দেশে আমার রিপোর্টিং বিটগুলোর একটি ছিল জাতীয় পার্টি। এরজন্য এ দলটির সদর-অন্দর খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এ দলটির মহা দুই নাম্বার স্রষ্টা এরশাদের সঙ্গে আমার পেশা জীবনের আরও একটা গুরুত্বপূর্ন সংযোগ আছে। তাহলো আমাদের প্রজন্ম সাংবাদিকতায় এসেছি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে। আমরা মিছিলে যেতাম। আবার মিছিল মিটিং থেকে ফিরে এসে লিখতামও। কাজেই আমাদের প্রজন্মের লেখক-কবি-সাংবাদিক-রাজনৈতিক নেতাকর্মী-সাংস্কৃতিক কর্মী-সংগঠকরা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের একেকটি এনসাইক্লোপিডিয়া। তাই এরশাদ কোন প্রজাতির ফেরেস্তা তা নিয়ে আমাদের প্রজন্মকে অন্তত জ্ঞান দেবার চেষ্টা না করলেও চলবে। দূর্নীতিবাজ এরশাদ টাকার জোরে অনেকদিন বেঁচেছেন। কারন সর্দি-কাশিতেও ইনি চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুর যেতেন। আবার শহীদ নূর হোসেন সহ অনেকের খুনি এরশাদকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সিএমএইচে সরকারি খরচে শুশ্রুষা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়েছে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। কারন এটি বাংলাদেশের রুগ্ন রাজনীতির নিয়তি। বিএনপির সঙ্গে যেহেতু জামায়াত রয়েছে সেহেতু সাবেক এই স্বৈরশাসককে রাজনৈতিক সেল্টার দিয়েছে-নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এরশাদের মৃত্যুর পর টেলিভিশনে দেখছিলাম আমার কিছু সাবেক সহকর্মী প্রায় কেঁদে দিচ্ছিলেন! একটা আপাদমস্তক অসৎ লোক মসজিদ বানালে তাকে সমর্থন করতে হবে? এরশাদ নাকি ছিলেন মহান সংস্কারক! উপজেলা-জেলা প্রশাসন কী এরশাদের সৎ উদ্দেশের প্রশাসনিক সংস্কার? তাহলে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক কেনো? তখনকার আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো তার অধীনে নির্বাচনে রাজি হচ্ছিলোনা। তখন তাদের জব্দ করতে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজস্ব দলগঠনের ধান্ধাবাজ লোকজন সংগ্রহের জন্যে এরশাদ ওই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এরপরও প্রথম চেষ্টায় তিনি ওই নির্বাচন করতে পারেননি। তখন আমি লিখেছিলাম, ‘উপজেলা উপজ্বালা নতুন বিলাপ, সারাদেশে খ্যাতি পায় রাজার প্রলাপ।/ বিরোধীরা শক্ত হয়ে দেয় হুঙ্কার, তোমাকে ফেরাবোই ব্যারাকে আবার।/লোলুপ বাঘের মতো রাজা ক্ষেপে যায়, মানুষ মারতে থাকে থাবায় থাবায়।/ ট্রাক চাপা দিয়ে মারে ছাত্র-শ্রমিক, বেশুমার মারতে থাকে জনতা প্রেমিক।/ দেশজুড়ে শুরু হবে গৃহযুদ্ধ, টের পেয়ে রাজা কাঁদে বাঁচাও বুদ্ধ।/ মরন কাছাকাছি পেয়ে গন্ধ, উপজেলা নির্বাচন করে বন্ধ।‘
দ্বিতীয় চেষ্টায় সেই নির্বাচন এরশাদ করে ফেলতে পারলেও এই ফাঁকা মাঠের সুযোগে যারা উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেন তাদের সিংহভাগের সঙ্গে আমার বাংলাদেশ ভ্রমনের সময় সামনাসামনি দেখা হয়েছে। এদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাসদের দলত্যাগী ধান্ধাবাজ অথবা স্থানীয় রাজাকারের বাচ্চা। এদের নিয়েই এরশাদ পরে ধাপে ধাপে গঠন করেন জাতীয় পার্টি। এরশাদের পরও বিএনপি-আওয়ামী লীগ উপজেলা-জেলা পরিষদ কন্টিনিউ করেছে কেনো? এর পিছনেও সংস্কার চিন্তা বা কোন মহান রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিলোনা। এসব দলের যাদেরকে এরা সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী করেনা-করবেনা তাদের টোপ দেখানো অথবা ডাম্পিং গ্রাউন্ড ছিল উপজেলা-জেলা প্রশাসন। এখনতো এমপিদের দাপটে ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার উপজেলা-জেলা পরিষদ প্রশাসন। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন বাদে কখনো প্রশাসনিক সংস্কার হয়না।
