গত দু’দিনে বাংলাদেশ আবার আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনামে উঠে এসেছে। কারন করোনা ব্যাধির সংক্রমন ঘটেছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে। এই ভাগ্যহীন দেশহারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশের অনেকের বিরক্তি ক্ষোভের শেষ নেই।
কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো প্রত্যেক ক্রিয়ারইতো সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার কারনে বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক ফোকাল পয়েন্টও সৃষ্টি হয়েছে।
এই মূহুর্তের বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের শিবিরে মহামারী রোগটির সংক্রমনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিপোর্ট তা আবার আমাদের মনে করিয়ে দিলো।
শরণার্থী শিবিরে কাজ করা জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন শরণার্থীদের মধ্যে যাতে রোগটির সংক্রমন না হয় সে ব্যাপারে সীমিত লোকবল নিয়ে তারা সতর্ক ছিলেন।
এরপরও রোগটি কিভাবে সেখানে ঢুকে পড়লো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমার ধারনা জাতিসংঘ মিশন তদন্তটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই করতে পারবে। বিদেশে এই রোগটির পিছনে পিছনে কাজ করছেন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
যেমন বৃদ্ধ নিবাসে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারাতো সেই বৃদ্ধনিবাস থেকে বাইরে আসেননি। বৃদ্ধনিবাসে যারা কাজ করেন, খাবার-ঔষধ-লন্ড্রি সামগ্রী সরবরাহকারী এমন কোন একটি মাধ্যমে সেটি সেই বয়স্ক লোকদের শরীরে সংক্রমিত হয়েছে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের করোনা সংক্রমন নিয়ে যথাযথ তদন্ত হলেও জানা যাবে আমরা কী করে তাকে হারিয়েছি। বিদেশী রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষার নানাপথ-উপকরনও দ্রুত পৌঁছে দেবেন বলে আমার বিশ্বাস আছে।
কারন বিশাল এই শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি একটি ভালোবাসা আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। বাংলাদেশের মতো দেশ এতো বিশাল সংখ্যার শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে! তাদের ত্রান সহ নানাকিছু নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই!
বাংলাদেশের সিভিল এবং সামরিক প্রশাসনের এই দক্ষতা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কাছে প্রশংসিত এক ব্যক্তিত্ব। মহামারীর থাবা থেকে তাদের রক্ষায়ও বাংলাদেশ সফল হবে।
কারন শরণার্থীরা এখন সেখানে কড়া সরকারি নজরদারির মধ্যে আছেন। তাদের মাধ্যমে সংক্রমন রোধের কাজটিও পরিকল্পনামাফিক করা যাবে। যেটা বাংলাদেশের টোলারবাগ, শিবচর ছাড়া আর কোথাও করা যায়নি।
এরমাঝে রোহিঙ্গাদের জন্যে সেখানে গড়া হয়েছে মোটামুটি বড়সড় আলাদা আইসোলেশন কেন্দ্র এবং আলাদা ফিল্ড হাসপাতাল। আমার বিশ্বাস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আমাদের দেশী-বিদেশি চিকিৎসা সামর্থ্য নিয়ে শিবিরের করোনা বিতাড়নের কাজটিও সফলভাবে হবে।
এই করোনায় এর আগে গার্মেন্টস শ্রমিক ইস্যুতে বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রিপোর্ট হয়েছিল। বিদেশি অর্ডার ধরে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেবার পর।
ফেরীর বোঝাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছবিসহ তখন রিপোর্ট ছেপেছিল বিলাতের ডেইলি মেইল সহ আরও কিছু পত্রিকা। এমন অবস্থায় পোশাক কারখানা খুলে দেবার ঝুঁকি থাকলেও এর খুব বেশি বিরোধিতা হয়নি।
কারন এই মহামারী কবে দূর হবে তা কেউ নিশ্চিত জানেনা। আর বাংলাদেশের অন্যসব শ্রম সেক্টরের তুলনায় গার্মেন্টস কারখানার ভিতরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পুরনো একটি নিয়মিত ব্যবস্থা চালু আছে।
গার্মেন্টস শ্রমিকরা জীবিকা রক্ষার তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন। জীবিকা রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশের আরও অনেক লোক বেরিয়ে গেছেন তারা ত্রান নির্ভর জীবন চাননা।
কিন্তু বাংলাদেশে যারা মহামারীর মধ্যে ঈদ শপিং’এ বেরোন তাদের নিয়ে কোন উত্তর কারও কাছে নেই। একজন বললেন, এখন তার কিছু সুতির জামা দরকার। তাই বেরিয়েছেন!
