করোনার কারনে লকডাউন এলাকাগুলোর টিভি রিপোর্ট দেখছিলাম। শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ! এই সমস্যা সেই সমস্যা! এসব দেখেশুনে হজক্যাম্পের সামনে সেই ইতালি ফেরতদের অভিযোগ সমগ্র আর রাষ্ট্রকে গালিগালাজের কথা মনে পড়েছিল!
যারা বাংলাদেশে করোনা মহামারী বয়ে নিয়ে এসেছিলেন! এরপর আবার দেখিয়েছেন বড় গলা! ইতালিতে আইন না মেনে চলার উপায় ছিলোনা। মোটা জেল-জরিমানা হয়ে যেতো। দেশে এলেই অনেকের যা খুশি স্বভাব মাথাচাড়া দেয়!
বাংলাদেশের রাষ্ট্র এবং এর মানুষজন অনেক ভদ্র হওয়াতে সেই লোকগুলো এখনও যার যার বাড়িঘরে অবস্থান করছেন! মানুষের জীবন দূর্বিষহ করার জন্যে তারা দায়ী। এখন লকডাউনের এসব অভিযোগ মাষ্টারদের কথা শুনবেননা প্লিজ।
কারন লকডাউন কোন শশুরবাড়ির বিলাস জীবন নয়। সেখানে অনেক কিছুই থাকবেনা। মহামারীর সময়ে রাষ্ট্র কিছু এলাকাকে মডেল ধরে সংক্রমন নিয়ন্ত্রনের একটা চেষ্টা শুরু করেছে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের কারোরই নেই।
ভুলক্রটি-সীমাবদ্ধতা অনেককিছুই থাকবে। এসবের অভিজ্ঞতায় চেষ্টা করতে হবে যাতে লকডাউনকে যতটা সম্ভব কাজে লাগানো যায়। পূর্ব রাজাবাজারের ওয়ার্ড কমিশনারের সক্রিয় ভূমিকাটি ভালো লেগেছে।
তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন লকডাউনের কারনে এলাকার বাসিন্দা কারও যাতে চাকরির ক্ষতি না হয় এ বিষয়টি তারা দেখবেন। প্রয়োজনে কর্মদাতার সঙ্গে কথা বলবেন। কারন লকডাউনের সিদ্ধান্তটি সরকার নিয়েছে।
লকডাউন এলাকার লোকজন কাজে যাওয়াটাও সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রের জন্যে নিরাপদ নয়। লকডাউন এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী থাকায় এই সময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল বাসিন্দার করোনা টেস্ট করা গেলে অন্তত একটি কাজ এগিয়ে রাখা যাবে।
এই মহামারীর সময়েও যাদের সংক্রমন আর মৃত্যভয় বড় নয় তারা আসলে মানসিক রোগী। করোনা পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীতে মানসিক সমস্যাও বেড়েছে। তাদেরকে মানসিক সমর্থন অথবা চিকিৎসা দিতে হবে।
যে সব সাংবাদিক লকডাউন স্পটগুলোতে কাজ করছেন তারা এই সুযোগে মানবিক আরও কিছু দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এখন চিকিৎসকদের স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে দর্শক জনগনকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এই অনুষ্ঠানগুলোকে লকডাউন এলাকার মানুষজনের খাবার-জরুরি ওষুধ সহ নানাকিছু সহায়তা পৌঁছানোর কাজে লাগানো যেতে পারে। অনুষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছাসেবক চাইলেই মানুষ সাড়া দেবে। আমাদের ইনবক্স করলেও সহায়তার ব্যবস্থা করা যাবে।
মোটকথা এই লকডাউনকে কিভাবে কতটা বেশি সম্ভব কাজে লাগানো যায় সেই চেষ্টা সবাইকে করতে হবে। পুলিশ সহ নানা বাহিনীর সদস্যরা অনেক মানবিক দায়িত্ব পালন করছেন। আমরাও না হয় অল্পকিছু করলাম।
দেশের মানুষকে আমাদের বাঁচাতে হবে। মানুষের জন্যে এমন কাজ করার সুযোগ জীবনে খুব বেশি আসেনা। এই সময়ে কিছু লোকের মুখের ভাষাও বদলাতে হবে। এখন যা খুশি বলার সময় নয়।
একজন দেখলাম বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন এই লকডাউন আরও আগে দেয়া উচিত ছিল। আরও আগে করা গেলে খারাপ হতোনা। কিন্তু আগে কেনো দেয়া যায়নি তা যদি তিনি বুঝতে অক্ষম হন তাকে লকডাউন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হোক।
ইউরোপের মানুষের সামর্থ্য আর বাংলাদেশের মানুষের সামর্থ্য এক নয়। যিনি বক্তৃতা বেশি দেবেন তাদের স্পটে কাজে পাঠাতে হবে। এখন বেশি বেশি কাজের লোক দরকার। মানুষ বাঁচলে বক্তৃতার অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে।
বাজেট নিয়ে বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল সব মানুষ মরে যাচ্ছে সরকার কিছু করছেনা শিরোনামে যে বক্তৃতা দিয়ে দিলেন তা শুনে তাজ্জব হতে হয়েছে। দেশের স্বাস্থ্যখাতের এই অবস্থার জন্যে এই মির্জা সাহেবদের কী কোন দায় নেই?
