রিয়াদ কে শাহীন ফেসবুকে একটা এ্যালামনাই ক্লাব বানাতে বলতেই রিয়াদ বলে উঠল – “ দোস্ত, মজা লইস না তো! আমি আছি আমার জ্বালায়! তুই ক্যামনে এক হাতে এত কিছু সামাল দিস সেই মন্ত্র টা জানার জন্যই তোকে আজ এখানে ডেকেছি।“ শাহীন হাসতে হাসতে তাই বলেই ফেলল- “তাই তো বলি শালা তোর মত এত কৃপণ ক্যামনে আজ আমারে এই ৫ তারকা হোটেলে দাওয়াত দিয়েছিস! আমি ভাবলাম বড় কোন সমস্যা হয় নাই তো!
রিয়াদ একটা বহুজাতিক কোম্পানীর উচ্চ পদস্থ পদে আছে প্রায় ১৫ বছর। এ ১৫ বছরে তার সাথে গড়ে তার টীমের সদস্যরা মাত্র ৯ মাস করে কাজ করেছে। অথছ এরাই অন্য প্রতিষ্ঠানে একটা যৌক্তিক সময় ধরে কাজ করে চলছে বেশ সুনামের সাথে। তার মাঝে প্রায় ২৫% সদস্য তাকে কোন রকম আগাম বার্তা না দিয়েই জব ছেড়েছে যা তাকে একাধারে যেমন কষ্ট দিয়েছে তেমনি ভেতরে ভেতরে সে এক প্রকার অপমানিত বোধ করেছে যার চক্র থেকে সে বহুবার চেষ্টা করেও বের হতে পারে নি।
রিয়াদ কফি খেতে খেতে শাহীন কে বলেই ফেলল, দোস্ত কি করি বলতো? একটা উপায় বল না প্লিজ! রিয়াদের এমন অসহায়ত্ব দেখে শাহীন বলেই ফেলল – আচ্ছা বলতো তুই অফিসে কি কাজে এত ব্যাস্ত থাকিস? “ মানে কি ? শালা আমার উপর আমার কোম্পানীর পুরা দায়িত্ব। আমি কি কাজে ব্যাস্ত থাকি এইটা তুই কি বললি ? “ শাহীন একটু মুচকি হেসে বল্ল- “তুই ক্যাম্পাস লাইফের মত রিএক্টীভই রয়ে গেলি! মনে রাখবি কর্পোরেট লাইফটা কিন্তু পুরোই আলাদা।“
আসলে আমি অফিসে সারাটা দিন ব্যাস্ত থাকি। প্রায় ২০০ ই-মেইলের জবাব আমাকেই দিতে হয়, সারাদিন কমপক্ষে ৫-৬ টা মিটিং এ থাকতে হয় তাছাড়া আমার ১০-১২ জনের টীমের প্রত্যেকের নানা সমস্যার সমাধান দিতে হয়। শুধু কি তাই? রিয়াদের কথার মাঝখানে শাহীন তাকে থামিয়ে বল্ল – “দোস্ত তোর সমস্যা আমি বুঝে গেছি। তুই শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দে – তোর ডেপুটি কয়জন? আই মিন তোর ইমিডিয়েট সাকসেসর?” এ কথা বলতেই রিয়াদের ফরসা মুখটার মাঝে একটা আষাঢ় মাসের মেঘ ভর করে বসল। সে উত্তরে বলল – “সে ভাবে বলতে গেলে এখনো তেমন কাউকে গড়ে তুলতে পারি নাই দোস্ত”।
শাহীন এবার রিয়াদ কে বলল – শোন, আমি যদি তোকে ১ কোটি টাকা দিয়ে বলি তুই একটা ব্যাবসা শুরু করবি আর আগামী ৫ বছর পর এই ১ কোটি টাকা তুই আমাকে ২ কোটি টাকা করে দিবি তাহলে তুই কিভাবে তা করবি?
রিয়াদ এবার শাহীনকে বলেই ফেলল – “ইটস এ সিম্পল ম্যাথ ম্যান! আমি যে ব্যাবসা শুরু করবো সেই ব্যাবসার বাজার সম্পর্কে যাদের খুবই স্বচ্ছ ধারনা আছে তাদের নিয়ে একটা টীম বানাব। তাদের থেকে এমন একজনকে আমার ডেপুটি বানাব যার উপর আমার অগাধ আস্থা আছে। তাকে একাধারে অথরিটি ও রেস্পন্সিবিলিটি দিয়ে দেব। মাঝে মাঝে টীম কে নিয়ে মিটিং করব। বেস্ট পারফর্মারকে স্পেশাল গিফট দিব। টীমের মাঝে কোন গ্যাপ দেখলে তা ইমিডিয়েট সল্ভ করব। স্পেশাল কারো স্কিল গ্যাপ থাকলে ট্রেনিং এ পাঠাবো। তুই তো জানিস ব্যাবসায় টিকে থাকতে টীমের ট্রেনিং এর বিকল্প নেই। তোর মনে আছে না “মাই উইন্ডোতে” থাকা কালীন আমাদের দুজন কে ট্রেনিং এর জন্য থাইল্যান্ড পাঠিয়েছিল। অভারঅল আমার ভূমিকা থাকবে মূলত একজন কোচ এর মত। দেখিস না, সিনিয়র খেলোয়াড়রা একটা সময় পর কোচ হয়ে যায়। মাইক্রো ম্যানেজমেট থেকে তারা বেরিয়ে আসে।
শাহীন এবার হো হো করে হেসে বলে উঠল – “ তুমি শালা সবই বুঝ! শুধু একটা কথাই বুঝ না যে, তোমার উপর কোম্পানী একইভাবে ইনভেস্ট করতেছে তার ব্যাবসা বাড়ানোর জন্য। কোম্পানীর ব্যাবসাটাকে নিজের ব্যাবসার মত করে ভাবো আর টিপিক্যাল মাইন্ডসেট থেকে বের হয়ে ঐ “কোচ” কন্সেপ্ট এ আস। টীমের ডেপুটি তৈরি করে তাকে প্রসেস ওনার বানিয়ে দাও। দেখবে অফুরন্ত সময়ও পাবে আর কাজটা উপভোগ করবে। ব্যাবসাও প্রসারিত হবে তার আপন গতিতে”।
রিয়াদ খাবার বিলটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভেবে উঠল – “ সবই তো আমি জানি। নতুন তো শাহীন কিছুই বলল না। বিল টা কি একটু বেশিই হয়ে গেল??? শাহীন তার ওয়ালেট থেকে কার্ড বের করে বিল দিয়ে রিয়াদ কে বলে উঠল – “মামা তুই আরেক দিন বিল দিস।“
লেখক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মী