যে কারনে ছাত্রলীগের সৃষ্টি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আদর্শ লক্ষ্য নিয়ে ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছিলেন, জেলখানা থেকে বেগম মুজিবের কাছে পাঠাতেন নির্দেশনা, সে আদর্শ লক্ষ্য পরিস্থিতি এখন অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগের বিরোধীদলে থাকা অবস্থার ছাত্রলীগ আর লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা ছাত্রলীগ এক নয়। এখনকার ছাত্রলীগারদের সিংহভাগ সংগঠনটির নীতি-আদর্শ-কর্মসূচি কিছুই জানেনা। অতকিছু এখন আর জানাও লাগেনা। তাই আপনি চাইলেই এখন এই ছাত্রলীগকে ছাত্রদের জন্যে প্রয়োজনীয় একটি সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে পারবেননা। আবার ওপাশে ছাত্রদল-শিবিরের মতো একই ধরনের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনী আছে বলে এই ছাত্রলীগ আপনি বিলুপ্তও করবেননা।
তোফায়েল আহমদরা রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেনীর বগিতে ভ্রমন করে দেশজুড়ে সংগঠনের কাজ করতেন। উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের আগেই বিয়ে করেছিলেন তোফায়েল আহমদ। স্ত্রী তখন ভোলা শহরের কালীনাথ রায়ের বাজারের বাপের বাড়িতেই থাকতেন। স্ত্রীকে ঢাকায় এনে বাসা ভাড়া করে রাখার সামর্থ্য তখন তোফায়েল আহমদের ছিলোনা। ঢাকা আসেননি বলে তখনও রেলগাড়িও দেখেননি তোফায়েল পত্মী, ভোলার তালুকদার বাড়ির মেয়ে। (মিসেস তোফায়েল গল্পচ্ছলে কথাটি আমার মাকে বলেছিলেন, খালাম্মা-কোনদিন রেলগাড়ি দেখলামনা)। আর এখন ক্ষমতার ভোগবাদী সময়ের ছাত্রলীগের নেতা বেসরকারি সংস্থার হেলিকপ্টারে শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে যায়! কারন যারা কমিটির নেতা হবেন তারা তিরিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশ লাখ টাকা নগদে শুধু দেননা, হেলিকপ্টারের ভাড়াও গোনেন! এরপর এই নেতা হবার বিনিয়োগকৃত টাকা তুলতে স্থানীয় নেতারা যা করেন তাতে প্রান ওষ্ঠাগত হয় স্থানীয় লোকজনের। তারা নীরবে গোপনে অভিশাপ দেন শেখ হাসিনাকে। অথচ শেখ হাসিনা এসব জানেনওনা। স্থানীয় গোয়েন্দারা কেন্দ্র থেকে না চাইলে এসব রিপোর্টও সাধারনত পাঠায়না।
এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগের নেতা হওয়া মানে হল ছেড়ে ভাড়া ফ্ল্যাটে বিলাসবহুল বদলে যাওয়া জীবন! দামী গাড়ি-সর্বক্ষনিক চালকও লাগে! প্রায় দান-খয়রাত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেয়া! অথবা অমুক অমুকের চিকিৎসা-শিক্ষার দায়িত্ব নেয়া! সহমতভাই গ্রুপ উচ্চস্বরে বুক চাপড়ায় আর ফেসবুক ফাটায়, আহা! এমন দয়ালু মহানুভব ছাত্রলীগ নেতা ছাত্রলীগের ইতিহাসে আগে কখনোও আসেনি! কিন্তু বোকারা একবারও নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করেনা নেতার আয়-রোজগারের উৎসটা কী? একজন এমপি-জনপ্রতিনিধির নানান দুই নাম্বারি বাদেও প্রকাশ্য কিছু ভাতা-আয়ের উৎস থাকে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদেরতো কোন বৈধ রোজগার নেই। কেউ কাউকে চুরি-চাঁদাবাজি করে মসজিদ বানানোর জন্যেতো হাতেপায়ে ধরেনি। অতঃপর চেয়ার হারানোর পর সারাক্ষন জয়ধবনি করা সহমতভাই’র পাল এখন কোথায়? শুনলাম ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়-লেখকের পিছনেও ভিড় পড়ে গেছে! শোভন-রাব্বানির পিছনের সব ভিড় স্থানান্তরিত হয়ে গেছে নতুন ঠিকানায়! ভিড়ের ঠেলায় তাদের স্বাভাবিক হাঁটাচলাও যেন দায়! তাদের সাবধান করছি। কারন তাদের পদটা কিন্তু এখনও ভারপ্রাপ্ত। যে কোন মূহুর্তে ছিঁড়ে পড়ে যেতে পারে এই ভার। অন্তত পূর্বসূরীদের পরিণতি থেকে তাদের শেখার আছে।
