খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার আরও ৪ মামলা স্থগিত করেছে সুপ্রিমকোর্ট। এর আগে সর্বোচ্চ আদালত এমন আরও ৪ টি মামলা স্থগিত করে। এমন স্থগিত হলো মোট ৮ টি মামলা। এসব মামলা ২০১৩ সালের পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের।
এসব খুব খারাপ মামলা। ম্যাডামের সৌন্দর্য্যের সঙ্গে এসব একদম মানানসই নয়। তখন বিস্তর মানুষকে গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে ঝলসে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা রাস্তায় রাস্তায় পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে।
খালেদা জিয়া এসব স্পটে নিজে উপস্থিত ছিলেননা। কিন্তু তিনি দল ও জোটের নেত্রী হিসাবে কর্মসূচিগুলো দিয়েছিলেন। তখন ঘটনাগুলো ঘটেছে। বহু নিরীহ মানুষ হতাহত হয়েছেন এসব ঘটনায়। যারা বেঁচে গেছেন তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
বাংলাদেশে সাধারনত এসবের দায় দল-জোটের প্রধানকে দেয়া হয়না। তারা সবকিছুর উর্ধে। কলিমউদ্দিন-ছলিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার অনেক খারাপ। কলিমউদ্দিন-ছলিমউদ্দিন না। ডাইরেক্ট মামলা দিয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।
বিএনপি বরাবর বলে আসছে ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগ করেছে। কারন আওয়ামী লীগকে কামড়িয়েছে পাগলা সারমেয়। ক্ষমতায় যে দল আছে সে দল বাসে আগুন মেরে পাবলিককে পুড়িয়ে মেরে দেশের শান্তি নষ্ট করে আর কি।
বা পুলিশকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে মেরে সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশি অসন্তোষ উসকে দেয় আর কি! বিএনপি অবশ্য কিছুই করেনা। এখনও বারবার বলে যাচ্ছে একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলাও করেছে আওয়ামী লীগ!
এখন পর্যন্ত অবশ্য বলেনি জজ মিয়া নাটকের সময় তারা ক্ষমতায় ছিলোনা! খালেদা জিয়ার মতো দেখতে একজন ক্ষমতায় ছিলেন! ওই সময় হাওয়া ভবনের নামে প্যারালাল শাসন চালাতেন তারেক রহমানের মতো দেখতে একজন!
বিএনপি নিশ্চয় ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো করবে। এতে কোন ভুল নেই। এরজন্য তাদের ক্ষমতায় যাবার অপেক্ষায় থাকতেই হবে। আওয়ামী লীগতো আর রামকৃষ্ণ মিশন নয় যে বিএনপিকে ক্ষমতায় পৌঁছে দেবে।
এ লেখাটা লিখতে শুরু করেছি কিন্তু অন্য চিন্তা থেকে। টেলিভিশনে যখন খালেদার মামলা স্থগিতের নিউজ শুনে শুনে মনে হলো বিচার বিভাগের সময়জ্ঞানের প্রশংসা করে লিখি। কারন এই বাংলাদেশ অনেক কিছুর সাক্ষী।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাককে শপথ পড়িয়েছেন একজন বিচারপতি। বিচারপতি সায়েম, বিচারপতি সাত্তার এরা সামরিক শাসকদের দোসর হয়েছেন। কর্নেল তাহেরের প্রানরক্ষার উদ্যোগ নিতে রাজি হননি বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন।
একাত্তরের ঘাতকদের নয়নমণি পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়েছিল বিচার বিভাগ। আমি সেদিন কোর্টে ছিলাম। বিচারপতিরা হাহাকার করে বলেছিলেন, এমন একটা বয়স্ক মানুষের নাগরিকত্ব থাকবেনা তা কী করে হয়!
বাংলাদেশের বিচারপতিরা কত সুয়োমোটা রুল জারি করেন। কিন্তু একাত্তরের গণহত্যার বিচার কেনো হবেনা এ নিয়ে কেউ কোন সুয়োমোটো করেননি! বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার আটকে রাখা নিয়ে কোন সুয়োমোটো করেননি!
