বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতেও নিয়মিত নানান ব্রেকিং নিউজের স্ক্রল দেখানো হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত অমুকের চিকিৎসা সহায়তা চেয়েও স্ক্রলে আবেদন জানানো হয়। এই করোনা মহামারীর দূর্যোগের সময় স্ক্রলগুলোর ভাষা বদলে দেয়া যায়।
স্ক্রলের মাধ্যমে দর্শকদের উদ্দেশে বলা যেতে পারে, আপনার ঘরে কী খাবার আছে? আপনি কী হাসপাতালে যাবার গাড়ি পাচ্ছেননা? আপনাদের এসব জরুরি প্রয়োজনে আমাদের এই এই নাম্বারে ফোন করুন।
আমরা আপনার জন্য খাবার-জরুরি ঔষধ, আপনার হাসপাতালে যাবার গাড়ি নিয়ে আমরা আপনার কাছে পৌঁছে যাবো। আপনার কোন নিকটজন কোথাও গিয়ে আটকা পড়েছেন? তাকে আপনার কিছু পৌঁছে দেয়া দরকার? আমাদের ফোন করুন।
এই মহামারীর সময়ে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোও মানুষের প্রয়োজনে এমন নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতার অনেক মানবিক ভূমিকা পালন করতে পারে। মিডিয়ার যে কি বিশাল শক্তি তা মিডিয়ার লোকই জানে।
মন্ত্রী-আমলা-হাসপাতাল-ডাক্তার সহ নানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের মিডিয়ার লোকজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। কাজ করতে করতে এসব সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ফোন করলে তারা আমাদের ফোন ধরেন।
আমরা কিছু চাইলে তা তারা সঙ্গে সঙ্গে করে দেন। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আমরা অনেকে তাদেরকে ফোন করিও। অফিসের লোকজনও নিজেদের সমস্যার সমাধানে মেডিক্যাল বিটের সাংবাদিকদের সহায়তা নেন।
করোনা দূর্যোগের এই সময়ে অনেক মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে নিয়ে অনেকটা টেলি মেডিসিনের মতো অনেক অনুষ্ঠান করছে। দর্শক রোগী তার সমস্যা নিয়ে ডাক্তারকে ফোনে প্রশ্ন করছেন। তাৎক্ষনিক একটা সমাধান বলে দিচ্ছেন।
আমাদের প্রতিটি মিডিয়ায় মেডিক্যাল বিট নামের একটি শক্তিশালী বিট আছে। সেই বিটের রিপোর্টারদের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সচিব, ডাক্তার-হাসপাতাল সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত একটি সখ্য আছে। অফিসের কারও প্রয়োজনে আমরা তাদেরকে ফোন করি।
তারা সঙ্গে সঙ্গে একটি সমাধানের পথও করে দেন। আপনার ফোনের অনুরোধ রাখতে পারলে তাদেরও ভালো লাগে। আপনাকেও মিডিয়ার মানুষদেরও তাদের যেমন দরকার। আপনি তাদের সার্ভিস নিয়ে লিখলে তাদের উপকার হয়।
আবার এমন অনেকে আছেন যারা প্রচারও চান না। নীরবে গোপনে মানুষের জন্যে কাজ করতে চান। আজকাল এমন নেপথ্যের প্রচার বিমুখদের সংখ্যাও কম নন। কত লোক মিডিয়ার কথায় কত লোককে সহায়তা দেন। সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেন। কোথাও যাদের তাদের নামটি বলা বা লেখা না হয়।
মাসুদ কামাল, মুন্নি সাহা, ফারজানা রূপারা এক সময় স্বাস্থ্য বিটের একেকজন শক্তিশালী রিপোর্টাররা অনেক বড় বড় কাজ করেছেন। তাঁরা এখনও তাঁদের কর্মক্ষেত্রের একেকজন রোল মডেল।
মুন্নি সাহার এখনও কানেক্টিং বাংলাদেশ নামের জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দূরের গ্রামের মায়েদের-মেয়েদের স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। অটিজম বাচ্চাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান রয়েছে পাওয়ার প্যারেন্টস নামের।
