সামাজিক যোগাযোগ ও আমাদের রুচিবোধ

সম্পর্ক ছাড়া জীবন প্রায় অসম্পূর্ণ। আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে – যেমন স্কুল, কলেজ, দেশ, ধর্ম এমনকি স্থান ভেদে বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হই । বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সময়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে একই ছাদের নিচে খুঁজে পাই। আবার কখনো চলতি পথে আমাদের নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। তাদেরকে আমাদের জীবনের ভালো-মন্দ ও দৈনন্দিন আপডেট জানাতে আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একত্রিত হই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যোগাগোগের সুবিধা-অসুবিধা আছে যা সম্পূর্ণ নির্ভর করে কিভাবে আমরা তা পরিচালনা করছি। আমরা অনেকসময় দৈনন্দিন ছবি, ভিডিও, মন্তব্য, আরও বিভিন্ন জিনিস শেয়ার করি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ছবি, ভিডিও, এমনকি আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো দেখে বিভিন্ন স্তরের মানুষ বা আমাদের সাথে সংযুক্ত ব্যক্তিগণ (হতে পারে তারা ছোট অথবা বড়) তারা আমাদের সম্পর্কে একটা ধারনা করে নেয়। আমাদের রুচি, ব্যক্তিত্ব সবকিছুই প্রকাশ পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উপস্থিতির জন্য। অনেকসময় আমাদের অজান্তেই মানুষের মনে আমাদের সম্পর্কে একটা ধারনার সৃষ্টি হয়। আর এই ধারনাটা তাদের মধ্যে একসময় এমনভাবে বসে যে আমারা আমাদের প্রকৃত রূপটা তাদের কাছে প্রকাশ করতে মাঝে মাঝে ব্যর্থ হই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় আপনি কি করছেন এটা যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি কাদের জন্য করছেন, কেন করছেন এবং কিভাবে তা করছেন তাও গুরুত্ব পায়। আপনার হয়তো অনেক অনুসারী(ফলোয়ারস) আছে বা আপনিও হয়তো কাউকে অনুসরন(ফলো) করছেন এই দুটি পক্ষই আপনাকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে। সেই কারনে আপনার প্রফেশনাল জীবনে অনেকসময় সুবিধাও হতে পারে, আবার এর বিপরীতও হতে পারে। মানুষের সঙ্গ দেখলেই যেমন মানুষটির সম্পর্কে একটা ধারনা করা যায়, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় আপনি কাদের অনুসরণ করছেন বা বন্ধু হিসেবে মেনে নিচ্ছেন সেটি অনেক গুরুত্ব পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিভিন্ন পেইজে কোথায় আপনি লাইক দিচ্ছেন তা মানুষের চোখে পরে এবং মানুষ আপনার রুচি বোধ সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় বিভিন্ন ধরনের অপশন আছে, আপনি চাইলে আপনার কোন ছবিগুলো বা কোন ভিডিওগুলো একান্তই আপনার বন্ধুমহলে শেয়ার করবেন তা আপনার বন্ধু বা আপনার সাথে সংযুক্ত যারা আছেন তাদেরকে বিভিন্ন গ্রুপে করে তারপর আপনি যখন শেয়ার অপশনে যাবেন তখন শুধুমাত্র ওই গ্রুপটার কাছে শেয়ার করতে পারেন। এতে আপনার সম্পর্কে সবার নেতিবাচক ধারণা নাও হতে পারে।
আমরা সবাই সামাজিক জীব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বন্ধুদের মাঝে নিজেকে জানানোর জন্য সবধরনের ব্যবস্থাই সেখানে আছে। আপনি সঠিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার রুচিবোধ, একান্ত গোপনীয় জিনিসগুলো আপনার গোপনীয় গ্রুপদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। আমরা অনেকসময় যে ভুলটা করি, কোন জিনিসটা আমরা প্রাইভেটলি শেয়ার করব বা পাবলিকলি শেয়ার করব সেই জিনিসটির পার্থক্য আমরা করতে পারি না। আপনার একান্ত ব্যক্তিগত যেটা অনেকসময় সামাজিকভাবে কুরুচিপূর্ণ হতে পারে তা আপনি একান্তই ব্যক্তিগতভাবে শেয়ার করতে পারেন কিন্তু তা কখনই পাবলিকলি শেয়ার করা সমীচীন হয় না। এতে করে যারা আপনাকে শ্রদ্ধা করত, আপনাকে নিয়ে গর্ব করত তারাই এখন আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা বা হাসাহাসি করে হয়তো সেটা কোন মন্তব্যের মাধ্যমে আপনাকে নাও জানাতে পারে। এইক্ষেত্রে আপনি পাবলিকলি কিছু দেওয়ার আগে আপনার কাছের কিছু মানুষের কাছে শেয়ার করে তা আসলেই দেওয়া ঠিক হবে কিনা তা যাচাই করে নিতে পারেন। আর আপনি যদি মনে করেন আপনার ফেসবুকে আপনি কি শেয়ার করবেন সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার, তাহলে আপনি সামাজিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অপব্যবহার করছেন। এতে দিনশেষে আপনার রুচিবোধ, মূল্যবোধ, শালীনতা এমনকি আপনার সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা পোষণকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এসকল হাস্যকর জিনিস শেয়ার না করে, আপনার পরিচিত মহলে সবার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনি নিজের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরবেন এবং অন্যদেরকেও আপনার সুচিনন্তিত মতামতগুলোতে উৎসাহ প্রদান করবেন। তাতে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার আপনি নিশ্চিত করতে পারেন। অন্যথায় সামাজিকভাবেই আপনি পরিনত হতে পারেন এক অসামাজিক জীব হিসেবে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গরে উঠুন সামাজিক জীব হিসেবে, অসামাজিক হাস্যকর পাত্র হিসেবে নয়।