জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সূর্য সন্তান’(!) আখ্যা দিয়ে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া তাদেরকে দেশে-বিদেশে নানা পুরষ্কারের ব্যবস্থা করেছিল। তেমন আরেক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনি মোসলেহ উদ্দিনকে ধরেছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। যাকে এখনও বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশের কলকাতা ও দিল্লী মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
বিএনপির এই খারাপ সময়ে মাজেদের পর মোসলেহ উদ্দিনের ধরা পড়াও দলটির জন্যে বিব্রতকর। কারন এরা ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই তাদের কালের কথা স্মরন কে। এসব খুনিরাই একদিন তাদের কাছে ছিল কথিত ‘ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের’ (!) সূর্যসন্তান! কানা ছেলের নাম পদ্মলোচনের মতো যারা খুন করেছে তাদের তারা সোহাগে সূর্যসন্তান নাম রাখা হয়েছিল!
কারন এদের কল্যানে এক সময় বাঁশির ডাকে একেকজন নানাকিছু বনে গিয়েছিলেন! রাজনৈতিক দলও বানিয়েছেন! তাদের রাজকর্মচারীরা এখনও তাদের জন্যে কাজ করছে! কিন্তু এখন দিনে দিনে এসব কথিত সূর্য সন্তানের’ থলের বিড়াল বেরুচ্ছে!
পরিচয় গোপন করে খুনি মাজেদ কলকাতায় সেজেছিল ইংরেজির মাষ্টার! এবার জানা গেলো আরেক পলাতক খুনি কথিত সূর্য সন্তান (!) রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন হোমিও অথবা ইউনানি চিকিৎসকের পরিচয়ে লুকিয়েছিলো ভারতে! খাঁটি বাংলায় যে পেশার আরেক নাম কবিরাজ! তাও আবার মুসলমান মোসলেহ উদ্দিন সেজেছেল হিন্দু কবিরাজ! নাম নিয়েছিল ডাক্তার দত্ত। মাজেদ নাম বদলে আহমদ আলী হয়েছিল।
![](http://priyoshahrasti.com/wp-content/uploads/2020/04/94381760_160236312169350_5741419578718683136_n.jpg)
রবিবার রাত থেকে নতুন এই খুনি ধরা পড়ার কাহিনী ঘুরছে বাংলাদেশ ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের মূলধারার মিডিয়া এখন সবকিছু চটজলদি ছাপেনা। মামলার ভয় পায়। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা রিপোর্ট করার পর ভরসা পায় অনেকে।
সোমবার এ নিয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানা গেলো আসল সত্য। মোসলেহ উদ্দিনকে এখনও ভারত বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়নি। বলেছে এ ব্যাটা আসলে মোসলেহ উদ্দিন কিনা তা তারা খতিয়ে দেখছে!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আইজি দু’জনেই সোমবার বলেছেন, ব্যাটাকে আমরা এখনও হাতে পাইনি। পাবো মনে হয়। চানক্য কূটনীতির দেশ ভারত আবার এসব মাল-সামান ভালো দরকষাকষির পর হস্তান্তর অথবা বিক্রি করে। করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ে ভারতও এখন ব্যস্ত। তাই মোসলেহ উদ্দিনের হস্তান্তর নিয়ে সময় লাগতে পারে। মাজেদের মতো ভারত গিয়ে আনা হবে কিনা সে সিদ্ধান্তও এখনও হয়নি। পলাতক এই খুনি কিন্তু ছোটখাটো খুনি নয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনার। বাড়িতে গোলাগুলি শুনে কী ঘটছে জানতে লুঙ্গি গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই বেরিয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারন তিনিতো সরল সব সময় বিশ্বাস করতেন তাকে কোন বাঙালি খুন করতে পারেনা!
তখনই তাকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছিল এই খুনি মোসলেহ উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের সাক্ষীরা তাদের সাক্ষ্যতে এ তথ্যগুলো প্রকাশ করেছেন। এরপরও বাঙালি এখনও সরল গান গায়, যদি রাত পোহলে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই!
আর এই যে মোসলেহ উদ্দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মেরেছে এই খুশিতে জিয়া তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে চাকরি দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার আভাস পেয়ে মোসলেহ উদ্দিনও দেশ ছেড়ে পালায়। থাইল্যান্ড হয়ে সে যায় পাকিস্তানে। জার্মানিতেও গিয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার ওই এলাকায় থিতু হয়। কিন্তু তার ছদ্মবেশ এতোটাই নিখুঁত হয়েছিল যে এতদিন কেউ তার হদিস বের করতে পারেনি। কথিত সূর্য সন্তান যে হিন্দু ডাক্তার দত্ত সেজে এতোদিন ঘরের কাছেই ছিল তাকে চিনে খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে তারই সতীর্থ।
রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন যে এভাবে ধরা পড়লো গোমর ফাঁকের দোষও খুনি মাজেদের! কারন মাজেদকে ধরার সঙ্গে সঙ্গে ভারত তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়নি। দুধকলা খাইয়ে আদর যত্ম করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
মূলত সেই জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে মাজেদ বলে দেয় মোসলেহ উদ্দিনের কথা! মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে মাজেদের যোগাযোগ ছিল। খুনি খুনি ভাই ভাই। মাজেদ হয়তো এমনও ভেবেছে সে যখন ধরা পড়েছে তখন মোসলেহ উদ্দিন বাঁচবে কেনো। আর চোরের মনে পুলিশ পুলিশ মাজেদ ধরা পড়ার খবরে আত্মগোপন করে মোসলেহ উদ্দিন ওরফে ডাক্তার দত্ত!
আত্মগোপনের আগে সে নিজের মৃত্যুর গুজব ছড়ায়! করোনার সময় এখন আবার এমন মৃত্যর গুজব ছড়ানোও সহজ। কিন্তু এরপরও তার শেষরক্ষা হয়নি। ভারতীয়রা তাকে ধরে ফেলেছে। এখনও তাকে অবশ্য বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপুর এলাকার একটা বাড়িতে ভাড়া থাকতো বঙ্গবন্ধুর এই খুনি। তার কবিরাজি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ইউনানি ফার্মেসী। গাইঘাটার ঠাকুরনগর রেল স্টেশনের কাছে ছিল সেই ফার্মেসী।
নিখোঁজ হবার আগে সেই রেল স্টেশনেই অজ্ঞাত কয়েকজনের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে। সাধারনের কাছে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিরাই মূলত ভারতীয় গোয়েন্দা। যারা তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছে। খুনি মাজেদকেও একইভাবে এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি চার গোয়েন্দা ধরে নিয়ে আসে। এরপর বাংলাদেশে আনার পর ফাঁসিতে সে তার জায়গামতো চলে গেছে।
খুনি মোসলেহ উদ্দিনের পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রইলো বাকি চার। এদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায়, এ এম রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায় পালিয়ে আছে। খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হকের অবস্থান সম্পর্কে এখনও কোন নিশ্চিত তথ্য নেই। এই আব্দুর রশিদকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধীদলের উপনেতা বানান খালেদা জিয়া।
![](http://priyoshahrasti.com/wp-content/uploads/2019/05/bari-1-e1524533344268.jpg)