এখনও প্রায় বইমেলায় শেখ হাসিনার বই বেরোয়। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অনেক আগে থেকেই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। আগেও তাঁর বই বেরুতো। আগামী প্রকাশনী অনেক আগে থেকেই শেখ হাসিনার বই’র প্রায় নিয়মিত প্রকাশক। কিন্তু এখন তাঁর যে সব বই বেরোয় তা মূলত তাঁর নানা বক্তৃতার সংকলন। ছাত্রলীগ নেতার মনে হলো বইমেলায় তারও একটা বই থাকা দরকার! নিজে লিখলে অন্যকথা ছিল। একজন লেখক তার নামে একটা বই লিখে প্রকাশ করলেন। সুপার ডুপার বাম্পার হিট বই! বইমেলা থেকে প্রায় টিএসসি পর্যন্ত নেতার বই কেনার লাইন! পড়ার জন্যে না। হয়তো কিনতে হবে অথবা নেতাকে খুশি করতে হবে এমন ফরমান হয়েছিল! সারাদেশের শাখা সংগঠনগুলোকেও এই বই কিনতে হয়েছে! নক্ষত্র প্রপাতের পর এখন এই কথাগুলোও আলোচনায় আসছে। ‘যে যাহা করেন তাহার একটি সুন্দর পরিণতি সকলের কাছে প্রশংসিত হয়।‘
অথচ কেউ কি কোনদিন শুনেছে শেখ হাসিনার বই কেনার জন্যে এমন লাইন পড়েছিল অথবা লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল? বহুল ‘ক্রয়কৃত’ সেই বইখানার এখন আর কোন ফলোআপ বা পুনঃপ্রকাশের খবর আছে কী? বাংলা সাহিত্যে একটা প্রবাদ বাক্য আছে, ‘বেশি বাড়তে নেই, বেশি বাড়লে ঝড়ে মাথা ভাঙ্গে। বেশি নামতে নেই, তাতে ছাগলে খায়’। ‘সহমত ভাই গ্রুপ’ লাইনে কেনা সেই বইখানা কী আর কখনো টেবিলের ওপর রাখবেন? না এরমাঝে লুকিয়ে ফেলেছেন? এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে প্রায় পত্রিকার প্রথম পাতায় তার কবিতা ছাপা হতো। ছাপতে হতো। কবিতাগুলো কারা লিখতেন তাও আমরা জানতাম। এরশাদ ক্ষমতা হারানোর পর কোনদিন কবিতা লিখেছেন এমন শোনা যায়নি। জেলখানা থেকে বিদিশাকে লেখা তার অনেক চিঠি এসেছে। কোন কবিতা আসেনি কোনদিন। অথচ প্রকৃত লেখকদের গুরুত্বপূর্ন অনেক লেখা জেলখানায় বসে লেখা। জেলখানায় হাতে থাকে অফুরন্ত সময়।
ছাত্রলীগ নেতাদেরর বয়সও তাদের অতোটা ভাবতে শেখায়নি। নইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সংগঠন এক কোটি ষাট লাখ টাকা ঈদ সেলামি পেয়েছে, আমরা কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারন সম্পাদক, আমাদের ভাগটাতো বড় হতে হবে, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছেন, এসব কী কেউ বোকার মতো বলতে ভিসির বাড়ি পর্যন্ত যায়? এখন পর্যন্ত যতোটা জানা গেছে তাতে বলা যায় দেশের প্রথম মহিলা উপাচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে বেছে নিয়েছিলেন, এটা তাঁর একটি ভুল পছন্দ ছিল। সী ইজ এ্যা করাপ্ট ওম্যান। দূর্নীতিবাজরাই দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাকে ভালো চেনেন জানেন বলে সেখানে ভিসির দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছেন শিক্ষকরাও। তাকে ওখান থেকে যেতেই হবে। অথবা বরখাস্ত করতে হবে। তাকে গদিতে রেখে আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক চালানো যাবেনা।