অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটি এখন বলা চলে এক রকম হারিকেন দিয়ে নতুন করোনা রোগী খুঁজছে! এরজন্যে চালু করা হয়েছে বিশেষ একটি মোবাইল এ্যাপ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এখনই জাতীয়ভাবে সবকিছু খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারন এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি এই করোনা ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক।
শুক্রবার এদেশের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনকে নানাকিছু কবে নাগাদ খুলে দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেছেন, আরেকটু দেখি। ধারনা করা হচ্ছে আগামী শুক্রবার নাগাদ অস্ট্রেলিয়া বন্ধ অনেক কিছু খুলে দিতে পারে। তবে সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি সহ নানাকিছু বহাল থাকবে।
গত জানুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত এই রোগে এই মহাদেশে ৬ হাজার ৭৬২ জন আক্রান্ত হলেও তাদের ৫ হাজার ৭২০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। মারা গেছেন ৯২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় সারা মহাদেশ জুড়ে নতুন ১৬ জন রোগী পাওয়া গেছে।
৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আড়াই কোটি মানুষের মহাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় ৫ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ হার। অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তদের ৬৪ ভাগের বিদেশ ভ্রমনের ইতিহাস আছে। ক্রুজ তথা জাহাজে ভ্রমন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১২০০জন। চিকিৎসা পাননি অথবা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন এমন কোন অভিযোগ এদেশে নেই। এটা এদেশে সম্ভবও নয়।
অস্ট্রেলিয়া যখন সবকিছু সামাল দেয়া স্বত্ত্বেও নানাকিছু খুলে দেবার সাহস করতে পারছেনা, সেখানে বাংলাদেশ আক্রান্তের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তখন বিদেশি কার্যাদেশ হারানোর ভয়ে পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে!
বাংলাদেশের মানুষ অমিত সাহসী-সংগ্রামী। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য অস্ট্রেলিয়ার মানুষের মতো নয়। আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে।
বাংলাদেশের সৌভাগ্য দেশের মানুষের কল্যানকামী মানুষের সংখ্যা এখানে বেশি। এই দেখেননা এতদিন যে পুলিশের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ করেছেন, তারাই এখন মানুষকে খাওয়াচ্ছে বেশি!
আবার বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এখানে কয়েক লাখ মানুষ মারা যাক, এমন কিছু প্রার্থনাকারী বাংলাদেশের ভিতরেই আছেন! এরা নরপশু। এদেরকে হারিয়ে দিতে হবে।
মহামারীর এই তুঙ্গ সময়ে জীবিকা রক্ষায় বেপরোয়া পোশাক শ্রমিকদের বেরিয়ে পড়াকে আমরা ভয়ের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছি। কিন্তু এটাওতো সত্য, এমনিতে স্বভাবগত কারনে খুব কম সংখ্যক মানুষকে এখন আর ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে।
তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। কারন রোগটায় পড়লে ভুগবেন তিনিই। তখন আর কেউ তাকে ঘরে ঢোকাবার চেষ্টা করতে তার ত্রি সীমানায় যাবেনা।
আমাদের এই লোকগুলো রোগে পড়ার আগে কোন কিছুকেই আমল পাত্তা দিতে চাননা। রোগে পড়লে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এখানেই সমস্যা। এই রোগ হলে কোন অবস্থাতে ভয় পাওয়া যাবেনা। এরচেয়ে কঠিন কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বাংলাদেশের লোকজন বেঁচে থাকে।
কাজেই কেউ আক্রান্ত যাতে না হোন সে চেষ্টা সবাইকে করতে হবে। পোশাক শ্রমিক যারা কাজে গেছেন তারা যাতে যেখানে থাকেন, যাতায়াতের সময় বা কর্মক্ষেত্রে আরেকজনের মাধ্যমে আক্রান্ত না হন সে ব্যাপারে তাকেই সতর্ক থাকতে হবে।
পোশাক শ্রমিক ছাড়াও অন্য যারা কাজের জন্যে বাইরে যাচ্ছেন পুলিশ-সাংবাদিক সহ সবাইকে সাবধান থাকতে হবে যাতে তাদের আর কেউ আক্রান্ত না হন।
