কোন জিনিস নেই যে, আমরা তাঁর কাছ থেকে পাইনি।
এবার একটু আমার কথা বলি। আমি আমার বাবাকে ১বছর ৪ মাসের সময় হারিয়েছি। আরো পাই নেই দাদা দাদির আদর। বাবা ও পায় নেই মা বাবার আদর। বাবা ছোট কালেই বাবা মা ২ জন কে হারিয়েছিলেন। আমি কি করে আর পাবো দাদা দাদির আদর। বাবা কে মনে হয় দেখিনি। বাবা কী জিনিস তা বুঝতে পারিনি। আমার মুখের সবকিছু উচ্চারিত হলেও বাবা নামটি উচ্চারিত হয় না। কারণ ছোটবেলা থেকেই বাবা নামটি উচ্চারিত হয়নি। একটা শিশুর জন্মের পর ৮ থেকে ৯ মাসের সময় আধো আধো বুলিতে দাদা, বাবা, মা উচ্চারিত হয়। কিন্তু আমার সেটাও সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমি আমার মায়ের কাছ থেকে সবকিছু পেয়েছি।
শিশুকালে দেখি বাবা-মা শিশুর মেধা বিকাশের জন্য ভাল খাবার ও আনন্দের জন্য খেলনা কিনে দিতো। আর আমার খেলনা তো দূরের কথা মুখে ঠিকমত বার্লি, আটা, সুজি খাওয়াতেও পারত না। বাবা বিদেশে ছিলেন বাবা বিদেশ থাকার সময় অত্যাচারী পরিবার আমার মাকে কাজের লোকের মত ব্যবহার করতেন। বাবা বিদেশ থাকার সময় তার স্বর্ণের ২ টা দাঁত ছিলো। আমি হওয়ার পর বাবা দেশে আসেন। আমার বাবার টাকা সম্পদের কাগজ পত্র ছিলো ঐ অত্যাচারী পরিবারের কাছে। দেশে এসে বাবা মৃত্যুর বরন করেন। বাবা রেখে যাওয়া ব্যাংকে অনেক অনেক টাকা ছিল আমার মায়ের নামে, সেই টাকাও তারা তুলে নিয়ে যায়, আমার মাকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা ওই সময় খুব অসহায় ছিলাম কারন আমার মায়ের কাছে বাবার কিছু ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাকে আর আমার মা কে সেই পরিবারে অত্যাচার করার কারনে আমার মা আমাকে নানান বাড়িতে চলে যায়। আমার বাবা জীবিত থাকার সময় আমার জন্য পতিদিন দুধ কিনে আনতেন আমাকে খাওয়ানোর জন্য।কিন্ত কপাল খারাপ বাবা মরে যাওয়ার পর আমার জন্য আর তা কিনা হয় নাই।
আমাদেরকে অত্যাচার করার একটা কারন ছিল আমার বাবা রেখে যাওয়া সম্পখাওয়ার জন্য। আমার মা সেই পরিবারের অত্যাচার সইতে না পেরে আমাকে নিয়ে নানার বাড়িতে চলে যায়। ২০ বছর কাটিয়েছে। খাবারও ঠিকমত জুটতো না। এ বিষয়গুলো দেখলে বোঝা যায় আমার জীবন কত কষ্ট আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল।
মা শত কষ্টের মাঝে সবকিছু আগলে রেখে দুঃসময় পাড়ি দিতে লাগলেন। কষ্টের কষাঘাত দেখতে দেখতে অনেকটা বছর চলে গেল। কষ্টের মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করলাম। আমি বড় হয়ার পর আমার বাবার ভাড়িতে আসতে চাইলে ঐ অত্যাচারী পরিবারের লোক জন এর কারনে আসতে পারিনেই। এর পর গ্রামের ভালো লোক জনদের পরামর্শ নিয়ে আল্লাহ্ এর হুকুমে লোক জনদের সাহায্য অনেক কষ্টে বাবার বাড়িতে আসলাম। এরপর ভাল একটা সময় আসতে লাগল। যে সময় মা একটু শান্তি পাবে। আমি লেখাপড়ার জন্য দূরে থাকতাম। আমি তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি। তখন মা দিনে ৩ থেকে ৪ বার ফোন দিতো এবং বলতো বাবা তুমি কি করো? তুমি ভাত খেয়েছ, তোমার শরীর ভাল আছে? বাড়িতে গেলে যে খাবার আমার পছন্দের ছিল সে খাবারগুলোর আয়োজন করত।
বাড়ি গেলে সব সময় হাসি খুশিতে রাখত। রাতে তার কাছে ঘুমাতাম এবং সারারাত পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতো। মানুষকে উপকার করার জন্য নানা উপদেশ দিত। সবকিছু বিবেচনা করে দিনগুলো ভালভাবে চলছিল। হঠাৎ করে ঐ অত্যাচারী পরিবার এবং অন্য লোকদের কে আমার পিছনে লাগিয়ে আমাকে আমার মা কে ২ বছরের মধ্য ৬ টা মিথ্যা মামলা দিয়ে দিল, যেনো আমি আমার বাবা বাড়িতে না থাকতে পারি। ভালো লেখা পড়া না করতে পারি। আজকে যদি আমার বাবা থাকতেন আমাকে, আমার মা কে এত অত্যাচার করার সাহস হত না। যাদের বাবা নেই তাদের কষ্ট বুঝবে শুধু পিৃতহীনেরা। যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা প্রতি মুহূর্তে বাবা থাকার অনুভূতি নিয়ে সময়টা উপভোগ করে। বাবার জন্য সময় দাও, কথা বল, আদর কর, যত্ন নাও সুসন্তানের মতো সব দায়িত্ব পালন কর। প্রতি মুহূর্তে তটস্থ থেকো কখন না বাবা হারিয়ে যান। আমার বাবা তো হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছেন কিছু না বলেই। হে আল্লাহ!আমার বাবা যেমন আমাকে ছোটবেলায় আদরে যত্নে লালন-পালন করেছেন তেমনি তুমি তাকে আদরে যত্নে ভালো রেখো। নাই বা পেলাম কোনো দিন আর তার ছোঁয়া, শাসন, স্নেহ বা আদর।