তারা ক্ষমতায় থাকতে কী করেছেন? না তারা ক্ষমতায় থাকতে তারা সারা দেশে একের পর এক হাসপাতালের পর হাসপাতাল বানিয়েছেন আর এই সরকার এসে সেই সব হাসপাতাল ভেঙ্গে ফেলেছে?
মির্জা সাহেবের পাশে যে খন্দকার মোশাররফ নামের এক নেতা বসেন তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে চুরিচামারির কিছুই কী তিনি জানেননা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন শিক্ষকেরতো খন্দকার মোশাররফের মতো অত বিশাল সম্পদের পাহাড় নেই।
মির্জা ফখরুল কোন চাকরি করেননা ব্যবসা করেননা, বারো বছরের বেশি ক্ষমতায় নেই, কিন্তু এখনও যে চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে করেন, এর টাকা দেয় কোন গৌরি সেন? এরা সবাই মিলে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছেন!
নেতারা যদি দেশে চিকিৎসা করাতেন তাহলে দেশের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা জানতেন। যেমন যে নেতা কারাগারে যাননি তার কারাবন্দীদের অমানবিক জীবন নিয়ে কোন ধারনা নেই। জেল থেকে ফিরে অনেকে কারা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
তাঁর আরেকটি অভিযোগ সরকার একা একা সবকিছু করতে গিয়ে সব লেজেগোবরে করে ফেলেছে! আওয়ামী লীগ বিএনপি যেখানে এক টেবিলে খেতে পর্যন্ত বসেনা, সেখানেও চলে আসবে ‘সহি গ্রেনেড ডিস’!
অতএব অতি সন্নাসীতে গাজন নষ্ট না করে পারলে নিজেরা মানুষকে কত সহায়তা দেয়া সম্ভব তাই করেন মির্জা সাহেব। আপনার ভাষায় সরকার যেহেতু কিছুই করছেনা তাই আপনারা কাজ করে দেখুন, সব সমর্থন আপনাদের পক্ষে চলে আসবে।
এই করোনা সময়েও আমাদের কিছু কিছু কাজ দেখলে মনে হবে পড়াশুনার সমস্যায় মনের ভেতরে গিজগিজ করে বর্নবাদ! একজন একটা রিপোর্ট করেছেন এক গৃহশিক্ষক টিউশনি হারিয়ে এখন রিকশা চালান।
এতে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে? তিনিতো চুরি করেননা। অথবা তিনি যদি গাড়ি ড্রাইভ করতে পারতেন, তার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতো তিনি রিকশা না চালিয়ে ড্রাইভিং এর কাজ করতেন।
বহুবছর আগে মিশরে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী এরাও রাতের বেলা টেক্সি চালান। কারন এক চাকরির আয়ে তাদের সংসার চলেনা। তারা সংসার চালাতে দ্বিতীয় চাকরির কথা ভাবতে শুরু করেছেন বহু আগে থেকে।
আর আমরা করি দুর্নীতি! ঘোষনা দিয়ে বলি এই বেতনে সংসার চলেনা। আমাদের মনের মধ্যে বর্নবাদ। তাই একজন চুরি না করে রিকশা চালালে সেটি অপরাধ হয়! তা হয় আমাদের নিউজ আইটেম!
হোসনি মোবারকের আমলে মিশরের মন্ত্রিসভায় ২৭ জন ডক্টরেট ডিগ্রীধারী ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দেশে যে যে শাখায় বিশেষজ্ঞ পন্ডিত তাঁকে মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রন জানাতেন হোসনি মোবাররক।
বাংলাদেশে রাজনীতিকরা যেহেতু আজান দিয়ে দুর্নীতি করেন সে কারনে শেখ হাসিনা মাহবুবুল আলম হানিফদের বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নিয়ে বিশেষ একটি প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করেছেন।
এই করোনা মোকাবেলার নানা কাজ তাদের দিয়েই করনো হচ্ছে। রোহিঙ্গা ত্রান নিয়ে একই কারনে আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ নেই। জনপ্রতিনিধিদের সুযোগ দিতে গিয়ে ১০ টাকা কেজির চাল, ঈদ উপহারের আড়াই হাজার টাকা নিয়ে কী কেলেংকারি হয়েছে তা সবাই জানে।
একবার মনে করলাম শেখ হাসিনাকে লিখি বাংলাদেশেও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন-পরিচালনার। কিন্তু তাতে অন্য সমস্যা দেখা দেবে। তখন লেখা হবে অমুক অমুক দল করেন। চোর না সাধু এর চাইতে বাংলাদেশে দলীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ন!
সর্বশেষ তমা কনস্ট্রাকশনের নামে মাস্ক কেলেংকারিতে শেখ হাসিনা বিব্রত। অথচ এই তমার কর্নধার মির্জা আজমের জন্যে শেখ হাসিনা কিনা করেছেন! অথচ এই মহামারীর সময়েও এরা যখন নয়ছয় করেন তারা শেখ হাসিনার কথা একবারও ভাবেননা!