বুনন শিল্পী – বাবুই পাখি

আমার একান্তই প্রিয় একটি পাখির নাম হলো “বাবুই পাখি”।

ছোটবেলায় যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃভ্রমণে বের হতাম তখন মুগ্ধ হয়ে যেতাম।বাড়ির সামনের তালগাছগুলোতে এই পাখিদের অসাধারন বুনন করা বাসা দেখে মনে হতো সারাটি দিন শুধু তাকিয়েই থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই পাখিগুলো এখন নিশ্চিহ্ন প্রায়।

বাবুই পাখিদের অসাধারণ বুনন কাজঃ এই পাখিরা বাসা বানানোর জন্য খুব পরিশ্রম করে থাকে।এদের বাসাগুলো উল্টানো কলসির মতো মনে হয়।এরা ঠোঁট দিয় ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে(পালিশ করে) গোল অবয়ব মসৃণ করে।দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে।

ছোটবেলায় দাদুর কাছে শুনতাম এই পাখিরা রাতে তাদের বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে এনে বাসায় রাখতো।এই পাখিদের অসাধারণ বুনন কৌশল আমাকে আজও শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়।

নিশ্চিহ্ন হওয়ার কারনঃ ইন্টারনেটে অনেক খোঁজার পর জানতে পারি এদের হারিয়ে যাওয়ার কারন।বাবুই পাখিদের বাসা করার জন্য প্রয়োজন হয় নলখাগড়া ও হোগলার বন। কিন্তু দেশে নল ও হোগলার বন অনেক কমে গেছে। তা ছাড়া এই পাখিরা যেখানে বাস করে—(নল ও হোগলার বনে)—সেখানে মানুষের চলাচল থাকে। তাই এরা ক্রমশ আরও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।


ছবি তুলেছেন লেখক হাসান আল সাকিব

ইতিকথাঃ গত দুবছর ধরে আমি এই পাখিদের খুঁজে বেড়াচ্ছি।অবশেষে ৩০ এপ্রিল ২০১৯ সালে খিলাবাজার “ডাকাতিয়া” নদীর তীরে একটি তালগাছে এই পাখিদের দেখতে পাই।মনটা খুবই আনন্দিত হয়। শৈশবের দেখা তালগাছগুলো এখনো আছে,কিন্তু নেই আর “বাবুই” পাখিদের বাসা।গাছগুলোকে কেমন অসম্পূর্ণ লাগে এখন।

আজ একটা কথা ভেবে অনেক খারাপ লাগছে যে,আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই পাখিগুলো ডাইনোসরের মতো কাল্পনিক প্রানীতে পরিণত হবে।

লেখার সাথে ছবি গুলি তুলেছেন লেখক হাসান আল সাকিব নিজে।