প্রতিবার এসএসসি কিংবা এইচএসসির রেজাল্ট বের হয়, আর আমার মনটা খারাপ হয় নতুন কোনো আত্মহত্যার খবর শোনার আতঙ্কে।
এবারো যথারীতি ৬ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর শুনলাম।
রেজাল্ট শুনে বাবা-মা কিংবা পাড়া- প্রতিবেশী কি বলবে – এ শঙ্কায় একটা ছোট বাচ্চা নিজেকে, নিজের জীবনকে কতটা তুচ্ছ মনে করছে যে বেল্ট কিংবা ওড়না গলায় পেঁচিয়ে নিজের অমিত সম্ভাবনাময় জীবনকে ব্যর্থ ভেবে, নিজেকে পরাজিত ভেবে চিরতরে নি:শেষ করে দিচ্ছে!
অথচ তাদের জীবনের এটা তো কেবল শুরু।
পাশের বাসার জামান সাহেবের ছেলে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে,
কাজেই আমার ছেলেও জিপিএ ফাইভ না পেলে মুখ দেখাবো কি করে!
ওমুক কলিগের (তাও আবার জুনিয়র!) মেয়ে এতো ভালো রেজাল্ট করে অথচ আমার মেয়ে তার চাইতে একটু কম ভালো করলে আমার সন্মান থাকে কিভাবে!
আর খোঁচা দেবার জন্যে কিছু ‘বিশেষ’ প্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজন তো যেনো ওঁৎ পেতে বসে থাকেন।
আপনাকে/আমাকে ছোটো করার এ সুযোগ কেই বা হাতছাড়া করতে চায়!
‘আল্লা, ভাবী, আপনার ছেলে জিপিএ ফাইভ পায়নি? কি বলেন, এতো খারাপ রেজাল্ট করলো কিভাবে!?’
‘ভাই, আপনার ছেলে তো ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না মনে হয়।’
‘আপা, দরকার হলে এক বছর লস দিয়ে পরেরবার পরীক্ষা দেয়ান। জিপিএ ফাইভ এর জন্যে চেষ্টা করুক।’
এতোসব কথার ভীড়ে ছেলেটা কিংবা মেয়েটার মনের কি অবস্থা সেটা দেখার মতো সময় কি আমাদের আছে?
সবার চোখে সে যেনো বাংলা সিনেমার ভিলেন!
একে তো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মুখস্থবিদ্যা, সাজেশান আর কোচিং নির্ভর,
তার ওপর রয়েছে অভিভাবকদের ‘ও পারলে তুমি পারবে না কেনো’ মানসিকতা।
বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ ফিনল্যান্ডে নাকি শিক্ষার্থীদের খুব বেশি হোমওয়ার্ক করতে হয় না, ১৬ বছর বয়সে গিয়ে মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
সুইজারল্যান্ডে নাকি প্রাথমিক পর্যায়ের পর শিশুদের দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের স্কুলে পাঠানো হয়। অঞ্চলভেদে জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ইটালীয় ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়।
বেলজিয়ামে নাকি মাধ্যমিক পর্যায়ে চার ধরনের স্কুল আছে: সাধারণ স্কুল, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক স্কুল, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও আর্ট স্কুল।
আর নেদারল্যান্ডসের শিশুরা নাকি সবচেয়ে বেশি সুখি জীবন কাটায়।
মাধ্যমিক পর্যায়ের আগে স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না। (ভাবা যায়!)
আবার জাপানের স্কুলগুলোতে শিশুদের কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাজ করতে হয়।
যেমন:
সকালের সমাবেশের সময় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করা,
শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা ক্ষেত্রে শিক্ষককে সহযোগিতা করা,
বাগানের পরিচর্যা করা,
খাবার পরিবেশন করা,
খাবারের পর পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
আর আমাদের দেশে?
আমাদের বাচ্চাগুলোর স্কুলব্যাগ কি আমরা কখনো কাঁধে নিয়ে দেখেছি?
২০৫০ এর বাংলাদেশ কেমন হবে তা নির্ভর করছে আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আর মন-মানসিকতার কতটুকু উৎকর্ষ সাধন করতে পারছি, তার ওপর।
আমরা কি পারি না আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে?