বনবাসী মন কোথাও না পেলেও হোটেলে পেয়েছে ঠাঁই। করোনার বন্দি দশা, চারদিকে শুধু মৃত্যু বিভিষিকা। কথা বলতে, ছুঁয়ে দেখতে, গিফট পাঠাতে, আদর করতে, সবি’তেই যেন একটা মাস্কের মতো পর্দা। মানুষের কাছ থেকে মানুষ দূরে সুরে যাচ্ছে, মানুষের আদর, স্নেহ ,প্রীতি ,আবেগের ভাষা বদলে যাচ্ছে দিনকে দিন। অনিশ্চিত জীবন একটা অসুখে ভুগছি আমরা। কবে অসুখ সারবে জানি না। শুধু এই টুকু জানি তোমার আমার দূরত্ব অনেক খানি। এই ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস। সব কিছুকে কেমন করে অর্থহীন আবেগহীন করে রেখে দিলো। পৃথিবীর মানুষ, তোমারা কী নিয়ে অহংকার করবে করো দেখি ! কত বাহাদুরী তোমাদের, স্পাইক ওয়ালা একটা ড্রপের সামনে
সব কেমন থর থর করে কেঁপে অস্থির। মানুষের জীবনের শ্যাপটাই কেমন বদলে দিয়েছে। হোটেল কামড়ায় বন্দি থেকে খুব বুঝতে পারছি মনটা কেমন আকুলি-বিকুলি করছে, খুব ছোট একটা কিছুর জন্য, সাধারণ কিছু খাবারের জন্য, একটা খোলা রাস্তায় মুক্ত স্বাধীনভাবে হাঁটার জন্য! এক ঝটকা বাতাস চুলে লাগাবার জন্য। বড় বড় কিছু করতে মন চাইছে না, ছোট একটা কিছু চাইছে, মনে হচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে, বাইরে বের হতে, অতি সাধারণ খাবার গুলো খেতে। অদ্ভুত মানুষের মন, ফাইভ স্টারে থেকেও কেমন অস্থির, আনচান, কি করলে ভালো লাগবে, কি খেলে তৃপ্তি আসবে, কোথায় গেলে শান্তি পাবো ! সবকিছুতেই অতৃপ্তি। যতোই এদের শাহী খানা দিক না কেন আমার তো আর একটা দিনও যায় না। ধুর ! যত্তসব ! মনে হয় বের হয়ে গান ধরি ….
দে রে দে রে দেরে আমায় ছেড়ে দেরে দেরে …
যেমন ছাড়া বনের পাখি ,মনের আনন্দে রে ! সব সময় দেখা যায় কোন বড় বিপর্যয়ের সময় সাধারণ মানুষ কখনো কখনো অন্যের জন্য অসাধারণ হয়ে উঠে। কোয়ারেন্টাইনে থেকে অনুধাবন করলাম। গতকাল এক ভাগনি আমাদের প্রয়োজনের জিনিস গুলো খুব যত্নে পাঠিয়ে দিলো, কতটা উপকারে এসেছে এই বন্দি দশায় তা হয়ত বলে বোঝাবার নয়। আজ এক ভাবী কিছু মজার জিনিস পাঠিয়েছে, ছবি দিচ্ছি দেখলেই বুঝবেন। কথায় আছে না ভুক্তভোগীরাই কেবল বুঝতে পারে, কি যাতনা বিষে। হোটেল কোয়ারেন্টাইনে থাকলে কি কষ্ট হয়, সেটা অনুধাবন করেই হয়ত ভাবী পাঠিয়েছে জিনিস গুলো।
কিন্তু আমার কাছে আছে সবে মাত্র মনিধন একটা ক্যাটলি, সেটাই এখন একমাত্র ভরসা, বাকীটা আপনারা বুঝে নেবেন, কি থেকে কি হবে। আর আমাদের মুখের স্বাদ বদলে যাবে, আমরাও খুশি, তাহারাও খুশি। আমরা মানুষরা বহুরুপী শুনতে খারাপ লাগলেও একথাটিও মিথ্যা নয় যে, অনেকেই বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে থাকে, থাকি, আবার অনেকেই উজার করে দেই।
আমরা ভাগ্যবান ভীন শহরে আমরা একা নই
আছে মনে সাহস দেবার মতো অনেক বন্ধু। ফোনে কিংবা বাঙ্গালীর টোটকা বুদ্ধি বের করে
কত কি বুদ্ধি ধার দিয়েই যাচ্ছে। বেশ একটা থ্রিল থ্রিল ব্যপার।
চলে গেল অষ্টম দিন। আর মাত্র কটা দিন, তারপর উড়াল দেবো আকাশে। এডেলএইডে ।
দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে “বিষাদ-সিন্ধু” আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।