আজ সারাদিন ফেসবুকে ভাইরাল কক্সবাজারে পঙ্গপাল। সেই আলোকে তথ্য অনুসন্ধান করতে যেয়ে যা পেয়েছি তা আপাতত আশাজাগানিয়া।
এখন আমাদের জানতে হবে পঙ্গপাল কি?
পঙ্গপাল হলো ঘাস ফড়িংয়ের একটি জাত। ঘাস ফড়িং একা থাকতে পছন্দ করলেও পঙ্গপাল দলবেঁধে উড়ে চলে। সাধারণত একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। একটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না।
আজকের কক্সবাজারের যে বিষয়টি ভাইরাল হলো তা নিয়ে যদি আলোচনায় আসি প্রথমে আপনাদের বলতে চাই, যেটি দেখা গিয়েছে এটি ঠিক পঙ্গপাল না অর্থাৎ Locust নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে এটি Stripped Grasshopper বা locust এর কোন migratory subspecies হতে পারে যার origin ভারত বা মিয়ানমারে। আমরা যারা কৃষি বিজ্ঞানের ছাত্র আমাদের Entomology Insect Box করতে হয় এগুলো বহু আগেই আমরা লোকালয়ে দেখিছি। এটাও সত্য Locust (পঙ্গপাল) কিংবা এদের subspecies বা Stripped Grasshopper এগুলো একই গোত্রীয়। মানে চাচাতো ভাই কিংবা খালাতো ভাই এই ধরনের।
আমাদের সবাই উদ্বিগ্ন না হয়ে একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত কোথাও একসাথে দলবেঁধে থাকা অবস্থায় এমনটা আরো কোথাও দেখা দিলে সাথে সাথেই উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে অতিদ্রুত অবহিত করুন। কীটতত্ত্ববিদদের মতে একা থাকলে এই পঙ্গপাল বেশ নিরীহ প্রাণী, কিন্তু দলবদ্ধ অবস্থায় এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী।
সাধারণত আবহাওয়া জনিত কারনে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া, সুদান, কেনিয়া অঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণ নিয়মিত হয়। পঙ্গপাল মূলত মরুভূমির প্রাণী এবং এরা উষ্ণ আবহওয়া ছাড়া জন্মায় না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ভারত এবং পাকিস্তানের রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশে যে স্বল্প পরিসরে আক্রমণ হয়েছিলো সেখানে কিন্তু মরভূমি রয়েছে। সাধারণত অনাবৃষ্টির পর দ্রুত ফসলের বর্ধন হলে তখন পঙ্গপালের মস্তিষ্কে থাকা serotonin তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনের সূত্রপাত করে। ফলে তারা প্রচুর পরিমানে ও দ্রুত জন্মদান শুরু করে। তখন তারা একত্রে থাকে, যখন তাদের সংখ্যা বেশি হয় এবং তারা যাযাবর হয়ে পরে।
যেহেতু, আমাদের দেশে মরুভূমি নেই এবং অতি উষ্ণ আবহাওয়া কম বিরাজ করেএবং শীতকাল সহ সারাবছর ধরেই কম বেশি বৃষ্টিপাত হয় সেহেতু আবহাওয়া জনিত একটা সুবিধা প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের রয়েছে। এছাড়াও আরেকটা আশার জায়গা হলো আফ্রিকান উপদ্রবপীড়িত অঞ্চল হতে আমাদের এই অঞ্চলে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগর এইদিক থেকেও আমাদের বাংলাদেশ ভৌগোলিক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়াও নিকটে অতীতে আমাদের দেশে Grasshopper ধারা ফসলের ক্ষতির কোন ইতিহাস নেই।
তবে, পবিত্র কোরআনের সূরা আল-আরাফের ১৩৩ নং আয়াতে বর্ণিত আছে,
فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلْجَرَادَ وَٱلْقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَٰتٍ مُّفَصَّلَٰتٍ فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।
উক্ত আয়াত অনুসারে সত্যিই যদি মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের স্বীয় পাপের জন্য বিরাগভাজন হয়ে যান তাহলে এই আবহাওয়া, ভৌগোলিক কারন এসব তুচ্ছ। আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিক, জাতিকে রক্ষা করুক আজাব থেকে।
কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কচুয়া, চাঁদপুর।