মেলবোর্নে নতুন করোনায় ভীতসন্ত্রস্ত মুসলিম নেতারা

করোনা ভীতিতে শুধু সামাজিক পারিবারিক নয়, দেশে দেশের সম্পর্কও নতুন চেহারা নিচ্ছে! যেমন জাপান সহ কয়েকটি দেশে এখনই বাংলাদেশিদের প্রবেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। করোনার বিপদজ্জনক দেশ হয়ে ওঠার মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশ।

সবুজ পাসপোর্টকে বিভিন্ন দেশ অপমানকর ‘না’ বলছে। বাংলাদেশকে এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে করোনাকে হারাতে হবে। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এখন করোনা নিয়ে বিব্রতকর একটি অবস্থায় পড়েছে এর ভিক্টোরিয়া রাজ্য।

মেলবোর্ন এর রাজধানী। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা। তবে নানান কারনে বিভিন্ন রাজ্যের নানা রকম তকমা আছে। যেমন  সিডনিকে অস্ট্রেলিয়ার বানিজ্যিক রাজধানী বলা হয়।

কারন দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ যেমন সিডনিতে থাকেন, তেমনি ব্যবসা বানিজ্যের বেশিরভাগও সিডনি ভিত্তিক। অস্ট্রেলিয়ার আইকন স্থাপনা অপেরা হাউসের অবস্থানও সিডনিতে।

আর মেলবোর্নকে বলা হয় অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী। এক দিনে মেলবোর্নে চার রকম আবহাওয়া এমনও অনেকে সোহাগ করে বলেন। বনেদি টেনিস টূর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন সহ অনেক নামকরা ইভেন্ট হয় মেলবোর্নে।

 এই শহরে আছে প্রাচীন অস্ট্রেলিয়ার নানান স্থাপনা, ট্রাম। গোলাপী পানির পিঙ্ক লেকও এর সৌন্দর্য্যের অংশ। অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম এমসিজি মেলবোর্নে। বিশাল এই স্টেডিয়াম চলে সোলার প্যানেলের বিদ্যুতে!

কিন্তু করোনা এই মেলবোর্নের  ভিক্টোরিয়া রাজ্যকে দূঃখের তিলক দিয়েছে। ভিক্টোরিয়া হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার করোনা রাজ্য! গত সোমবার সেখানে একদিনেই নতুন ৭৫ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে!

নতুন পরীক্ষায় প্রমান মিলেছে রাজ্যের কিছু এলাকায় সামাজিক সংক্রমন ঘটেছে এই মহামারীর। তবে এটি করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ নয়। প্রথম প্রবাহের লেজের অংশ। নতুন করে করোনার সামাজিক সংক্রমন ঘটেছে ভিক্টোরিয়ায়।

 পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। নতুন করে লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে ১০ টি উপশহর এলাকায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে করা হচ্ছে ফ্রি করোনা পরীক্ষা।

এর আগে কভিড নাইন্টিন মহামারীর সংক্রমন ঠেকাতে শুধু আন্তর্জাতিক সীমান্ত নয়, রাজ্য রাজ্যের সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় বিভিন্ন রাজ্য তাদের সীমান্ত খুলে দিচ্ছে।

আগামী ১০ জুলাই থেকে সীমান্ত খুলে দিচ্ছে কুইন্সল্যান্ড। সানসাইন স্টেট নামে পরিচিত এই রাজ্যের কথা বাংলাদেশের অনেকের মনে থাকতে পারে। এক সময় এই রাজ্যেরই  গভর্নর ছিলেন স্যার নিনিয়ান স্টিফেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব-সংকটের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে কমনওয়েলথ মহাসচিবের দূত হিসাবে এই কুইন্সল্যান্ডার নিনিয়ান স্টিফেনকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল।

সেই কুইন্সল্যান্ড করোনা জয়ের পর রাজ্য সীমান্ত খুলে দিতে গিয়ে শর্ত দিয়ে বলেছে, সবাইকে স্বাগতম, শুধু ভিক্টোরিয়ান ছাড়া! বলা হয়েছে এখন যে কেউ কুইন্সল্যান্ড প্রবেশ করতে চাইলে আগে বলতে হবে ভিক্টোরিয়ায় গিয়েছেন কিনা।

ঘোষনা দিতে হবে তিনি বা তারা সাম্প্রতিক সময়ে ভিক্টোরিয়া রাজ্য ভ্রমন করেননি। অসত্য ঘোষনার প্রমান পাওয়া গেলে জরিমানা গুনতে হবে ৪ হাজার ডলার। তবে ভিক্টোরিয়ায় গেছেন এমন কেউ কুইন্সল্যান্ডে প্রবেশ করতে চাইলেও শর্ত আছে।