এখনও প্রতিদিন করোনার চিকিৎসা সহায়তায় ডাক্তারদের বিশেষ অনুষ্ঠান করছেন আপনাদের প্রিয় মুন্নি সাহা। ফ্রন্ট লাইনের ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসা কর্মীদের সম্মান জানানোর বিশেষ একটি অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘থ্যাংকু ডাক্তার’।
এই দূর্যোগে মানুষের জন্যে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সিমটমের রোগীদের নমুনা সংগ্রহ, এর পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে একটি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
এক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তায় ভূমিকা পালন করতে পারে মিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবী টিম। বাড়িতে থেকে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, যারা আইসোলেশন-কোয়ারিন্টানে আছেন তাদের যা যা দরকার তা নিয়েও মিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবী টিম কাজ করতে পারে।
প্রয়োজনে মিডিয়ার লোকজন যদি তাদের চেনা মানবিক কন্ঠে ফোনে বিপন্ন বোধ করা মানুষজনের ফোনে এটেন্ড করে, তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, তাতেও তাদের কাউন্সিলিং সহায়তা দেয়া হয়ে যাবে। মানুষের এসব এখন খুব দরকার।
একজন রিপোর্টার, মিডিয়ার মানুষ হিসাবে সাংবাদিক-মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা নিজস্ব ব্যক্তি যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগীদের কাছে আনা নেয়ার কাজও করতে পারেন। দেশে এখন নন কভিড রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টের রোগী, ডায়াবেটিকস, ক্যান্সার-কিডনি রোগী, বয়স্ক মানুষজন, প্রসুতি মায়েদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা-পরিচর্যা নিয়ে সমস্যা দুরুহ রূপ নিয়েছে। তাদের অনেকে কোথাও যেতেও পারছেননা, বাড়িতে থেকেও সার্ভিস পাচ্ছেননা।
মিডিয়া তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। টেলি কনফারেন্স বা তাদের কাছে গিয়ে তাদের সামনে বসে পরিচিত ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়ে তাদের মুশকিল আসান করা যায়। একমাত্র মিডিয়াই জরুরি এই সমস্যার নির্ভরযোগ্য সমাধানের ব্যবস্থা করতে পারে।
করোনা যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের কর্মক্ষেত্রে, আইসোলেশন, কোয়ারিন্টানের এলাকা-বাড়িতে আনা নেয়া, প্রয়োজনে খাবার-ঔষধ পৌঁছে দেবার কাজেও লাগতে পারে মিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবক টিম।
মানুষকে খাবার পৌঁছে দেয়া এই যুদ্ধের জরুরি এক প্রয়োজন। কারও ঘরে যদি খাবার না থাকে, জরুরি গ্রোসারির প্রয়োজন যদি তারা মিডিয়ার স্ক্রলের বা অনলাইনে দেয়া নাম্বারে টেক্সট করে জানান, তা পৌঁছে দিয়ে দেখুন।
মানুষ হিসাবে আপনার মানবিক মনটায় তখন অনেক ভালো লাগবে। খাবারের সমস্যা আপনার মিডিয়ার কোন কর্মী, প্রেস-ট্রান্সপোর্ট-বিপনন হকারদেরও আছে। প্রয়োজনে শুরুটা তাদের দিয়েই শুরু করতে পারেন।
প্রথমে শুরু করতে পারেন আপনার বাড়ির রান্না অথবা বাড়তি গ্রোসারি দিয়েই কাজটি শুরু করলে আস্তে আস্তে একটা তহবিল গড়ে নেয়া যাবে।
কাজ শুরু করলে দেখবেন তহবিলের পিছনে আপনাকে ঘুরতে হবেনা। তহবিল চলে আসবে। বিদ্যানন্দের তহবিলের জন্যে এখন কোথাও যেতে হচ্ছেনা। তহবিল বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীদের খুঁজে নিচ্ছে।