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদকের ফোনালাপের যে অডিও ফাঁস হয়েছে এতে স্পষ্ট তিনিও শেখ হাসিনার বিশ্বাস ভঙ্গকারী। শাখা ছাত্রলীগ এক কোটি টাকা ঈদ সেলামি পেয়েছে, টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে হলে, চঞ্চল ভালো ছেলে বলে তাকে পঞ্চাশ লাখ, অমুক হলে থাকেনা বলে পঁচিশ লাখ, ফোনে রাব্বানী এসব ঠান্ডা মাথায় বিশ্লেষন করেছেন। আবার ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দাম তাকে আশ্বস্ত করে বলছেন, তিনি (রাব্বানী) যা চাইবেন তাই হবে। এই ফোনালাপ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজের হাতে পদ দেয়া ছেলেদের প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হয়ে বলেছেন, ‘মনস্টার’! প্রধানমন্ত্রীর কাছে হয়তো আরও অনেক তথ্য আছে যা আমরা জানিনা। নিজ দায়িত্বের প্রতি সৎ থাকলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকার পথে যেতেন রাব্বানী। ওই অডিও ফাঁসের পর জাবি ছাত্রলীগের চাঁদাবাজ নেতাদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল। ভিসিকেও। এটা করা হয়নি। এটাই সরকারি দলের দূর্বলতা।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও এক গ্রুপ একদিন মধুর কেন্টিনের সামনে বসেছে অথবা তাদের বসানো হয়। বোকারা ছাত্রলীগ করে অথচ শেখ হাসিনাকে জানেনা! ধমক আসার পর সেখান থেকে উঠে যেতেও দেরি করেনি। শেখ হাসিনা যখন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পর এখন যুবলীগকে ধরেছি’ শেখ হাসিনার এই বক্তব্য পেয়ে ‘তাহারা অতিদ্রুত মধুন কেন্টিন এলাকা ত্যাগ করিয়াছে’। ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরুর ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক, পরে কার্য নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দেন। প্রথমেই শোভন-রাব্বানীর কপাল পুড়ছে খবর আসে। তাদের গণভবনের পাস বাতিলের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভুল প্রমানীত হয়। তখনও আমরা কেউ কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর ঈদ সেলামি পর্ব জানিইনা।
যুবলীগের চিহ্নিত লোকজনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এ্যাকশন শুরু হলে সংগঠনটির সত্তুর বছর বয়সী চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী যেভাবে ক্ষেপে গেলেন, বিরাজনীতিকরনের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বললেন, তখন ভয়ও করেছে। কারন বাংলাদেশের অতীতের একাধিক সামরিক শাসন রাজনৈতিক সংগঠনের দূর্নীতির প্রকাশিত সূত্র ধরেই এসেছে। ঢাকায় ফোন করে খোঁজ খবর নিতে গেলে জানতে পারি অভিযান প্রশ্নে শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থান। একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন এমন একজন এখন অবস্থান করছেন লন্ডনে। তিনি আমাকে জানালেন বন্ধুরা এখন এমন একটি অভিযান চাইছে। অভিযান চলবে। তবে গত কয়েকদিনের নানাকিছু, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের ধরন থেকে আমার ধারনা হয়েছে সম্পূর্ন একটি শুদ্ধি অভিযান বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু হবেনা। শেখ হাসিনা যেন বিশেষ কিছু আটক অভিযানের মাধ্যমে অন্যদের একটি বার্তা দিতে চাইছেন! ‘সাবধান হয়ে যাও, নইলে ধরা পড়বে, কেউ রক্ষা পাবেনা।‘
