কবি কবিতা লিখেন পাঠকের কিছু ভাল লাগার আস্বাদ দিতে । নিজস্ব ভাবনাকে ,অন্য এক বোধের জগতে সংবাহিত করতে । সবটা হয়ত দেখে বা শুনে হয় না । কিছুটা রাখতে হয় স্পর্শ বা ঘ্রানে বা চেতনার জন্যও । তাই কবিতার শল্য চিকিৎসা করে সবটুকুকে হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে আসা যেন এক আকাশ কুসুম দাবি । আলোচনার স্বল্প পরিধি আলোক বৃত্তের মধ্যে ধরা পড়ে কবিতার সামান্য কয়েক ছিন্ন সত্তা, বেশীটাই থেকে যায় অধরা , অনালোকিত । তবে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে , কবিতা আসলে কেমন হলে ভাল কবিতা বলা যায় । দুর্বোধ্যতাই কি ভাল কবিতার জন্মতিলক ? না ছন্দোময়তা ? নাকি বিশেষ কোন ফর্মে বেঁধে ফেললেই আরো একটু উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে যায় কবিতা ? হয়তো বা পরাবাস্তবতার ধূসর কুয়াশায় মোডা় অক্ষর গুচ্ছই হয়ে উঠে সার্থক কবিতার অঙ্গরাগ। আবেগের তো বড়সড় একটা ভূমিকা রয়েছেই কবিতার ঘরবাড়ি রচনায় । কিন্তু সেই আবেগই বা কেমন হওয়া সমীচিন ? একেবারে মনসিজ আকরিক ? নাকি সংহত , সুস্থিত , শীলিত। তর্ক গুলো চলতেই থাকবে । জানা নেই এর শেষ কোথায় । তেমনি জানা নেই , কোন কবিতা কেন ভাল লাগে এবং তা সার্বজনীন হয় কেন । সমালোচনা , ব্যাখ্যা , বিশ্লেষণের তুল্যমূল্য বিচার , সবকিছু্কে ছাপিয়ে তাই অন্তিমে জেগে থাকে কবিতার উত্তরণের একটাই অনিবার্য দাবি- কবিতা হয়ে ওঠা । কবির একান্ত কথোপকথনে পাঠকও সমপরিমান অংশীদার হয়ে পড়েন । তাই প্রত্যেক পাঠকের কাছে কবিতার ভিন্ন ভিন্ন পাঠ তৈরী হয় ।
ও ঘুঘু, ও ফাঁদ…
ঘুঘুটা হঠাৎ উড়ে এসে কানে কানে বলে, ‘লেখালিখি ধুয়ে-মুছে ফেলো…’
হতচ্ছাড়া পাখি! সে কিনা বলছে কৌতুকে,
ফেসবুকে নাকি বাজে কথা লিখি!
আমি চাই সে এসে দেখুক—
ক্রমাবনতির শব্দ পড়ে নিক সে,
জানুক, সোনার নূপুর কেন বেঁধেছে পায়ে,
জেনে যাক, কত তৃষ্ণা নিয়ে
দুচোখ লেহন করছে নীল…
কেন লিখি অন্ধকার কচুবনে
মেঘ করে আসলে,
জানে কিছু ছন্নছাড়া পাখিটা?
যাকে অতিরিক্ত মনে করি,
সে তো লাটিমের মত ঘোরে এখানে;
কবি পুরুষের মতো খোঁজে অর্থ শব্দে-শ্লেষে-গালবাদ্যে…
ওরে… ও হতচ্ছাড়া পাখি, আমি কি আর এমনি এমনি লিখি?
সে চায় দেখতে অমন করে :
পানাপুকুরে ভেজা গা,
বুকের পেটিকা,
ঠোঁটের কৌণিক হাসি…
জানলি তো, কেন হাসি, কেন গাই, কেন আঁকি, কেন লিখি?
ফেসবুক আমার বাক্স-পুটলি নিয়ে মাঝরাতের চেপে বসা ট্রেন,
আমার বাউল ব্যাগের ভালোবাসা…
আর বলবি, কেন লিখি?
ঘুরে দেখি—পাখি নেই, শব্দ নেই!
একটা থমথমে বাতাস
আমার কাঁধের চুলগুলোকে দোল দিচ্ছে…
দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে “বিষাদ-সিন্ধু” আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।