শাপলা বিল। জন বসতি থেকে তিন চার কিলোমিটার দূরে। নির্জন। এই বিল থেকে চারিদিকে যতটুক চোখ যায়, শষ্য শ্যামল ফসলের মাঠ। বর্ষা মৌসুমে, অথৈ জলে সাদা লাল শাপলা ফুলে ভরে যায় সমস্থ বিল। হয়ে উঠে অপূর্ব এক প্রকৃতির নিদর্শন। সম্ভবত এই শাপলা ফুলের জন্যেই এই বিলের নাম করুন হয়েছে শাপলা বিল।
বর্ষার বৃষ্টি হটাৎ করে থেমে ঝকঝকে সূর্যটা দেখা দিলো মাথার উপরে। শাপলা বিলে যাবো বলেই দাঁড়িয়েছি ঘাটে। একজন তাগড়া মেদহীন পেটা শরীরের মাঝি হাত ইশারায় ডাকছে আমায়। আমিও মনে মনে ভাবছি – এই মাঝিটার নৌকাতেই যেতে চাই আমি।
এই যাবেন? কত নিবেন? – আপনার যা ইচ্ছা দিবেন।
পরে কিন্তু বাড়াবাড়ি – দামাদামী করতে পারবেন না! ঘন্টায় ১০০ টাকা দিবো। যাবেন? – কইলাম তো উঠেন। ভাড়া সমস্যা হইবো না।
শাপলা বিলের সব চেয়ে সুন্দর নিরিবিলি জায়টাতে নিয়ে যেতে পারবেন আমাকে? – হ, পারুম না কে, আমি এমুন এমুন জায়গা চিনি, যা অন্য মাঝিরা কখনো যায়ও না, চিনেও না।
ঠিক আছে আপনাকে আমি টাকা বাড়িয়ে দিবো। আমাকে আপনার পছন্দের জায়গাগুলিতে নিয়ে যাবেন। – আহেন, চৈয়ের নিচে ছায়াতে বহেন। যাইতে বেশিক্ষন লাগবো না।
একটা অপরূপ সুন্দর জায়গাতে এসে লগি গাড়ল মাঝি। নৌকার দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাধলো নৌকা লগির সাথে। স্যার দেখছেন কি সুন্দর জায়গাটা!
চারি দিকে আধডোবা গাছপালা। আমার ধারণা এটা ডোবা বা জলাশয় – বর্ষা এলে দশ পনেরো হাত পানির নিচে তলিয়ে যায়, চারিধারে গাছপালা সহ। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ছবি তুলতে। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য সবার সব সময় হয় না।
জায়গাটা খুবই নিরিবিলি। দৃষ্টির সীমানায় কাউকে দেখছি না। মাঝিও হটাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে ছালা মোড়ানো কি যেন বের করছে।
গত বার, ঠিক এই খানটাতেই, আমার টাকা, মোবাইল ফোন, দামি যা কিছু ছিল সব কেড়ে নিয়ে, আমাকে হাত পা বেঁধে জলে ফেলে হত্যা করেছিল – এই মাঝিটা।
কবি, কথা সাহিত্যিক, মানবতাবাদী, সমাজকর্মী ও আইটি বিশেষজ্ঞ