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে প্রায় আমি একটা কথা লিখি তাহলো, জাতির পিতাকে হত্যার পর ছিন্নবিচ্ছিন্ন এই দলটি ক্ষমতায় ফিরে এসেছে শেখ হাসিনার পরিশ্রমী নেতৃত্বের কারনে। ২০০১ সালে যে সব নীতিনৈতিকতার ভালোমানুষির কারনে শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি সে সব বিষয়ে এখন অনেক বেশি সতর্ক। তিনি বুঝে গেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওসব নীতিনৈতিকতা-ভালোমানুষি মূল্যহীন। ক্ষমতায় থাকতে পারাটাই মূল। নীতিনৈতিকতা-ভালোমানুষি দেখাতে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় তিনি মারাই পড়ছিলেন প্রায়। এই যে এখন তিনি ধারাবাহিক ক্ষমতায় এর পিছনে এর পিছনে মূল ভূমিকাটি হলো তাঁর নিরলস ধারাবাহিক পরিশ্রমী নেতৃত্ব। ব্যক্তিগতভাবে তিনি দূর্নীতির উর্ধে। এরজন্যে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনা যে গতিতে কাজ করেন অনেক মন্ত্রী-আমলা, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা যেন সেই গতিতে করেন দূর্নীতি। শেখ হাসিনা ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। তাঁর রাজনৈতিক অনুসারীদের দশ শতাংশও যদি তাঁর মতো দূর্নীতিমুক্ত তাঁর গতিতে কাজ করতো তাহলে বাংলাদেশ এই সময়ে আরও সমৃদ্ধি অর্জন করতো।
যুবলীগের দূর্নীতি-মস্তানি সামনে আসার পর সংগঠনটির সত্তুর বছর বয়সী প্রবীন চেয়ারম্যানের দূর্নীতিযুক্ত অথর্ব চেহারাটিও সামনে চলে এসেছে। বাংলাদেশের জন্যে ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগ এসব সংগঠনের অবদান আছে। কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকলে দূর্নীতি-মস্তানি-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ছাড়া এই সংগঠনটি আর কোন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকার প্রমান কী কেউ দিতে পারবেন? সাধারনজ্ঞানে যুবলীগ গড়া হয়েছিল একটি ট্রানজিট লাউঞ্জ হিসাবে। ছাত্রলীগের ছেলেরা এক পর্যায়ে যুবলীগ করবে। সেখান থেকে যাবে আওয়ামী লীগে। কিন্তু গত চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা যোগ্যতা-অভিজ্ঞতায় ছাত্রলীগের পর যুবলীগে পদায়নের খুব অনুকূল পরিস্থিতি নেই। সে কারনে গ্রেফতারকৃত খালেদরা ফ্রিডম পার্টি থেকে এসেও যুবলীগের পদ পেয়ে যায়। যুবদলের জি কে শামীম হয় আওয়ামী যুবলীগের বোঝার নাম। গত এক দশকে শেখ হাসিনার পরিশ্রমী নেতৃত্বের ওপর দাঁড়িয়ে মতলববাজদের দাপট-লুটপাট বারবার বদনাম দিয়েছে শেখ হাসিনাকে। বিভিন্ন সময়ে আগাছানির্মূলের বক্তৃতা হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। আপনারা ছাত্রলীগ নেতৃত্বের বয়সসীমা ঠিক করেন, সে বিবাহিত হতে পারবেনা, চাকরি করতে পারবেনা, এমন সব আজগুবি সব শর্ত দেন, কিন্তু যুবলীগারদের কোন বয়সসীমা নেই? আঠার বছর বয়সে একজন যুবক হয়। সত্তুর বছর বয়সে যার অবসর জীবনযাপনের কথা সে কী করে এখনও যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদে থাকে? অল্প বয়সী ছাত্র-যুবকদের সিংহভাগ আধুনিক-বিজ্ঞানমনস্ক, কম দূর্নীতিবাজ হয়। বুড়ো নেতৃত্বের যুবলীগ যেন এখন অনেকটা নজরদারি বর্হির্ভূত ডাম্পিং স্টেশন!