ছোট বাচ্চাদের কোলে নিয়ে এই লোভী লোকজন বাজারে-দোকানে ভিড় করে ঢুকছেন! শপিং করছেন! এতোদিন অনেকে জানতেন লোকজন অন্তত তাদের বাচ্চাদের ভালোবাসেন। তাদের সুরক্ষা চান।
কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে বাংলাদেশের সনাতন সে ধারনাও এখন ভুল। এ সমাজ ভেতর থেকে ধারনার চেয়ে বেশি বদলে গেছে। লোকজন সারাক্ষন অমুকের দোষ অমুকের দোষ খুঁজে বেড়ায়!
আয়নায় নিজের চেহারা দেখেনা! বাংলাদেশের বেশিরভাগ মার্কেটের ভিতরের দোকানের সামনের পথ এতোটাই সরু যে সেগুলোয় কোনভাবেই নিরাপদ স্বাস্থ্য সম্মত বিধি মেনে চলা সম্ভব নয়।
অনেক ক্ষেত্রে দোকানী আইন মানলেও তা মানছেননা ক্রেতা! টাঙ্গাইল শহরের কিছু দোকান বন্ধ করা হয়েছে দেখে বেপরোয়া লোকজন ঈদ শপিং’এ ছুটে গেছেন কালিহাতিতে!
অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন, ফিলিপাইনের মতো দেখামাত্র গুলির নির্দেশ ছাড়া বাংলাদেশের এসব অপরিণামদর্শী লোকজনকে ঘরে ঢোকানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে যে আদেশ দেয়াও কঠিন।
কারন বিচার বর্হির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে এখানে শক্তিশালী জনমত রয়েছে। দেশের এসব বেপরোয়া লোকজন সম্পর্কে ধারনা থাকায় বাংলাদেশের সরকার শুরুতে বুদ্ধি অথবা চালাকি করে লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করেনি।
যে সব দেশ লকডাউন দিয়েছিল সেগুলোয় তিন মাস এক জেলার লোক আরেক জেলায় যেতে পারেনি। শুধু মার্কেট-রেষ্টুরেন্ট নয় মসজিদ-গির্জা সবও তালাবদ্ধ তিন মাস! আগামী জুলাইর পর অস্ট্রেলিয়ার সবকিছু খুলবে।
যে দেশে ধর্ম চলে যাবার গুজবে করোনার মধ্যে মিছিল করে সংখ্যালঘুর বাড়ি সম্পদে হামলা হয় সে দেশ মসজিদ বন্ধের কথা মুখে আনতে পারেনি। বাংলাদেশে আবার বিশেষ সেই এলাকাগুলোতে ধর্ম বারবার বিপন্ন হচ্ছে সে এলাকাগুলোর মানুষ বেশি দরিদ্র!
তিন মাস বাংলাদেশ বন্ধ রাখলে কী অবস্থা দাঁড়াতো ভাবতে পারেন? কারন এদেশের মানুষ হেঁটে ঢাকা রওয়ানা হয়! বড় রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখলে গ্রামের ভিতর দিয়ে হাঁটে!
বাংলাদেশের এখনও অবাক সাফল্য হলো জনবহুল দেশটায় এখানে সবকিছু ভিড়ের সঙ্গে চললেও সংক্রমন ও মৃত্যুহার উন্নত দেশগুলোর মতো নয়। এখনও এই দেশটাকে সহজে বড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
প্রতিটি পরিবারের কর্তা যদি যার যার পরিবারকে নিয়ন্ত্রন করেন তাহলে অনেক সংকট নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। যে ঢাকা এখন করোনার হটস্পট, আপনার এখন গ্রামের বাড়িতে থাকা সম্ভব হলে আপনি আপাতত ঢাকায় মরতে কেনো যাবেন।
আপনি যদি এখন হটস্পট ঢাকায় থাকেন তাহলে, আপনি আপনার বাবা-মা’কে যদি সত্যি সত্যি ভালোবাসেন তাহলে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ঈদে বাড়ি যাবেন না প্লিজ। কেউ যাতে মনে না করেন এই ঈদই আপনার জীবনের শেষ ঈদ।
প্লিজ, এখন আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে দশবার ভাবুন। কারন এটি কোন স্বাভাবিক সময় নয়। এখন মহামারীতে মৃত্যু ঝুঁকির সময়। আপনিও দেশের সম্পদ। আপনাকে আমরা হারাতে চাইনা। প্লিজ।