এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উত্থান। সেই খালেদা জিয়া যে এখন ঘরে উঠে গেছেন তা কী এমনি এমনি? বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেনো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাসপোর্ট সমর্পন করে আশ্রয় নিয়েছে লন্ডনে?
এটিও কী এমনই এমনই? মোটেই নয়। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেও এখন ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের নজরদারিতে। একবার মাত্র শরণার্থীর ট্রাভেল ডকুমেন্টে তাকে হজ উপলক্ষে সৌদি আরব যাবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে একাধিক মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত এবং আইনের চোখে পলাতক তারেক এরপর আর ব্রিটেনের বাইরে যাবার অনুমতি পাননি। কোকো মারা যাবার পর লাশ দেখতে তিনি মালয়েশিয়া যাবার অনুমতি চেয়েছিলেন।
কিন্তু ব্রিটিশ সরকার না’ বলে দেয়ায় পারেননি। রাজনীতি এমন একটি শিল্প যে এরসঙ্গে হত্যাকান্ড-রক্তপাত এসবের সম্পর্ক সাংঘর্ষিক। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান মাতা-পুত্র এখন এর ফল ভোগ করছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক গহবর থেকে বিএনপির সৃষ্টি। জাতির পিতার দুই মেয়ে ১৫ আগষ্ট দেশের বাইরে থাকায় তাদের হত্যা করা যায়নি। ২১ আগষ্ট ১৫ আগষ্টের ধারাবাহিকতার অপচেষ্টা।
ফলোআপ হত্যাকান্ডের অপচেষ্টার মাধ্যমে ২০০৪ সালের একুশ আগষ্ট শেখ হাসিনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চান তারেক। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরসূরীকে হত্যা করে বিএনপি ক্ষমতায় দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ হতে চেয়েছিল। পা পিছলে পড়ে গেছে।
পাপ বাপকে ছাড়েনা। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকান্ডে জিয়া জড়িত নন? আচ্ছা আপনাদের কথা মানলাম, জিয়া জড়িত নন। কিন্তু তিনি হত্যাকান্ডের বিচার করতে দিলেননা কেনো? বঙ্গবন্ধুকে কেনো নিষিদ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি?
বিচার নিষিদ্ধ করে খুনি মোশতাক যদি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করেই থাকে জিয়া কেন তা পার্লামেন্টের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত করেছিলেন? খুনিদের কেনো বিদেশে প্রাইজ পোষ্টিং এর ব্যবস্থা করেছিলেন? ভালোবাসায়?
এখন এর ফলভোগ করছে বিএনপি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় খালেদা জিয়া রাজনীতির সাতেপাঁচে ছিলেননা তিনি শুধু তখন মাগুর মাছের ঝোল রান্না করতেন আর জিয়ার বড় শার্ট ছোট করে তারেককে পরাতেন, মানলাম।
কিন্তু তিনিও কেনো ক্ষমতা পেয়ে জাতির পিতাকে নিষিদ্ধ করে রাখলেন? মানুষেরতো কিছুটা চক্ষু লজ্জাও কাজ করে তাই নয় কি? এই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কী উপকার করেছিলেন খালেদা জিয়ার?
খালেদা জিয়াকে তাঁর নিজের মেয়ের সম্মান দিয়ে তার সংসার রক্ষা করেছিলেন জাতির পিতা তা তিনি ভুলে গেলেন কী করে? যে উপকারীর উপকার স্বীকার করেনা তার জন্যেতো আল্লাহও শাস্তি ঠিক করে রেখেছেন তাই নয় কি?
কি কৃতঘ্ন ধারাবাহিকতা! ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসেও খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করে রাখেন! বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনে পাশ করিয়ে এনে বিরোধীদলের নেতা করতে চাইলেন?
এরপর আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় ফিরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আটকে দিলেন! বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের দিনে পালন করা শুরু করলেন নিজের ভূয়া জন্মদিন! এসব ধৃষ্ট তৎপরতার কী কোন শাস্তি নেই?খালেদা জিয়া কী এখন নিয়তির শাস্তি টের পাচ্ছেন?
আমি যতোটা জানি ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার নকশা সাজান তারেক রহমান। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব ওমর ফারুক ছিলেন সবকিছুর সঙ্গে। সবকিছু বলে গেছে মুফতি হান্নানও।
শেখ হাসিনাকে হত্যার পরে দেশে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হতো, এর দায় মা খালেদা জিয়াকে দিয়ে তারেক তখন ক্ষমতায় বসতে চেয়েছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়ার পর তারেক ক্ষমতা পেতেন। কিন্তু তর তার সইছিলনা!