যুবলীগে অভিযান শুরুর পর এর চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে সকল নৈরাজ্যে তার অংশীদারিত্ব। এর দায় দিয়ে তাকে বিদায় করতে হবে। জনগনের কাংখিত একটি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব-কর্তৃ্ত্বকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। কিন্তু তাকে এখান থেকে বিদায় করলে দেখবেন তিনি শূন্য। তিনি ওই পদ পেয়েছেন আত্মীয়কোটায়। যুবলীগের রাজনৈতিক বিকাশে তার কোন ভূমিকা নেই। উল্টো দেশেবিদেশে তার বিরুদ্ধে পদবানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। দূর্নীতির বিরুদ্ধে চলতি ভূমিকায় শেখ হাসিনা এখন দেশজুড়ে প্রশংসিত। আকন্ঠ দূর্নীতিতে নিমজ্জিত যুবলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিন। রাজনৈতিকভাবে পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের যুবলীগের নেতৃত্বে আনুন। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা-প্রশংসা আরও বাড়বে।
দেশের চলতি দূর্নীতি বিরোধী অভিযানটি অনুসরন করতে গিয়ে একটি বিষয় চোখে লাগলো। বঙ্গবন্ধুর পর তার রাজনীতিতে তার পরিবারের প্রশংসিত কোন পুরুষ চরিত্র নেই! ১৯৯৬-২০০১ আমলের আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, এই আমলের ওমর ফারুক চৌধুরীদের কোন প্রশংসা নেই। শেখ সেলিমের ভগ্নিপতিসূত্রে চট্টগ্রামের ওমর ফারুক চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারভূক্ত। ১৯৯৬-২০০১ আমলে শেখ সেলিমকে মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছিল। তাকে আর কেনো আনা হয়না তা বেশি ভালো জানেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার গোলমেলে পরিবারটি শেখ হাসিনাকে নানাভাবে শুধু বিরক্ত-বিব্রত করে। শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর। তার ছেলে আন্দালিব রহমান পার্থ শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টাকারী তারেক রহমানের শিষ্য। এই আন্দালিব পার্থ আবার শেখ হেলালের মেয়ের জামাই। শেখ সেলিমের এক পুত্রের শশুর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু। আরেক ছেলের শশুর বিশিষ্ট অস্ত্র চোরাকারবারী রাজাকার মুসা বিন শমসের। আরেক ভগ্নিপতি যুবলীগের নামে মাফিয়াদের রক্ষাকবজ ওমর ফারুক চৌধুরী। শেখ মারুফ, শেখ তাপসের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ। বঙ্গবন্ধুর নাতি, পচাত্তরের করুণ ঘটনার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা তাপস এখন দেশের সবচেয়ে খারাপ লোকজন উকিল! শেখ সেলিমের পুরো গোষ্ঠীটি এভাবে সারাক্ষন শেখ হাসিনাকে জ্বালিয়েই গেলো! এরজন্যে বুঝি একবার শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি, আমার বোন আর আমাদের ছেলেমেয়ে-নাতি-নাতনি ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের আর কোন সদস্য নেই।‘