তোর পিতামহের পিতামত বা তারও পিতামহ
আর আমার পিতামহের পিতামহ বা তারও পিতামহ
একই মায়ের সন্তান, বড় হয়েছেন একই মায়ের দুগ্ধ পান করে;
হে একই কৃষ্টির একই গোত্রের একই বর্ণের, একই ধর্মের তাঁরা;
অথচ আজ, এই তুই আমাকে বলিস
“তোর দেশে তুই যা – এই দেশ তোর না”
তোকেই বলছি – কান খুলে শোন – আমার কিছু যায় আসে না
তোর দেশে তুই গিয়ে খেজুর কি আঙ্গুর ফলাবি!
তোকে, তোর পশুটাকে বলি, “তোর দেশে তুই যা – এই দেশ তোর না”
তোর দেশে – আমি থাকবো কেন?
আমার ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে জিম্মি করে
দিনের পর দিন, তোর পশু বৃত্তির লালসা মিটালি তুই!
ধর্ম, সমাজ, সমাজের পশুরা চেয়ে চেয়ে দেখলো আমাকে
শুধু দেখে গেলো, টু শব্দটি হলো না কোথাও – কোথাও না!
তোকেই বলছি – কান খুলে শোন – আমার কিছু যায় আসে না
তোর দেশে তুই গিয়ে কোন ফসলের জমিতে, তুই কি ফলাবি!
তোকে, তোর পশুটাকে বলি, “তোর দেশে তুই যা – এই দেশ তোর না”
তোর দেশে – আমি থাকবো কেন?
তোর পিতাকে, পিতার ভাই বোনদের আমি দিয়েছি হাতে খড়ি!
দুর্ভাগা, তোরও হাতে খড়িটাও হয়েছে এই আমাকে দিয়েই!
এই আমার হাতেই, হাতে খড়ি তোর ছেলে মেয়ে, বাকি সব আত্মীয় স্বজন;
আজ তোর শকুনে চোঁখ পড়েছে এই বৃদ্ধ, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকের
শেষ সম্বল ভিটে মাটির ওপর – অবশেষে গ্রাম ছাড়া হতে হলো আমায়!
ধর্ম, সমাজ, সমাজপতি পশুরা চেয়ে চেয়ে দেখলো তোকে
শুধু দেখে গেলো, টু শব্দটি হলো না কোথাও – কোথাও না!
তোকেই বলছি – কান খুলে শোন – আমার কিছু যায় আসে না
তোর দেশে তুই গিয়ে কাকে করবি উচ্ছেদ অথবা শিরোচ্ছেদ!
তোকে, তোর পশুটাকে বলি, “তোর দেশে তুই যা – এই দেশ তোর না”
তোর দেশে – আমি থাকবো কেন?
তুই আমাকেই বাধলি গাছের সাথে, অথচ এই উদরেই হতে পারতো
তোর জায়গা, বেড়ে উঠার জায়গা এই আঁচলে, বেড়ে উঠা আমার দুগ্ধ পানে;
কুলাঙ্গার, তুই তোর মাকে তুই বেঁধে রাখলি – সামান্য একটু জমি দখল নিতে
অথচ তুই আমারই সন্তান – তুইই হতে পারতি আমার হৃদয়ের দখলদার!
ধর্ম, গ্রাম, সমাজ, সমাজপতি পশুরা চেয়ে চেয়ে দেখলো তোকে
শুধু দেখে গেলো, টু শব্দটি হলো না কোথাও – কোথাও না!
তোকেই বলছি – কান খুলে শোন – আমার কিছু যায় আসে না
তোর দেশে তুই গিয়ে তোর মাকে উপাস্য, কি বলী দিবি!
তোকে, তোর পশুটাকে বলি, “তোর দেশে তুই যা – এই দেশ তোর না”
তোর দেশে – আমি থাকবো কেন?
তোর দেশে কেন থাকবো আমি!
আমার মেয়েকে আমার চোখের সামনে গণ ধর্ষণ করিস ধর্মের নাম দিয়ে
আমার চোঁখের সামনে, আমার ভিটায়, আমার মাতৃভূমিতে এসে;
আমারই জমিতে পড়ে থাকে আমারই মেয়ের ধর্ষিত ক্ষতবিক্ষত লাশ
পদ্ম পুকুরে ভেসে উঠে আমারই সহধর্মিনী – আমারই কত আদরের ভগ্নি
হে, এরাই তোর পরম আত্মীয় – তোর রক্ত – রক্তের বন্ধন, অতি আপনজন তোর;
শিকড় ভুলে গেলি কুলাঙ্গার!
তোকেই বলছি – কান খুলে শোন –
আমার চেয়ে আপন, কেউ নেই এই দুনিয়ায় তোর
তোর দেশে শুধু তুই-ই পারিস শিকড় পরিচর্চা করতে – বাঁচাতে এই বট বৃক্ষ!
আমার দেশে, তুই থাকবি না কেন?
আমার দেশে তুই, তুইই একমাত্র দাবিদার থাকার – ভালো ভাবে বেঁচে থাকার।
আমার দেশে
তোর নিজের দেশে ফিরে আয় ভাই!
সাহাদাত মানিক
ক্যানবেরা
২৯/০৪/২০১৯
কবি, কথা সাহিত্যিক, মানবতাবাদী, সমাজকর্মী ও আইটি বিশেষজ্ঞ