মনে হয় এইতো সেদিন পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম, গাছে গাছে ছড়তাম, বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে ঝড়ে আম কুড়োতাম,বিকেল বেলায় মাঠে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বউচি, ক্রিকেট খেলতাম,আর ঘরে এসে মায়ের বকুনি খেতাম। সন্ধ্যার পর হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তে বসতাম,আহা সেই দিনগুলো কতোই না মধুর ছিলো। পুকুরে কতো হৈচৈ করে গোসল করতাম,সাঁতার কাটতাম। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদায় গড়াগড়ি করতাম। ভোরবেলা হলে মক্তবে যেতাম আরবি পড়তে। শীতের সকালের সেই পিঠেফুলি আর খেঁজুর রস যেনো এখনো মুখে লেগে আছে।সেই দিনগুলো শৈশবের স্মৃতি সত্যি কখনো ভুলা যায়না,সারাক্ষণ মনের অন্তরালে গেঁথে থাকে আর চোখের কোণে ভাসে,প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আমরা সবাই বড় হয়ে যাই,নিজ নিজ প্রয়োজনে সংগ্রাম করে যাই,তবুও কি শৈশবের স্মৃতিগুলো কখনো ভুলতে পারি? না পারিনা।
শৈশব এমন একটা সময় ছিলো,যখন ছিলো না কোনো চিন্তা,ছিলোনা কোনো সংগ্রাম, ছিলোনা পরিবার আর সমাজের মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াই! শুধু ছিলো খেলাধুলা, মা বাবার আদর শাসন, খুনসুটি আর বেহায়াপানা। সত্যি আজ বারবার মনে হয় ছেলেবেলা টাই বুঝি জীবনের সুন্দর সময়! যতো বড় হচ্ছি ততই টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে। শৈশবকালই ছিলো রূপকথার ঠাকুরমার ঝুলির গল্পের মতো। সেই দিন আর কখনোই ফিরে আসবেনা। চাইলেও সেই সময়ে আর যেতে পারবো না,তবুও সেই স্মৃতি মনে করে মাঝে মাঝে আবেগে আপ্লুত হয়ে যাই। কখনো মিটমিটে হাসি আবার কখনো চোখের কোণে আপনা আপনি জল আসে। জীবন সংগ্রামে যখন খুব ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন মানবমন শৈশবে ফিরে যেতে চায়।
এমন কোনো মানুষ নেই যে শৈশবকে ভালোবাসে না। সবাই শৈশবের দিনগুলোকে ভালোবাসে,মিস করে, আর সেই দিনে ফিরে যেতে চায়। ছেলেবেলা অন্তরে গেঁথে থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। আর মানুষের শৈশবের স্মৃতিগুলোই বেশি মনে থাকে এবং মনে পড়ে। তাইতো গ্রামের শৈশবের স্মৃতিগুলো মনকে কাঁদিয়ে দেয় আজও। আজও সেই স্মৃতিগুলো চোখে,ভাসে।
লেখক ও সমাজকর্মী