খালেদা জিয়া পুরো বিষয়টি জেনে এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে সে রাতে তিনি শেখ হাসিনাকে দেখতে সুধা সদনে যেতে চেয়েছিলেন। এরপর তিনি সিএমএইচে বেগম আইভি রহমানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
তাকে তবু বাঁচানো যায়নি। মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলায় লন্ডভন্ড বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়া হয়। যারা এখনও বেঁচে আছেন গ্রেনেডে স্প্রিন্টারে তাদের এখনও কষ্টের দিনযাপন আর কান্নার কি কোন অভিশাপ নেই?
তখন হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল শাসন চালানো তারেক রহমান ঘটনার পরবর্তী বাহাত্তর ঘন্টা কাটান লো প্রোফাইলে। ওই সময়ে তার কোন কার্যক্রমের খবর মিডিয়ায় আসেনি।
পরিস্থিতি সামাল দেবার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অবশ্য ছেলে তারেকের পক্ষ নেন। ঘটনার সব আলামত নষ্ট করে ফেলা হয়। কুমিল্লার সংখ্যালঘু যুবক শৈবাল সাহা পার্থকে গ্রেফতার করে হয়রানি কী বিএনপি ভুলে গেছে?
ঘটনার পরপর এ নিয়ে তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া হতাশা এবং অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের মাধ্যমে পুরো নকশার খবর তখন আমি জনকন্ঠে লিখেছিলাম।
যেহেতু কাউকে কোড করা যাচ্ছিলোনা তাই লিখেছিলাম কৌশলে। রানীকে কৌশলে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল রাজপুত্র! শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়েছিলেন এটাও বলা হয়েছিল!
সবশেষে ব্যবস্থা করা হয় জজ মিয়া নাটকের। এরপর ১/১১’র পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রকাশ পায় জজ মিয়া নাটক। চারদিকে ছি! ছি! পড়ে যায়। নোয়াখালীর চরের জজ মিয়া কখনও গ্রেনেড কি তা দেখেনওনি।
খালেদা জিয়ার এতিমখানা দুর্নীতি মামলার তথ্য প্রমান ছিল সেনা গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এর হদিশ পায়নি। সেই এতিমখানা দুর্নীতি মামলা, আর ২১ আগষ্টের পাপতাপ ধারন করে দলটি এখন দিশেহারা।
শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার ঘটনা আড়াল করতে সাজানো জজ মিয়া নাটক বিএনপিকে রাজনীতি থেকে ছিটকে দিয়েছে। ২১ আগষ্ট স্থায়ী শত্রুতার সৃষ্টি করেছে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের। এসব আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার পর্যায়ে নেই।
বিএনপি বাংলাদেশে এন্টি আওয়ামী লীগ রাজনীতির মূলধারা হিসাবে জনপ্রিয়। কিন্তু খুনের দায় নিয়ে কোন দল নৈতিকভাবে রাজনীতিতে থাকতে পারেনা। নৈতিকতা হারিয়ে ফেলায় বিএনপিও আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
নীতি-নৈতিকতা রাজনীতির মূলভিত্তি। এর মাধ্যমে একটি দলের সঙ্গে জনগনের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। সেই নৈতিকতা হারানো দলের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে যাবার পরও বিএনপি মানুষকে পথে নামাতে পারেনি। খালেদা কারামুক্ত আছেন সরকারি দয়ায়।
শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি কবুল করায় তাঁর এখন আর রাজনীতির মাঠে নামার সুযোগ নেই। পরিবার আবার তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকার অনুমতি আবার দেবে তা আগাম বলা যায়।
কারন এভাবে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে নামতে পারবেননা। বিএনপির এই প্রজন্মকে রাজনীতির নৈতিকতা দিতে চাইলে বিএনপিকে জাতির পিতার হত্যাকান্ড, ২১ আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
সত্যের কাছে ক্ষমা চাইলে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। কিন্তু এই ২১ আগষ্টেও বিএনপির ব্রিফিং নেতা রুহুল কবির রিজভি বলেছেন তারেককে ষড়যন্ত্রমূলক এরসঙ্গে জড়ানো হয়েছে। তারেক কোনভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
রিজভি বলেছেন গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় ফিরলে আসল ঘটনা বেরুবে। বিএনপির কাছে আসল ঘটনাতো জজ মিয়া। দেশের মানুষকে তথা নতুন প্রজন্মকে ধোঁকা দেবার রাজনীতি আর এদেশে চলবেনা। রাজনীতির জমিনে ফিরতে চাইলে বিএনপিকে দায় স্বীকার করতে হবে