আবার এখন প্রধান বিচারপতি সহ বিচারপতির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোকে তাদের দায়িত্ব মনে করেন। এই বিচার বিভাগই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়েছে।
শাহবাগের গণজাগরনের সম্মানে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনকে ফাঁসিতে রূপান্তর করেছে বিচার বিভাগ। আবার দেলোয়ার হোসেন সাঈদির ফাঁসির আদেশকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে অরাজকতা দেখে ফাঁসির দন্ড পাল্টে সেটিকে যাবজ্জীবন দন্ড করেছে।
কর্নেল তাহেরকে হত্যার বহুবছর পর এসে বিচার বিভাগ বলেছে সেটি বিচার নয় হত্যাকান্ড ছিল। সামরিক শাসকদের বৈধতা দেয়া পূর্বসূরীদের বিপক্ষেও রায় হয়েছে।
শাসনতন্ত্রের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী নিষিদ্ধ করেছে।
এখন নাশকতার মামলা ৮ টি কেনো ২০ টি স্থগিত করলেও তাতে ৭৪ বছর বয়সী খালেদার ক্ষেত্রে তা ম্যাটার করেনা। শাসন বিভাগও বিব্রত হয়না। কারন তারতো মাথার ওপর দুটি মামলার দন্ড বহাল।
এসব মামলায় সর্বোচ্চ আদালত তাকে জামিন দেয়নি। দন্ড বাড়িয়েছে। কমায়নি। তখন বলা হচ্ছিল প্যারোলে মুক্তি নিয়ে খালেদা চিকিৎসার জন্য বিলাত যাবেন!
তার ছেলেরা কিন্তু ১/১১’র সময় প্যারোলে মুক্তি নিয়েই বিদেশ গিয়েছিল।
একজনের বিদেশ থেকে লাশ এসেছে দেশে। কি সব ছাইপাশ খেতে খেতে ছোট ছেলেটি কঠিন রোগ বাঁধিয়েছিল। মা সঙ্গে না থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি। আরেকজন আর দেশে আসেনইনি। এরমাঝে তার নামে তিনটি মামলার রায়ে সাজা হয়েছে।
মানে তিনি দন্ডপাপ্ত পলাতক আসামী। আগে বিএনপি বলতো তার কোমরের ব্যথা সারেনি। কোমরের ব্যথা কমে গিলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাবার পর কোমরের ব্যথার কথা আর বলেনা।
কারন সবাই এখন জানে তারেক ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার সময় পূর্বতন দেশের নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট সারেন্ডার করতে হয়। আর বলতে হয় আমার দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ একটি দেশ!
তারেক তাই করেছেন। এরমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন বাংলাদেশের নাগরিক নন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদেই এখন গোলমাল! একজন বিদেশি নাগরিক কী করে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান থাকেন!
তারেক সেভাবেই বিলাতে বসে ভার্চুয়াল কায়দায় দেশ চালাচ্ছেন! স্কাইপের মাধ্যমে তিনি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিলাতে আশ্রিত তারেক। ওইভাবে তিনি গত সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন বাতিল করেছেন।
এখন করোনার কারনে ভার্চুয়াল নানাকিছু হয়। টকশোও হয় ভার্চুয়াল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কেবিনেট মিটিং সহ নানাকিছুতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভার্চুয়াল। বিএনপি দাবি করতেই পারে তারেক অনেক দূরদর্শী! এমন করোনা হবে তা আগে জানতেন!
তাই তখন থেকেই দল পরিচালনা শুরু করেছেন ভার্চুয়াল! একদিন দেশের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাবে এই চিন্তায় বিএনপি সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ নিতে রাজি হয়নি! সেই দল এখন অনলাইন নির্ভর!
খালেদা জিয়া আপোসহীন নেত্রী। তিনি আইনে বিশ্বাসী। প্যারোলে শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি নিলে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে রাজনৈতিক সভাসমাবেশ করতে পারবেননা। যা বিএনপির জন্য আপোসহীন খালেদা জিয়ার জন্য অপমানকর।
এরজন্য খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির আবেদনেই রাজি ছিলেননা। এতে করে তিনি এবং বিএনপি নেতৃত্ব হয়তো মনে করেছেন তার আপোসহীন নেত্রীর ইমেজ রক্ষা পেয়েছে। কোন ছিটেফোটা কালিমাও তাতে লাগতে পারেননি।
আসলে বন্দীদের মা-বাবা বা স্বজন কারো মৃত্যু হলে শেষ দেখা বা জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য প্যারোল বহুল ব্যবহৃত। কিন্তু খালেদা জিয়ার ভাই-ভাবী-বোন ছাড়া দেশে সে রকম কোন স্বজন জীবিতই নেই।এরাই জেলখানায় তাকে দেখতে যেতেন।
সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের যেখানে খালেদা জিয়া প্রথম দিকে ছিলেন সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তার বোন মিডিয়াকে বারবার বলতেন, পরিবেশ ভালোনা। ওই স্যাঁতস্যাতে জেলে থাকলে খালেদা জিয়া একদিন এমনিতেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবেন।
শেখ হাসিনা আবার জেলে খালেদা জিয়া যেভাবে থাকতে চেয়েছেন সে রকম ব্যবস্থাই করে দিয়েছেন। ১/১১’র সময় তারা যখন সংসদ ভবনের পাশাপাশি সাবজেলে থাকতেন তখন খালেদার জন্য নাকি মাঝে মাঝে তরকারিও রান্না করে পাঠাতেন!
