ইবরাহিমের স্বপ্নে দেখা দিলেন দয়াময়
প্রিয়বস্তু সঁপে দিয়ে করো প্রভুর মন জয়৷
চিন্তার রেশ ললাটে তাঁহার
ঘুরেফিরে প্রতিক্ষণে
কত বস্তু কত প্রিয়জন দানিব কোনটা বিনে?
লাগাতার খোয়াব দেখিতে লাগিলেন
কাটেনি শঙ্কা-ভয়
অবশেষে ঘোর কাটিল আপোষে করিবে
সবচেয়ে প্রিয় ক্ষয়৷
ইসমাঈলের চাইতে কেবা
হতে পারে প্রিয়জন
অনেক যাচনা-সাধনার ফল ছোট্ট পুত্রধন৷
অটল নবী হুকুম খোদার জান দিবে কোরবানি
হোক না সেটা নিজের বেটা তবু কেন হয়রানি!
বৎস আমার! খোদার হুকুম পালন করিবে তুমি
কোনো ইচ্ছা শেষ কিচ্ছা-
আছে কি তোমার শুনি?
শিশুনবী কহে, প্রভু আমায় বেছে নিয়ে সন্তুষ্ট
বিধাতার তরে প্রাণ সঁপিবো
কতই না সুমিষ্ট!
দৃঢ়চিত্তের কথা শুনিয়া বাবা হলেন আহ্লাদ
একেই বলে অমূল্য ধন নবীর আওলাদ৷
হাজেরা বিবি অশ্রুজলে সাজিয়া ইসমাঈল
মিনার ময়দান যাবে প্রস্তুত হলেন ইবরাহিম৷
যাত্রা শুরু করিলেন উভয়
নেই কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব
পথিমধ্যে কর্ণকুহরে বীষ ঢেলে ইবলিশ
পুত্রকে আজ আটক করিতে ইন্দ্রজালের মন্দ৷
অটল অবিচল দৃঢ় পদধ্বনি হাঁকাতে ইসমাঈল
টনক নড়েনি কিঞ্চিত, ছুড়ে দুষ্টের পিঠে ঢিল৷
সেই হতে আজো হজ্জ্ব কাফেলা
ছুড়ে ইবলিশ গর্দানে
করে প্রস্তরাঘাতে অসুর দমন
মিনারের ময়দানে৷
হাতে খঞ্জর দেহপিঞ্জর প্রাণবায়ু যাবে উড়ে
রবের হুকুম- ঈমান পোক্ত
উভয় অবিচল দাঁড়িয়ে৷
হাত-পা, চোখে শক্ত বাঁধন পুত্র শোয়ায়ে
দিবে বিসর্জন বিধাতার তরে
সন্তোষ বিনিময়ে৷
তাকবীর ধ্বনি আল্লাহু আকবার
জিগির সগৌরবে
হস্তবলে খঞ্জর তলে প্রিয়পুত্রের গ্রীবাদেশ
ত্যাগের মহীমা উদ্ভাসিত
শুধু বিধাতার ধ্বনি রবে৷
যাও যাও মালাইক! বেহেশত হতে
আনিয়া দাও গো হাইওয়ান
আরশ কাঁপিয়া বলিলেন খোদা-
নবীকে করোনা পেরেশান
পূর্ণ করেছে পরীক্ষা আমার
বলি হইবেনা ইনসান৷
জীবরাইল ছুটে এক নিমিষে হাজির পয়গম্বর
স্বর্গ হতে দুম্বা সমেত ইসমাঈল পরিবর্তে
একটি পশমও পড়েনি কাটা হতে দেহচত্বর
কোরবানি হলো স্বর্গপশু হুকুম অবিনশ্বর৷
সেই হতে ইসমাঈলকে ডাকিলেন আল্লাহ
আত্মত্যাগের এক গৌরব নাম ‘যবিহুল্লাহ’৷
ইবরাহিম ডাকে প্রভু আমার!
তোমার তরেই সব
যেদিন তুমি বাঁচিয়েছো জান
হতে নমরুদ অগ্ন্যুৎসব৷
আল্লাহ বলেন, উঠো উঠো নবী
কেঁদোনা তুমি আর
পুত্র বিসর্জন কবুল হল রবে ইতিহাস উপমার৷
আমার জন্যে ত্যাগ করেছো
দিয়ে প্রিয়ধন কোরবানি
এই অসিয়ত পূরণ করিবে পরের বংশধ্বনি৷
আজ হতে চিরঅম্লান রবে
ত্যাগের এই মহিমা
স্বর্গপুষ্ট হবে তারা আত্মত্যাগে বলীয়ান যারা
স্মরণ করিবে উপমা৷
সেই হতে আজো সগৌরবে রয়েছে এই রীতি
ঈদুল আযহা নিয়ে আসে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি৷
দেওয়ান মোঃ ছাইফুদ্দিন৷ বাবার নাম মাওঃ ছালাহউদ্দিন দেওয়ান ও মায়ের নাম ছালেহা খাতুন৷ চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলা, ফরক্কাবাদ গুলিশা গ্রামের দেওয়ান বংশের সন্তান৷ বর্তমানে অনার্স করছেন চাঁদপুর সরকারী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে৷ ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি কবিতা, গজল-সংগীত ও আর্টিক্যাল লেখার প্রতি বেশ ভালোলাগা কাজ করে৷ বলতে গেলে, বরাবরই বাংলা সাহিত্যের প্রতি একটা ঝোঁক রয়েছে তার৷