অনেকে বলতে পারেন তাহলে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দলটি এতোদিন ধরে টিকে আছে কী করে? এর উত্তর হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক অসততা এরজন্যে দায়ী। স্বৈরাচারী এরশাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর তিনটি রাজনৈতিক জোট এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বৈরাচারের কোন দোসরকে তারা কোথাও কোন রাজনৈতিক ছাড় বা স্থান দেবেনা। এই প্রতিশ্রুতি প্রথম ভঙ্গ করে বিএনপি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মনোনয়ন নিতে এরশাদের দুই আমলা সহযোগী এম কে আনোয়ার, কেরামত আলী ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার সড়কের বাড়িতে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তাদের দেখা না দেয়ায় তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে জিতে এরা মন্ত্রীও হয়ে যান। সেনানিবাসের বাড়িতে বন্দী অবস্থায় তার নির্বাচন করা নিয়ে বিশেষ একটি সহানুভূতির সৃষ্টি হয় রংপুর এলাকায়। আর সিলেটের কিছু এলাকায় তখন এরশাদের দলের ভোট পাবার কারন নারী নেতৃত্ব বিরোধী পুরুষতন্ত্রের মন। এখন আর এরশাদের দলের ভোটব্যাংক কোথাও অটুট নেই। কিন্তু জোট রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই এরশাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
১৯৯১-১৬ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ এরশাদের দলকে সঙ্গে নেয়। ১৯৯৬ ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার শেয়ার দেয় জাতীয় পার্টিকে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রী হন এবং এরশাদ জামিনে মুক্তি পান। আবার মঞ্জুর মন্ত্রিত্ব নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে বিএনপির সঙ্গে এরশাদ চারদলীয় জোট গঠন করেন। এর মাশুল দিতে গিয়ে আবার জেলে যান এরশাদ। তার দলও চারদলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর আর এরশাদ কখনোই বিএনপি জোটে যাননি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ক্ষমতার শেয়ার তারা পেলেও দিনে দিনে এই দলটি প্রভাব হারিয়েছে। কারন বিএনপির মতো চিন্তায়-মননে-কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টিও একটি এন্টি আওয়ামী লীগ দল। এমন একটি দল প্রো আওয়ামী লীগ আবহাওয়ায় থেকে এটা সেটা সুবিধা ভিক্ষা পেয়েছে ঠিক, কিন্তু হারিয়েছে এর রাজনৈতিক প্রভাব।
এবার জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক সংকট প্রসঙ্গে আসি। মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, সিপিবি এসব দল এসেছে সময়ের রাজনৈতিক প্রয়োজনে এবং সুনির্দিষ্ট নীতি আদর্শের ভিত্তিতে। কিন্তু বিএনপি-জাতীয় পার্টি এই দুই দল এসেছে ক্ষমতা দখলকারী দুই সামরিক জেনারেলের ক্ষমতার রাজনৈতিক বর্ম দিতে। এসব দলে যারা এসেছেন এদের সবাই ব্যক্তিগত স্বার্থ-ধান্ধা থেকে এসেছেন। একটা ঘটনা বলি। এরশাদ রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ শুরু করলে আওয়ামী লীগের পনের দলের পাশাপাশি