এবার প্রথমে খালেদা জিয়ার জন্যে গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে চাওয়া হলো! নজিবিহীনভাবে তাতেই রাজি হয়ে গেলেন শেখ হাসিনা! শুধু তাই না, গণভবনের মিডিয়া ব্রিফিঙে প্রধানমন্ত্রী একদিন ইশারায় বললেন, চাইলে সাজসজ্জার লোকও দেয়া হবে!
এরপর বেগম জিয়ার বোনের বারংবার অনুরোধ, বিএনপি নেতাদের আবেদনের সম্মানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্যে এনে তাকে আর কারাগারেই ফেরত নেয়া হয়নি।
দেশের সেরা এই হাসপাতালে একটি প্রিজন সেলও আছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে সেখানে না নিয়ে দুই কক্ষের এক ভিভিআইপি কেবিনে রাখা হলো। কিন্তু খালেদার বোন বারবার বলছিলেন এখানে তাকে কোন চিকিৎসাই দেয়া হচ্ছেনা।
তার হাত স্থায়ীভাবে বেঁকে যাচ্ছে। অথচ ডাক্তাররা বলতেন তারা রাউন্ডে গেলেই খালেদাকে দেখতে অপেক্ষায় বসে থাকতেন। খালেদা তাদের কেবিনে প্রবেশাধিকারই দিতেননা! রোগী যদি চিকিৎসা না চান ডাক্তার কী করে দেবেন!
এরপর একদিন সরকারি পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলেন আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার বোন-ভাই। তারা তাঁর মুক্তির জন্যে আবেদন করলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। শর্ত সাপেক্ষ এই মুক্তি প্যারোলের চাইতে কঠিন।
মুক্তির শর্ত অনুসারে খালেদা জিয়া বাসায় থেকে দেশে চিকিৎসা নেবেন। এই সময়ে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারবেননা। দন্ডপ্রাপ্ত অবস্থায় অবশ্য খালেদা জিয়া কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেনও না।
এভাবে ৬ মাসের জন্যে খালেদাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ছয় মাস প্রায় শেষ। এই সময়ে খালেদা জিয়া সম্পর্কে দলের একটি প্রচারনা ভুল প্রমানীত হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে জামিন শুনানির দেরি দেখে আইনজীবীরা বলেছিলেন, এরমাঝে যদি কিছু ঘটে যায়!
এখন অবশ্য দেখা গেলো কিছু ঘটেনি। কার্যত গ্যাটে বাত আর ডায়াবেটিকসের মতো রোগে রোগী বেঁচে থাকেন। এখন পরিবার আবার আবেদন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দয়াপরবেশ হয়ে খালেদাকে বাইরে থাকার আবেদন মঞ্জুর করবেন।
জেলখানার ভিতরে পারিবারিক পরিবেশে খালেদা জিয়ার ভালো থাকার কথা। কিন্তু তিনি কী ভালো আছেন? আগে জেলে বিটিভি ছাড়া আর কোন টিভি দেখতে পেতেননা। দুটি মাত্র পত্রিকা পড়তে পারতেন। এখন সব চ্যানেল দেখেন।
সব পত্রিকা পড়তে পারেন। ছেলের সঙ্গে যে যে সব মাধ্যমে কথা বলেন এর সবই মনিটরিঙের মধ্যে। সরকারি এজেন্টরা আছেন খালেদার দলে এবং ঘরে। দিন শেষে খালেদা জিয়ার অবস্থান নো হোয়্যার! তাকে সবাই ধুয়ে দিচ্ছেন।
তিনি কোন জবাব দিতে পারছেননা। কোন মানসিক ডাক্তার কী তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন?