দেখতে দেখতে নয়টা দিন পার হলো আমাদের জানালা দরজার বন্ধ দুকামড়ার হোটেল কোয়ারাইন্টানের সংসারে ।
স্বাধীনতার স্বরূপ না জানলে পরাধীনতা কী রূপে আঘাত হানে, তা বোঝা যায় না। আমারা বতর্মান যে জীবন পার করছি সেটাকে এক অর্থে বলে ভালোবাসা আর যত্নের অত্যাচার, এছাড়া আর যে কিছু বলবার নেই, পাঁচতারা হোটেলে লাক্সারী ব্যাপার স্যাপার, বিভীন্ন ধরনের মাছ মাংসের ডিশ , স্যালাড, বেকড খাবার, ব্যাকারী আইটেম, জুস ডেইরী প্রোডাক্ট, বিভীন্ন প্রকারের চা কফি, ফল থেকে ডেজার্ড কি দেয় না ! তারপরেও মনে হয়, কত্তদিন ভাত খাই না, কত্তদিন. ঘন করে সর ভাসা চা খাই না । যতই আদরে রাখুক না কেন, তবুও তো বন্দি, যতই খাবার দিক না কেন, আমার স্বাদকে তো প্রাধান্য দেয় না, একটু লবন চড়া বা কম করে, ঝালটা একটু ঝাঝিয়ে দিয়ে, কিংবা মাছে টমেটো পিয়াজের গ্রেভিটা একটু ঠিক ঠাক মতো কোষিয়ে মুরগির ঝোল, মাখা মাখা মাছ …. আহা ! আপন দেশের রান্নার স্বাদ কি ভিন দেশি ফিউশনে মেলে ? হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, স্বাধীনতা হারানো পাখির মতো খাঁচা বন্দি থেকে, সে খাঁচা হোক না সোনার, সে শেকল হোক না রূপোর, তাতে কি, বন্দি পাখির গলা থেকে শুধু কান্নাই বের হয়, সুর নয় । অনেকেই ভাবছেন তো ! ইস আমাদের এমন সুযোগ থাকলে দিব্বি হাসতে খেলতে কাটিয়ে দিতাম । মাত্র তো ১৪ টা দিন, ভাত খাবার আর দেশী দেশী ভাব দেখানোর ন্যাকা । ঠিক ভাবছেন, তবে বলা আর দেখার মাঝখানে, যাপন মানে প্রাকটিক্যাল ব্যপারটা একটু আলাদা কিনা, যে থাকছে সেই কেবল বুঝতে পারছে, কি সাধ, কি সুখ, কি যাতনা ! আজ নবম দিনে আমাদের ১৫ মিনিটের ওয়াকআউটে নিয়ে গিয়েছিল, সামনে পিছনে কড়া নিরাপত্তা প্রহরী
তাও বাইরে ঘাসের উপরে হাঁটতে নয়, সুমিংপুলের বারান্দায় । সেটাতেও সীমানা বেষ্টনি দেয়া আছে । ক’পা ফেলবো ক’পা ফেলবো না তারও মেলা হিসাব ।
ঐ সময় বাধা, মাত্র ১৫ মিনিট । আকাশে আজ চনমনে রোদ, বন্ধ ঘরে থেকে থেকে, সূর্য মামাকে দেখতেই চোখ যেন ঝলসে যাচ্ছিলো, ঠিক মতো চোখ মেলে দেখাই হলো না, অমনি বল্লো চলো তোমাদের টাইমস আউট । আবার সেই বন্দি কারাগারে । এতো এতো খাবারের কথা বলেছি দেখে ভাবার অবকাশ নাই, যে বিনা খাবারে কাতরাচ্ছি, বা সুখ বিলাস । কোনটাই নাই, সময় কে হজম করছি মাত্র । আর স্মৃতি বয়ে নিয়ে যাচ্ছি । একটা জায়েন্ট উইন্ডো’র গল্প লিখবো আসছে দিনে । এমন তো আর চিরকাল থাকবে না । পৃথিবীতে করোনার মতো মহামারী আকারে আরো অন্য রোগও এসেছিল, এমনি করে অনেক মানুষ মরেও গেছে, হাহাকার, অন্ধকার, অসহায়ত্বের দিন তবুও তো শেষ হয়েছে একদিন । করোনার শেষ আছে … পৃথিবী আবার শান্ত হবে ।
দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে “বিষাদ-সিন্ধু” আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।