সাংবাদিকদের জীবনটা বেশি হেলাফেলার, এ পেশার লোকজন সারাক্ষন অন্যের খবর নেন, খবর নেননা নিজের-সংসারের-কম্যুনিটির। এমন মানসিকতার কারনেই সাংবাদিক-পুলিশ যারা খুব বেশি মানুষের কাছে যাচ্ছেন, তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। সবাইকে যার যার স্বাস্থ্যসম্মত কাজের পরিবেশ নিয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
যেহেতু গার্মেন্টস খুলে দেয়া হয়েছে, এ কথা বলে বাংলাদেশের কিছু লোক এখন হাট-বাজার, সব দোকানপাট খুলে দিতে বলবে। মসজিদ সহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে বলবে। হয়তো খুলে দেয়া হবেও।
কিন্তু আপনি আক্রান্ত হবেন কিনা সেটি নির্ভর করছে আপনার নিজের কাছে। অদৃশ্য আততায়ী চার পাশে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া আরও কিছুদিন কেউ ঘর থেকে বেরুবেন না প্লিজ।
নিতান্ত প্রয়োজনে যদি বেরুতেই হয়, তাহলে সেভাবে সতর্কতা দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। বাংলাদেশে যেহেতু দূরত্ব বজায় রেখে চলা সম্ভব নয় তাই কিভাবে না বেরুলে চলবে সে পথ বের করুন। এখন ঝুঁকি নিয়ে মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়লেও আল্লাহ শুনবেন। ধর্ম ধংস হয়ে যাবেনা।
ঘরে বা কর্মক্ষেত্রে ফিরে আগে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিজেকে নিরাপদ করে নিন। সবক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাদেশ যেহেতু ঘনবসতিপূর্ন দেশ তাই বাইরে গেলেই মাস্ক ব্যবহার করা নিরাপদ।
এই সময়ে মিডিয়ার কিছু রিপোর্ট জেনে অথবা না জেনে হতাশা ছড়াচ্ছে। অমুক জায়গায় আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটর নেই, এই নেই সেই নেই! বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এসবতো গণহারে নেই, তাতো আমরা সবাই জানি।
এখন বললেই শতশত আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর বসে যাবেনা। আপনার অফিসে কী সবকিছু আছে? এরজন্যে আপনার কী কোন কাজ বন্ধ আছে? এই রোগে আইসিইউ খুব কম রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। সীমিত সামর্থ্যের মাঝেও বাংলাদেশ আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সামর্থ্য বাড়ানোর কাজ করছে।
কাজেই কিভাবে বাড়িতে থেকেই এই রোগমুক্তি সম্ভব মানুষকে সেভাবে বেশি বেশি প্রস্তুত করতে হবে। সাংবাদিক যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মুখে তাদের অভিজ্ঞতা শুনুন। বাংলাদেশের অনেক রোগী হাসপাতালে যাবার পর বেশি সমস্যায় পড়েছেন।
আমি আজ ঢাকায় আমার এক চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। তিনি কোন হাসপাতালের কর্তৃ্ত্বে নেই। বাড়িতে থাকা চারজন পরিচিত ব্যক্তিকে তিনি শুধু টেলিফোনে পরামর্শ দিয়ে দিয়ে সুস্থ করেছেন।
বিভিন্ন এলাকায় করোনার সন্দেহভাজন করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহের লোকবলের অভাব নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে। যারা রিপোর্ট করছেন তারাও জানেন তাদের অফিসে কত কম লোকবল নিয়ে কাজ হয়।
এই মহামারীর সময়ে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ডিঙ্গিয়ে লোকবল সংগ্রহ করতে করতে অবস্থার অবনতি হয়ে যাবে। এরচেয়ে স্কাউট-রোভার স্কাউট বা বিএনসিসির সদস্যদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষন দিয়েও কাজে লাগানো যেতে পারে।
আমাদের স্কাউট জীবনে আমরা বন্যার্ত গ্রাম ঘুরে মানুষকে ইনজেকশন দিয়েছি। আমাদের শুধু এক-দু’বার দেখিয়ে দিতে হয়েছিল। এই প্রজন্মের স্কাউটরা অনেক বেশি স্মার্ট।
বাংলাদেশের যে ঘন বসতি সে তুলনায় রোগীর সংখ্যা আহামরি নয়। বাংলাদেশে যে মৃত্যু বেশি এরকারন ভয় পেয়ে যাওয়া। হয়তো আক্রান্ত হবার আগে তাদের অনেকে নিজেরাই ভয় ছড়ানোর কাজ করেছেন। আক্রান্ত হয়ে নিজেরাই ভয় পেয়ে গেছেন। ভয় পেলেই এই মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
প্লিজ জেনে অথবা না জেনে এই পরিস্থিতিতে কেউ ভয় ছড়ানোর কাজ করবেননা। দেশকে এই বিপদ থেকে রক্ষায় দেশের বিদেশের অনেক ভালো মানুষেরা কাজ করছেন।
আপনিও হয়তো সে দলেরই একজন। হাতটা আরেকটু বাড়ান। দেখবেন এই যুদ্ধেও আমরা জিতে যাবো। এরপর আবার মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মতো করে আমরা চিৎকার করে বলবো জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতা শেখ মুজিবরের বাংলাদেশ এবারও হারবেনা।