আমাদের বর্তমান সমাজ, অবক্ষয়ের শেষ পর্যায়ের তলানির সমাজ। আশেপাশে এমন একজন মানুষ নেই – যাঁকে আমরা অনুসরণ করতে পারি। যার কাছ থেকে পেতে পারি মানুষের উদাহরণ, শিখতে পারি মানবতা – হতে পারি মানুষের মতো মানুষ।
আমাদের সময় যাঁরা দু একজন ছিলেন তারা কেউ ই এখন গ্রামে থাকেন না। নিজেরাই নিজেদেরকে সরিয়ে রেখেছেন গ্রামের অনাচার থেকে।
ছোট বড় সবাই কেমন জানি অস্থির, ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে – নিজের, নিজের লোকদের স্বার্থ নিয়ে। অন্যের জন্যে ভাববার কোথায় কারো সময় নেই। ন্যায়, অন্যায় এর বালাই নেই। স্বার্থের জন্যে ধর্ম, ক্ষমতা, শক্তি ব্যবহার করতে কারো কোনো দ্বিধা, নৈতিকতা বা মনো কষ্ট নেই।
যে সমাজ আজ ভালোবাসার মানুষকে খুন আর খুনিকে অন্ধ আবেগে সমর্থন করে। সে সমাজ অশিক্ষিত ও অসভ্য সমাজের ই প্রতিফলন।
নিরপেক্ষ হলো সত্য কে সত্য, মিথ্যা কে মিথ্যা বলা – সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলা। দুইটাকে সমর্থন করা নিরপেক্ষতা নয়।
নিজেকে সৎ, ভালো রাখার পিছনে বন্ধুরদের ভূমিকা সব চাইতে বেশি। তারাই প্রকৃত বন্ধু যারা আমার ভালো কাজে সমর্থন করে, খারাপ কাজে বাধা দেয় – খারাপ কাজ করে ফেললে আমাকে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ করে দেয়।
যারা আমার খারাপ কাজে সমর্থন দেয়, ধরা পড়লে আমার অন্যায় কে সমর্থন করে – তারা কখনোই আমার ভালো বন্ধু নয়। তাদের সাহসেই আমি আরো খারাপ হবো – ভালো হবার সুযোগ হারাবো। ভালো হতে চাইলেও হতে পারবো না।
জীবনের কোনো কাজই ছোট নয়। কাজ কখনো ছোট হয় না। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখার উপায় নেই। সেই প্রধান মন্ত্রী থেকে – পরিছন্ন কর্মী , যে ধরণের কাজই হউক না কেন!
নিজের কাজে নিজের তৃপ্তি না থাকলে – নিজের কাজের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা না থাকলে – নিজেকে কখনোই সৎ কর্মী বলা যায় না। সে ঝাড়ু দেয়ার কাজই হউক বা চেয়ারম্যানের কাজই হউক।
কোনো এক সময় আমি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেছি – বছর খানেক কাজ করেছি এবং সেই কাজটিকে আমি আজও সম্মানের সাথে স্মরণ করি। আমার প্রায় প্রতিটা ওয়ার্কশপে আমি গর্ব করে বলি। কাজ করেছি, চুরি বা মিথ্যা কিছু করিনি – লজ্জা হবে কেন?
সামাজিক অবক্ষয় এখন এবং এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে – আমরা এখন আর আমাদের নিজের কাজের পদবীর উপর আস্থা রাখতে পারি না – অসত্যের উপর ভর দিয়ে জীবনের সত্যের উপর দাঁড়াতে চাই। যা কখনো সুফল বয়ে আনবে না।
কিছুদিন আগে দেখেছি – এক প্রতারক চোরকে – অনেকেই সমর্থন দিচ্ছে! বলছে – ফেইসবুক এ পোস্ট দেয়ার কি আছে? কত টাকাই আর!
এক টাকা চুরি করলে যা – কোঠি টাকা চুরি করলেও তা। অপরাধ অপরাধই।
আমার এক পরিচিত ঢাকা উনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করা। বছর সাতেক বিদেশে ছিলেন অবৈধ হিসাবে এবং সেই দেশে বৈধ হতে না পেরে শেষে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সাত বছরে তিনি ট্যাক্সি চালিয়েছে বছর চারেক শেষের দিকে একটা ফাস্টফুডের দোকানের দায়িত্বে ছিলেন। কিছুদিন পর তার সাথে আমার দেখা ঢাকাতে – বিজনেস কার্ড দিলেন ওখানে লেখা তিনি ডঃ ডিগ্রি করেছেন সেই বিশেষ দেশ থেকে। মূলত ওখানে লেখা পড়া করার তার কোনো পারমিশনই ছিল না । কার্ড হাতে নিয়ে আমি নিজেই লজ্জিত বোধ করছিলাম। মিথ্যা দিয়ে নিজেকে বড় করে তোলা যায় না।
নীতি, নৈতিকতা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে – মিথ্যা আর অন্ধকার গ্রাস করছে আমাদের সমাজকে।
এই সব অনাচার কে – না বলতে হবে আমাদের। তরুণ মনের মানুষদের।
হাসপাতালের একজন একাউন্টেন্ট যদি রিসিপ্সনিস্ট এর কাজে যোগ দেয় – সে কিন্তু রিসিপ্সনিস্ট, পদবি রিসিপ্সনিস্ট – একাউন্টেন্ট নয়। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ যদি তাকে একাউন্টেন্ট হতে দেয় তবেই সে ওই পদবি ব্যবহার করতে পারবে। অন্যথায় কোনো ভাবেই নয়। সময় সময়ে রিসিপ্সনিস্ট, একাউন্টেন্ট এর কাজ করতেই পারে। যদি তার সে যোগ্যতা থাকে।
কোনো কাজ লজ্জার হতে পারে না। কোনো পদও লজ্জার নয়।
আমি একজন গর্বিত লাইব্রেরিয়ান হয়ে ইংরেজী পড়াতেই পারি – এটা আমার যোগ্যতা – গর্বের, অর্জন। এই জন্যে আমাকে আমার অসত্য পদবি “ইংরেজি লেকচারার” লিখে – নিজে নিজেকে অসম্মান করার মধ্যে কোনো গৌরব নেই – মিথ্যা আর গ্লানি ছাড়া।
কবি, কথা সাহিত্যিক, মানবতাবাদী, সমাজকর্মী ও আইটি বিশেষজ্ঞ