খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে আবার রিপোর্ট এসেছে মিডিয়ায়। বিএনপি নেতারা এর নিন্দা করে বলেছেন প্রশ্নই ওঠেনা। এটি সরকারের দুরভিষন্ধিমূলক প্রচারনা। দেশের এ অবস্থায় তাঁর বিদেশ যাবার প্রশ্নই ওঠেনা।
আবার এই বক্তব্যের সঙ্গে যুক্ত আছে আরেকটি লাইন। তাহলো তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়া দরকার। তিনি চিকিৎসা বিদেশে করান। দু’বছর বিদেশে তাঁর ডাক্তার দেখাতে পারেননি। ইত্যাদি।
তাঁর এই বিদেশ যাবার খবরটিও এবার মিডিয়ায় আসে বিএনপি বিটের রিপোর্টারদের মাধ্যমে। মিডিয়ায় সাংবাদিকদের যারা যে যে বিটের নিউজ করেন তাদের সংশ্লিষ্ট বিটের সর্বশেষ আপডেটের খবর রাখেন বা রাখতে হয়।
এবারে তেমন একটি খবরের মধ্যে নতুন খবরটি ছিল বিদেশ যাবার প্রস্তুতি হিসাবে খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা ফাতেমার ব্রিটিশ ভিসা করানো হয়েছে। এই গৃহপরিচারিকার ওপর খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরশীল।
এবার তাঁর জেলে যাবার পর নজিরবিহীনভাবে ফাতেমাকে তাঁর সঙ্গে থাকতে দেবার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। সরকার নজিরবহীনভাবে অনুমতিটাও দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে গণভবনের এক প্রেস ব্রিফিঙে এ নিয়ে কিছুটাও মজাও করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মজা করে হাতের ইশারা দেখিয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজনে মেকাপের লোকজনও দেয়া হবে। খালেদা জিয়ার সাজগোজের খবর সবাই জানেন।
বিনা অপরাধে কারাবাসের নতুন এক দৃষ্টান্তের নাম ফাতেমা জ্ঞাতসারে ফাতেমা হলেন দেশের ইতিহাসের সেই ব্যক্তি অথবা একজন গৃহপরিচারিকা অথবা একজন ব্যক্তিগত কর্মচারী যিনি এভাবে বিনা অপরাধে নজিরবিহীনভাবে কারাগারে থাকলেন।
এই ইতিহাসটা খালেদা জিয়ার এবং বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে যুক্তও থাকলো। তাহলো, খালেদা জিয়া জেলে থাকার সময় তাঁর ফাইফরমাশের জন্যে তাঁর প্রিয় গৃহপরিচারিকা ফাতেমাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
সাধারনত এমনিতে জেলখানায় প্রভাবশালীদের সেবা’র জন্যে বন্দীদের কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়। ফাতেমার ক্ষেত্রে ভালো অথবা মন্দ যে দৃষ্টান্তটি থাকলো তাহলো আগামীতে এই নজির উল্লেখ করে কারাগারে যে কোন ব্যক্তি এমন সুযোগ চাইতে পারেন।
এবার খালেদা জিয়ার বিদেশ যাবার প্রস্তুতি হিসাবে গৃহপরিচারিকা ফাতেমার ব্রিটিশ ভিসা সংগ্রহের তথ্যটি সঠিক হয়ে থাকলে এরসঙ্গে আরও যে তথ্য জানা হয়ে যায় তাহলো বিএনপির চেয়ারপার্সনের পাসপোর্ট এবং ব্রিটিশ ভিসার মেয়াদ ঠিক আছে।
কারন যে কোন দেশে যে কারও যেতে চাইলে আগে বাধ্যতামূলক এ দুটি বিষয় মজুদ থাকতে হয়। আর বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পাসপোর্টে মাল্টিপল মার্কিন ও ব্রিটিশ ভিসা থাকে।
এটিকে এক ধরনের স্ট্যাটাস হিসাবেও দেখা হয়। তবে বিএনপি যে বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বললো এটি আসলে কী? দল হিসাবে বিএনপির চলতি নাজুক অবস্থার প্রেক্ষিতে এ বিষয়টিকে মানবিক বিবেচনাতেও দেখা যেতে পারে।
কারন বিএনপি যে মাপের দল সেখানে যে দল বরাবর আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ঘোষনা ছিল সে ব্যর্থতা কবুল করে সরকারের মত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিতে হয়েছে।
এর আগে খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ যে নানাকিছুতে একদিনের দেরি দেখলে বিএনপি আকুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেছে এর মধ্যে যদি ম্যাডামের কিছু ঘটে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে।
এ নিয়ে নজিরবহীন বিশৃংখলার সৃষ্টি করা হয়েছিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগের বিচারকদের একাধিকবার এজলাস ছেড়ে চলে যেতেও হয়েছে। বিএনপির আইনজীবীরা অবশ্য বলেছেন এটা কোন নজিবিহীন ঘটনা নয়।
আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা এর আগে আপিল বিভাগের দরজায় লাথিও মেরেছে। উচ্চ আদালতের মর্যাদা নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীরা যার যার সুবিধামতো কথা বলেন! আবার অন্য সময় এদেরই কথার সুর পাল্টায়!