মানুষের পক্ষে কাজ করতে করতেই কিন্তু একেকটি সময়ে একেকটি মানুষের সংগঠন গড়ে ওঠে। মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা এই দূর্যোগে এই কাজটা সহজে করতে পারি।
বিদ্যানন্দের মতো সংগঠন নিজেদের স্বচ্ছতার প্রমান দিয়েছে। মিডিয়ার উদ্যোক্তাদের শুধু এই স্বচ্ছতার এই অবস্থানটা তৈরি করে নিতে হবে। প্রথম আলো তাদের বন্ধুসভা নামের পাঠক সংগঠনের মাধ্যমে শীতে অভাবী মানুষজনকে শীতবস্ত্র সহ নানান ত্রান দেয়।
এখন দেশের মিডিয়া অফিসে অফিসে গড়ে নেয়া যায় বিশেষ হেল্প ডেক্স। সেখানে অফিসের কোন একজন স্টাফ প্রতিনিধির নেতৃত্বে গড়ে নেয়া যায় একটি স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ। এই সময়ে ডাক দিলে এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবক ছেল-মেয়েও বিস্তর পাওয়া যাবে।
আপনার এলাকায় কারা কিভাবে ত্রান তৎপরতা চালাচ্ছেন মিডিয়ার মানুষ হিসাবে কাজ করছেন তা মিডিয়ার মানুষ হিসাবে আপনি ভালো জানেন। আপনার মিডিয়া অফিসের হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে তালিকাভূক্তদের তাদের মাধ্যমেও ত্রানের ব্যবস্থা করে দেয়া সহজ।
এমন কী মিডিয়া উদ্যোগ নিলে মিডিয়া আহবান জানালে বা মিডিয়ার কার্যক্রম দেখলে দেশ-বিদেশের অনেক দাতা ব্যক্তিগত আগ্রহে এমন মানবিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে যাবেন। মানুষের জন্যে মানুষ কাজ করতে চান।
মানুষের জন্যে কাজ করতে মানবিক মানুষেরা চান একটি নির্ভরযোগ্য উদ্যোগ। মিডিয়া উদ্যোগ নিয়ে দেখুক। দেখবেন অনেক ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার পৌঁছে দিতে পারলে আপনার নিজেকেই নিজের কাছে দেবতার মতো লাগবে।
দেবতা বলে আলাদা কিছু নেই। মানুষের কাজে মানুষের মধ্যেই দেবতার সৃষ্টি হয়। মানুষকে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিতে পারলে তাকে ঘরে রেখে চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারলে মানুষ ঘরে থাকবে। বেরুবেনা।
এই করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সংক্রমন প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে রাখা বড় দরকার। মানুষকে ঘরে রাখতে পারলে এই যুদ্ধ জয়টা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এই যুদ্ধটা মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক সহজ এবং সফলভাবে করা সম্ভব।
প্লিজ, উদ্যোগটা নিন। এখন আমাদের পুলিশের সদস্যদেরও অনেক বেশি সহায়তা করা দরকার। স্বজনহীন শহরে তারা মানুষকে সহায়তা করতে গিয়ে নীরবে তারা মহামারীতে সংক্রমনের শিকার হয়ে যাচ্ছেন।
তাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে একটু ভালো খাবার যদি নিয়ে যাওয়া যায়, একটু ফুল যদি দিয়ে আসা যায়, দেখবেন আপনার ভালোবাসায় তিনি প্রশান্তিতে কাঁদবেন। ভালোবাসার কান্নার এমন প্রশান্তিতেও তারা-তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
এমন আমরা সামান্য সামর্থ্যবান প্রত্যেকে যদি একজন করে প্রতিবেশী রিকশা চালক, একজন সিএনজি বা বাস-ট্রাক চালক বা সহকারী, একজন দোকান কর্মচারী বা একজন মিন্তি বা ফুল বিক্রেতা যাদের কাজ নেই, খাবার নেই, ভরসা নেই তাদের ভরসা সৃষ্টির জন্য যদি উদ্যোগ নেয়া যায়, সে উদ্যোগ যদি নেয় কোন মিডিয়া আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। শুরু করুন প্লিজ।