সুখবরের স্বাদই আলাদা। আজ আমাদের করোনা টেষ্টের রেজাল্ট দিয়েছে . আমরা নেগেটিভ । দেশে যাওয়ার পর ১৪ দিন বেশ ভালো ভাবেই কেটে গিয়েছিল আমাদের, তারপর শুরু হয়েছিল ভাইরাল জ্বর । আমার ছোট মেয়েটা কোন রকমে কাটিয়ে উঠলেও বড় মেয়েটা একেবারে জ্বরে ধুকেছে খুব । সে সময়ে যেহেতু আমরা বিদেশ থেকে গিয়েছি যদিও কোয়ারেন্টাইন টাইম পিরিয়ড পার করেছিলাম, তবুও অনেকেই বাসার আতংকিত ছিল, করোনা টেস্ট করো হ্যান ত্যান, ভয় পাচ্ছিলো তারা, বেবীটাকে আইসোলেশনে থাকার কথা বলাতে বেবীটা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়, যদিও সে আস্তে আস্তে সেরে উঠেছে । ওর বাবা একজন চিকিৎসক হওয়ার পরেও আমি বার বার ওকে প্রেসার দিচ্ছিলাম সবাই বলছে প্লিজ বেবীটাকে টেষ্ট করাতে নিয়ে যাও । ওর বাবার এক কথা না আমি নিয়ে যাব না, ওর করোনা উপসর্গ না, নরমাল জ্বর । ওয়েদার চেন্জ হয়েছে, পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সময় লাগবে । আমি চুপ থাকি, রায়াকে সব সময় মাস্ক পরতে বলি । মেয়েটা আমার খুব আতংকিত হয়ে রাতে জেগে উঠে, জিজ্ঞেস করে মা আমার কি করোনা হয়েছে, আমি কি টেষ্টেড ? আমি মুখে হাত দিয়ে বলতাম বালাই সাঁট । না মা, তোমার কিছু হয়নি, তুমি ভালো হয়ে যাবে ….. ও ভালো হয়ে গেল, তারপর ঢাকা ছেড়ে আমরা গ্রামে গেলাম, সেখানে স্টাক হয়ে প্রায় দেড়মাস কাটিয়ে চলে এলাম এখানে । আমরা আসার আগে একটা স্পেশাল প্লেন ল্যান্ড করেছিল এখানে । এবং আমার একজন বড় আপুর কাছে সব শুনতাম কেমন করে হোটেল কোয়ারেন্টইনে আছে, কি খাচ্ছে . কি করছে, সব কিছু ডিটেইলে, তারপর আমার মেয়েদের কে কাউন্সিলিং করা শুরু করলাম আমরা দুজনেই । ওরা খুব ভালো ভাবে বুঝলো । অবশেষে সেকেন্ড স্পেশাল ট্রিপে আমরা আসলাম । এবং আজকে ষষ্ঠদিন অতিবাহিত হলো । তিন দিন হলো আমাদের নমুনা সংগ্রহ করেছিল, আজ রেজাল্ট দিয়েছে আমরা করোনা নেগেটিভ । আমার চিন্তা ছিল ওদের বাবাকে নিয়ে । কারণে কারণেই ওকে ঢাকায় বাইরে বের হতেই হয়েছিল, বের না হয়ে উপায় ছিল না আসলে ।
রেজাল্টের খবর যখন ফোনে দিলো … মেয়েটা আমাকে বলে মা দেখছো বাবা বলছিল আমার মেয়ের করোনা না, বাবা রাইট ছিল মা, নয়ত যদি আমি টেষ্ট সেন্টারে যেতাম । নিউজ করে দিতো এই বেবীটা বিদেশ থেকে করোনা আনছে, আর মানুষ ফেইক কথাই বিলিভ করতো । থ্যাংক গড বাবা আমাকে টেস্ট সেন্টারে নিয়ে যায় নি । ওর কথা শুনেই বুকটা ফুলে উঠলো, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আর দোয়া করলাম, আল্লাহ সবার পরিবারকে নিরাপদ রাখো মাবুদ ।
দিনটা কেটেছে দিনের নিয়মে । আমিও আজ প্রচুর কাজ গুছিয়েছি একটার পর একটা কাজ গুছিয়ে রাখলাম .. কখন কোনটা করবো ।
আজ মেয়েরা ভালো ছিল নতুন খেলনা পেয়ে ।
পড়াশুনা করতে বল্লেই বলে মা হলিডেতে আছি, পড়া বন্ধ। সমাজে ধনী,গরিব,সুখী,অসুখী; বিভিন্ন ধাঁচের মানুষের বসবাস। ব্যাপক অর্থে সুখ হল একটি পরিবারের জন্য আনন্দদায়ক একটি অবস্থা, মানুষের মঙ্গলময় জীবন বলতে আমি বুঝি সেই জীবন যে জীবন যুক্তি দ্বারা পরিচালিত এবং প্রেম দ্বারা উদ্ভাসিত । মানুষের প্রেমময়তা বা ভালোবাসা দিয়ে মানুষ সব কিছু জয় করতে পারে ।প্রকৃতি আজ বিরুপ কেন বলতে পারেন । খুব অত্যাচার করা হয়েছে যে । নিজ অস্তিত্ব রক্ষায় নিজকে ভালোবাসা আর নিজের চারিপাশের প্রয়োজনীয় উপাদানকে ভালোবাসা ই প্রকৃতির শিক্ষা । আমরা কি সবসময় এমনটা ভেবে কাজ করি, মোটেও করি না, করোনা কালে শুধু আপন অস্তিত্বের আপন নিরাপদ নিয়ে যতটা বিচলিত হয়ে অন্যদের মনে নাজানি
কতটা রুড হই। করোনা সংকটে কত অমানবিকতাই আমরা দেখছি মানুষের মাঝে । আবার কতটাই না মানবিকতা মহানুভবতা দেখছি মানুষেরই মাঝে । মন্দ আর ভালো ভেদ করবার কাল এখন, করোনা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে । সজাগ হই, সৎ সঙ্গে বাস করি অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করি ।
বিপদ আর সময়ের অসহায়ত্ব কার কখন আসে বলা যায় না, আমরা সতর্ক হই, সময় কে সাক্ষি রেখে ভালো কাজ করি, একদিন সময় ঠিক ঠিক তার প্রতিদান দেবেই দেবে ।
বিপদে ভৎসনা, কটুকথা এবং অমানবিক আচরণ না করি । দিন আর রাত প্রকৃতির এই খেলা থেকে শিখে নেই, আজ যা আছি কাল নাও থাকতে পারি, আজ যা আছে কাল নাও থাকতে পারে । পরিবারের যত্ন নিন, সম্পর্কের যত্ন নিন । মৃত্যু অনিশ্চিত । কেউ জানি আজ আছি কাল থাকবো কিনা, কিন্তু এটা জানি কর্মফলের আলো মানুষকে পথ দেখায় ।
আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন ।
সবাই নিরাপদ থাকুন সুস্থ থাকুন ।
…… চলবে
দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে “বিষাদ-সিন্ধু” আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।