এই সময়ে কেউ যদি ভিক্টোরিয়া গিয়ে থাকেন তাহলে তাদেরকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোটেল কোয়ারিন্টানে থাকতে হবে। কুইন্সল্যান্ডের কাউকে এখন ভুলেও ভিক্টোরিয়া রাজ্যে না যেতে সতর্ক করেছেন প্রিমিয়ার।

 উল্লেখ্য করোনা ভীতির কারনে এখনও এর আন্তর্জাতিক সীমান্ত খুলে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ ভাড়া করা বিমানে যারা ফিরছেন তাদেরকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারিন্টানে থাকতে হয়।

 সাম্প্রতিক সময়ে এই হোটেল কোয়ারিন্টানের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে মেলবোর্ন। অর্থাৎ ভাড়া করা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো মেলবোর্ন এসে নামছে। এরপর সেখানে ১৪ দিনের হোটেল কোয়ারিন্টানে থাকার পর যাত্রীরা যার যার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন।

 এখন এমন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো মেলবোর্ন এসে নামার ভিকটিম ভিক্টোরিয়া রাজ্য কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের প্রিমিয়ার এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় ছাপা হয়েছে রাজ্যের কিছু অংশে নতুন করে করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার কারন এর মুসলমান সম্প্রদায়! অভিযোগে বলা হয়েছে, গত রোজার ঈদে কিছু মুসলমান করোনা সতর্কতা মেনে চলেনি।

সেখান থেকে সংক্রমন ছড়িয়েছে! কিন্তু ভিক্টোরিয়া মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদেল সালমান এর প্রতিবাদ করে বলেছেন প্রকাশিত খবর তথ্যভিত্তিক নয়। মুসলিম ফোবিয়া থেকেই এ ধরনের ইসলাম বিরোধী খবর ছাপা হয়েছে।

 এ ধরনের খবর মুসলমানদের আক্রমনের শিকার করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আদেল সালমান। দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে ঈদকে কেন্দ্র করে করোনার সামাজিক সংক্রমনের ঘটনা গত ১৪ জুন প্রকাশ পায়।

সেখান থেকে কমপক্ষে ১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে প্রাইমারী স্কুলের দুই ছাত্রও রয়েছে। ১০ জুন পাকনামের এক মেডিকেল সেন্টারে এক মহিলা টেস্ট করাতে আসেন।

ঈদের সতের দিন পর তিনি সেখানে পরীক্ষার জন্যে যান। ধারনা করা হয় ঈদ উদযাপনের একটি পারিবারিক সমাবেশে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তার অবশ্য এরমাঝে করোনা নেগেটিভ হয়ে গেছে।

মিডিয়ায় খবরটি আসায় রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ওই ক্লিনিকের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছে। গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকও মেডিকেল সেন্টারের তিন অভ্যর্থনাকারীর সঙ্গে আলাপের তথ্য তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

তাদের একজন গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিককে বলেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের তারা তাদের রোগীর করোনায় ঈদের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন। মুসলিম কাউন্সিলের নেতা বলেছেন, এটা সৎ সাংবাদিকতা নয়।

এমন ধারনা ভিত্তিক মিডিয়া রিপোর্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছে সিনিয়র মুসলিমদের। কারন অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা বরাবর দেশটি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বহুজাতিক সংস্কৃতির  এ দেশে এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

 ভিক্টোরিয়ায় নতুন করে করোনা ছড়ানোর পিছনে মুসলমানদের ঈদ দায়ী কিনা তা নিয়ে অবশ্য এখানকার সামাজিক প্রতিক্রিয়া নেই। রাজ্যের প্রিমিয়ারও মেলবোর্ন বিমান বন্দরে এসে নামা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোকেই ইঙ্গিত করছেন।

উল্লেখ্য জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম করোনা রোগী পাওয়ায় যায়। এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৭৬৫ জন রোগীর ৭ হাজার ৮ জনকে সুস্থ করেছে এদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। মারা গেছেন ১০৪ জন।

আড়াই কোটি মানুষের দেশে এরমাঝে প্রায় পঁচিশ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের গৌরবে বিভিন্ন রাজ্য যখন নানা কিছু খুলে দিচ্ছে সেখানে নতুন সংক্রমনে পিছিয়ে পড়েছে শুধু ভিক্টোরিয়া।