আমরা মানুষ। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।মানুষ হিসেবে আমাদের বিভিন্ন ধরনের পন্থা,অধিকার,একে-অপরের সাহায্য-সহযোগিতার এবং মনুষ্যত্ব অর্জন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় যে আমরা এই দায়িত্বে অবহেলা করে থাকি অর্থাৎ আমরা কারো ভালো হোক সেটা চাই না।
যেমন শুরু হয় মানুষে – মানুষে হানাহানি, লোভ, হিংসা, ক্রোধ,সমালোচনা আরও কত কি!
বিশেষ করে বলা যায় যে,আজকাল মানুষ এই লোভের কারণে মনুষ্যত্বকে হারিয়ে ফেলে, হারিয়ে ফেলে তার শ্রেষ্ঠ জিনিস মানবতা। ফলে সে হয়ে যায় এক পশুত্বের সমান।
অতএব,তারা জানে না যে লোভ আসলে কি? এটা হিংস্র পশু না অন্য কি? আসলে তা নয়, লোভ হলো একটি শক্তিশালী কিন্তু প্রচন্ড খারাপ মানসিক অবস্থা। মানুষ যখন লোভে ভুষিভূত হয় তখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
সত্যিই তাই,মানুষ লোভে পড়লে তখন তার প্রকৃত জ্ঞানটা হারিয়ে ফেলে। ফলে সে সামনে কিভাবে অগ্রসর হবে সে সেটাও ভেবে চিন্তে করতে পারে না। আর সেটা না করতে পেরে সে চলে যায় এক অন্ধকার জগতে। যেখানে তাকে অনেক অশান্তি, শাস্তি ভোগ করতে হয়।
যেমন ইতিহাস থেকে বলা যায় যে,নবাব সিরাজুদ্দৌলার খালা “ঘসেটি বেগম” – সিরাজকে সিংহাসন না বসানোর তারিফ করেন। তিনি শুধু একা ছিলেন না, তার সাথে ছিলেন স্বামী মীর জাফর। কিন্তু বহু ষড়যন্ত্রের পরও অবশেষে সিরাজ সিংহাসনে বসলেন। সিংহাসনে বসার পর ঘসেটি বেগম ও মীর জাফর আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে। মূলকথা হলো যে,ঘষেটি বেগমের স্বপ্ন ছিল তার স্বামী মীর জাফর সিংহাসনে বসলে তার হুকুমেই এই প্রাসাদের আইন কানুন নিয়ন্ত্রিত হবে। কিন্তু মীর জাফর অবশেষে তার স্ত্রীর সাথে প্রতারনা এবং বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে। অবশেষে ঘসেটি বেগম সবকিছুই হারিয়েছে।
যাক,এবার মূল কথায় আসি! মূলত এই ইতিহাস থেকে বুঝা যায়, লোভের কারনে মানুষ নিজের আত্নীয়-স্বজন,প্রিয়জন সকলকেই ভুলে যায়। ফলে সে চলে যায় অন্ধকার জগতে। হারিয়ে যায় তাদের স্বপ্ন। শেষ হয়ে যায় তাদের সুখের জীবন।
আর অন্যদিকে মানুষের মধ্যে রয়েছে হিংসা ও সমালোচনা। এই দুইটা জিনিস আমার মতে লোভের চেয়েও অনেক জঘন্য। হিংসা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই হিংসার ফলে সমাজে শুরু হয় নানা বিষন্নতা এবং এই বিষন্নতা পর মানুষ তার সুখের জীবনকে নষ্ট করে তার মনুষ্যত্বকে হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ মানুষটি তখন মানবসত্তাকে ভুলে যায়। ভুলে যায় তার বাস্তব জীবন।
এবার আসা যাক সমালোচনা নিয়ে। সমালোচনা বলতে বুঝি,কোনো একজন ব্যাক্তির অনুপস্থিতিতে তার নামে অশালীন কথা বলা মানে এমন এক কথা যা বললে সে মনে কষ্ট পাবে তাকে বুঝায়। আজকাল আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, কয়েকজন ব্যাক্তি একত্রিত হয়ে একজন মানুষের সমালোচনা করে থাকে। যেমনঃ-আপনি একজন মানুষের সাথে সাথে সরাসরি কথা বললেন এবং তার মধ্যে আপনি অনেক খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছেন এবং সে একটা ভুল করেছে আপনার সামনে। কিন্তু আপনি তার সামনে তার ভুলটা সংশোধন করেন নি। আর আপনি সেটা না করে, আপনি তার অনুপস্থিতিতে আপনার প্রতিবেশিকে নিয়ে বাজে আলোচনা করলেন।
কিন্তু আমার মতে,আপনি হয়তো তাকে সরাসরি বলতে পারতেন তার ভুলটার কথা। আপনি তা না করে করেছেন ঠিক উল্টোটা। যদি আপনি তার সাথে কথা বলার সময় তার ভুলটা ধরিয়ে দিতেন। তাহলে মানুষটি তার ভুল বুঝতে পারতো। কিন্তু আপনি তা না করে তাকে লজ্জা দিচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। এটা মনুষ্যত্ব নয়।বরং এটা মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে। মানে মানব সত্তাকে অপমান করা।
আমরা আজও বুঝতে পারি না কোথায় কি ভাবে চলতে হবে। আমরা চলি স্বার্থের পিঁছনে। আর অন্যদিকে ভুলে যাই মনুষ্যত্বকে।
সুতরাং আমরা কেউই মনুষ্যত্বের দিকে যেতে রাজি নই। সবাই নিজ নিজ স্বার্থের জন্য কাজ করি। অন্যের সহযোগিতা নিতে চাই কিন্তু সমভাবে দিতে রাজি নই। আর এটাই হলো বাস্তব জীবন।
অবশেষে একটা কথা বলবো;-আমরা যদি আজ এই মনুষ্যত্বের দিকে অগ্রসর হই তাহলে আমরা মানবসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে পারবো এবং মানুষের মতো মানুষ হতে পারবো, সৃষ্টিকর্তা সহায় থাকলে।
লেখক, ক্রীড়া সাংবাদিক ও সমাজকর্মী