বার্ধক্য ছাড়াও খালেদা জিয়ার মূল দুটি শারীরিক সমস্যা আর্থাইটিজ তথা গেঁটে বাতের। তাঁর সমস্যা ডায়াবেটকসের। এ দুটি এখন পর্যন্ত অনিরাময়যোগ্য, নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টার চিকিৎসার রোগ।
খালেদা জিয়া বাড়ি যাবার পর শুধু মন ভালো থাকায় নতুন উন্নত চিকিৎসা ছাড়াই ভালো আছেন। আবার খালেদা জিয়া তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষের উদারতা অথবা অনুকম্পায় শর্ত সাপেক্ষ ছয় মাসের জন্যে মুক্তি পেয়েছেন।
কিন্তু শর্ত অনুসারে ছয় মাস পূর্তির আগে তাঁকে সরকারের সঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনায় মেয়াদ বাড়াতে হবে অথবা আবার জেলে হবে। এখানে সরকার বা বিএনপি কেউ কোন রামকৃষ্ণ মিশন বা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম বা সেবা সংস্থা নয়।
রাজনৈতিক দরকষাকষিতে যে যার মতো করে জয় অথবা হার দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। এ জগতে কেউ হারতে চায় না। এ ক্ষেত্রে ১/১১’র সময় খালেদা জিয়ার একটি ঘটনা এই প্রজন্মের সঙ্গে শেয়ার করি।
সেই সময় যে কোন সময় খালেদা জিয়া সৌদি আরব চলে যাচ্ছেন এমন একটি খবর চাউর হয়েছিল। কারন ওই সময় বিএনপির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র পাকিস্তানের নেওয়াজ শরীফও নির্বাসনে সৌদি আরবে ছিলেন।
খালেদা জিয়ারও যে কোন মূহুর্তে সৌদি আরব যাত্রার খবর তখন সাংবাদিকরা দিনেরাতে বিমান বন্দরে অবস্থান করছিলেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন তখনও ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়িতে থাকতেন।
তখন ঢাকার সৌদি রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে মিডিয়াকে বলেন খালেদা জিয়া যদি স্বেচ্ছায় সৌদি আরবে যেতে চান তাহলেই শুধু তাঁকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে।
রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্যের মাধ্যমে ধারনা পাওয়া গেলো খালেদা জিয়াকে সৌদি আরবে পাঠাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সৌদি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়েও যোগাযোগ করেনি।
আর খালেদা জিয়াতো এমন কেউ নন তাকে বিমানে তুলে দিলাম আর বলে দিলাম যাও যেখানে খুশি চলে যাও। তখন যেন দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দুই ব্যক্তি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন এবং মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুল মতিন!
প্রতিদিন তারা অমুককে চন্দ্রে পাঠানতো অমুককে মঙ্গলগ্রহে পাঠান আর কী! তখন জানা গেলো আরেক সংকট। তাহলো খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে রাজি কিন্তু একটি শর্ত দিয়েছেন!
প্রচারিত শর্তটি এ রকম, তাহলো তিনি কোন রেগুলার ফ্লাইট বা যাত্রীবাহী বিমানে যাবেননা। তাকে চার্টার্ডড ফ্লাইট দিতে হবে। তখন অপেক্ষা যে কোন সময়ে দুবাই থেকে একটি ভাড়া করা বিমান আসবে!
সেই ভাড়া করা বিমানে উড়াল দেবেন খালেদা জিয়া! কিন্তু জট বাধলো আরেক জায়গায়। তাহলো এই ভাড়া করা ফ্লাইটের ভাড়া কে পরিশোধ করবে? খালেদা জিয়া না তত্ত্বাবধায়ক সরকার?
এবং এ ধরনের ভাড়া করা বিমানের ভাড়া আগেভাগে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু কেউ এই ভাড়ার দায় নিতে রাজি হলেননা। খালেদা জিয়ার পক্ষে বলা হলো তিনিতো আর সখ করে যাচ্ছেননা যে ভাড়া শোধ করবেন।
অতএব ‘নয় মন ঘি জোগাড়ও হলোনা রাধাও নাচলোনা’। আর বলা হলো বিএনপি নেত্রী দেশকে ভালোবাসেন। মরতে হয় এখানেই মরবেন। কিন্তু দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেননা।
এবারও সরকার রাজি হলে খালেদা জিয়া হয়তো চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যেতে পারেন। কিন্তু এর উদ্যোগটি আসতে হবে বিএনপি অথবা খালেদা জিয়ার পক্ষে। কারন তিনি একজন দন্ডিত ব্যক্তি।