বিএনপি সাতদলীয় জোটের ব্যানারে তাকে প্রতিরোধের আন্দোলন শুরু করে। কাজ জাফর তখন ইউপিপি দলের হয়ে তখন ফেনীর এক জনসভায় বললেন, আপনি এরশাদ সামরিক জেনারেল হয়ে রাজনীতির এই করবেন সেই করবেন বলছেন, তা আমরা রাজনীতিকরা কী বাদাম খাবো? কাজী জাফর এরপর বেশি সময় বাদাম খেতে সময় নষ্ট করেননি। টুপ করে খালেদা জিয়ার জোট ছেড়ে এরশাদের দলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হয়ে যান। এই কাজী জাফর অবশ্য একই কায়দায় জিয়ার মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চিনি কেলেংকারিতে জড়িয়ে কাজী জাফরের চিনি জাফর নামটি আর কোনদিন মুছে যায়নি।
নারী লোলুপ জেনারেল হিসাবে সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থাতেই এরশাদের দুর্নাম ছিল। জিয়া এই গুনের জন্যেই তাকে সেনাবাহিনী প্রধান করেন। জিয়া মনে করেছিলেন প্রতিভা অনুসারে এরশাদ পরনারী নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করবেননা। কিন্তু এরশাদ জিয়ার এই ধারনাকে ভুল প্রমানীত করেছেন। এরশাদ দম্পতি ২৬ বছর নিঃসন্তান ছিলেন। গোপন সেনা মেডিক্যাল রিপোর্ট ছিল এরশাদ সন্তান জন্মদানে অক্ষম। কিন্তু রাজনৈতিক দল করতে এসে এ বিষয়টি যাতে ইস্যু না হয় সে কারনে তখন হঠাৎ সিএমএইচে রওশনকে ভর্তি দেখিয়ে তাদের একটি বাচ্চার ব্যবস্থা করা হয়। এরশাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান তার লেখা ‘প্রধানমন্ত্রিত্বের নয় মাস’ গ্রন্থে লিখেছেন এই বাচ্চা এরশাদ-রওশন কারোরই নয়। সেই বাচ্চা ‘সাদ এরশাদ’ বড় হয়ে এখন রংপুরে এরশাদের শূন্য আসনে প্রার্থী। যদিও সাদ এরশাদের অন্য সব পালিত সন্তানের মতো বড় হওয়াতে এই বাচ্চাকেও এরশাদ সাধারনত রংপুর সফরেও নিতেননা। ঢাকার কোন সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও না। চলতি নির্বাচন দ্বন্দ্বের আগে গত ২০-২৫ বছরে একবার মাত্র সাদকে নিয়ে মিডিয়ায় রিপোর্ট হয়েছিল। মেয়ে ঘটিত একটি কারনে সাদকে একবার গুলশান থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সাদকে সে রাতে এরশাদ থানায় গিয়ে ছাড়িয়ে আনেন।
এবার জাপার দ্বন্দ্বে ফখরুল ইমাম রওশন গ্রুপের হয়ে মিডিয়ায় কথা বলছিলেন। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে জাতীয় পার্টির সব নেতা পালিয়ে গিয়েছিলেন। ফখরুল ইমাম ক্ষমতাচ্যুত সরকারের উপমন্ত্রী ছিলেন। পলাতক অবস্থায় দিলুরোডের একটি বাসায় গিয়ে আমি তার ইন্টারভ্যু করি। ফখরুল তখন রওশনের দুর্নীতি-ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। আমাকে ফখরুল বলেছিলেন ডাঃ মিলন হত্যাকারী অভি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রওশন। জাতীয় পার্টির রিপোর্ট গিয়ে রওশনকে সব সময় দলের নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন একজন দুর্নীতিবাজ মহিলা মনে হয়েছে। যে জনতা টাওয়ারের কারনে এরশাদ জেল খাটেন পাঁচ বছর নির্বাচন করতে পারেননি সেই দুর্নীতিরও নেপথ্যে ছিলেন রওশন। জনতা টাওয়ারের জমির দলিলে রওশনের নাম লেখা হয়েছিল রওশন আরা বেগম। আমার বরাবর মনে হয়েছে এরশাদ পরনারী নিয়ে ব্যস্ত থাকতে রওশনের মুখ বন্ধ রাখতে তাকে নানান ভাবে অর্থ-সম্পদ দিতেন। তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন রওশন। এরজন্য মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পনের বছরের বেশি সময় ধরে এরশাদ-রওশন দু’জনে থাকতেন পৃথক বাড়িতে। এরশাদ বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে। রওশন গুলশানে। জিনাতের সঙ্গে সম্পর্ক, বিদিশার সঙ্গে বিয়ে এসব নিয়েও রওশন কখনো মুখ খোলেননি। এর মাজেজাও ছিল নতুন নতুন সম্পদের টোপ। এসব কারনে এরশাদের চেয়ে রওশনের সম্পদের পরিমান বেশি। নতুন নতুন সম্পদের কারনে রওশন বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। আওয়ামী লীগ আমলে শেখ হাসিনার সঙ্গে। আদালতের নির্দেশে তখন কারোয়ানবাজারের জনতা টাওয়ার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে সেই জনতা টাওয়ার আবার তিনি নিজের কব্জায় নিয়ে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার নামে যে ক্রেজ আছে রওশনের নামে তা জাতীয় পার্টিতে নেই। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী বা রংপুর-ময়মনসিংহ কোন এলাকার দলের সঙ্গে তার কোন জনসংযোগও নেই। এবার রওশন যখন জিএম কাদেরের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করলেন তখন আমার মনে হয়েছে এর পিছনে সরকারের কোন অংশের ভূমিকা থাকতে পারে। কারন দুর্নীতি দিয়ে রওশনকে ম্যানেজ করা সম্ভব। জিএম কাদেরের ক্ষেত্রে এটা কঠিন। এক সময় জানতাম এরশাদের দেয়া মাসোহারায় জিএম কাদেরের সংসার চলে। এখন হয়তো সংসদ সদস্য হিসাবে তার একটি আয় আছে। রওশন-জিএম কাদেরের সমঝোতার প্রক্রিয়াটি জেনে হাসি পেয়েছে। মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন বিরোধীদলের নেতার পদ-পতাকা লোভী মহিলা রওশনের দরকার। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ দিয়ে তিনি কী করবেন। এ দলের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনধরনের নাড়ির টান নেই। রেডিমেইট মঞ্চ পেলে বক্তৃতা দিতে আসেন। মঞ্চের আয়োজনে খরচাপতি চাইলে তিনি সেখানে কোনদিনই যাবেননা।
এখন অনেকের প্রশ্ন জাতীয় পার্টির কী ভবিষ্যত। আমার ধারনা এরশাদের কবরটি রংপুরে হওয়াতে রংপুর অঞ্চলে আরও কিছুদিনের জন্যে দলটি টিকে গেলো। কারন ওখানেও একটি মাজার হবে। এরশাদের মাজার। জিএম কাদের চেয়ারম্যান হওয়ায় আপাতত দলটি টিকে গেলো। কিন্তু জাতীয় পার্টি এখন অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। কারন এ দল চলতো এরশাদের টাকায়। এখন সেই টাকার উৎস নেই। এ দলে লোকজন টাকা পেতে এসেছেন। টাকা দিতে নয়। রংপুর এলাকার লোকজন হয়তো আবেগে আরও কিছুদিন তোলা তুলে হলেও দল চালাবে। দেশের অন্যত্র সে সুযোগ কম। এরশাদ তার সম্পদ ট্রাস্ট করে দিয়ে গেছেন। ট্রাস্টের সঙ্গে এরিক এরশাদ নামের একটি চরিত্র জড়িত। এই সূত্রে বিদিশা এ দলে সক্রিয় হতে চাইবেন। কিন্তু রওশন গ্রুপ তাতে বাধা দেবে। কেন্দ্রীয়ভাবে জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে চলতে চাইবে। বিএনপির সঙ্গে গিয়ে তাদের লাভ নেই। একই ধারার দুটি দল একসঙ্গে চলতে গেলে জাপাকে আরও নিষ্প্রভ দেখাবে। আবার মননে এন্টি আওয়ামী লীগ ধারার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলেও এটি কেন্দ্রে ক্রমশ দূর্বল হবে। জিএম কাদেরের আরেক সংকট জাতীয় পার্টির দুর্নীতিবাজ নেতারা প্রায় সবাই রওশনের সঙ্গে। এদের অনেকে আগামিতে সুবিধামতো আওয়ামী লীগ-বিএনপিতেও চলে যেতে পারেন। আপাতত জাতীয় পার্টিকে রক্ষার কাজটিও আওয়ামী লীগকে করতে হবে। যেমন জেনারেল মাসুদ গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তাকে পাঠানো হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। দেশজুড়ে এমন আরও কিছু চরিত্র আছে।