সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে,ঘুমের অভাব খুব বেশি হলে মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে। এর অর্থ হলো মস্তিষ্কের কোষগুলো বর্জ্য ধ্বংস করে যেসব কোষ,তারা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার জন্য ঘুমের বিকল্প নেই -এটা আমরা জানি। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন সারাদিনে জমা হওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলো পরিষ্কার হয়। এতে ঘুম থেকে উঠার পর মস্তিষ্ক আবার ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
মস্তিষ্ককে পরিষ্কার রাখার এই কাজের একটি অংশ হলো মাইক্রোগ্লিয়া কোষ গুচ্ছ,যারা স্নায়ুতন্ত্রের বর্জ্য, ক্লান্ত এবং মৃত কোষের বর্জ্য পরিষ্কার করে। আরো একধরনের কোষ অ্যাস্ট্রোসাইট মস্তিষ্কের বেশ কিছু কাজ একসাথে করে। এদের অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটি হলো মস্তিষ্কের অপ্রয়োজনীয় সিন্যাপ্সগুলোকে ছেঁটে ফেলা।
নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষনায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় চারদল ইঁদুরের ওপর। প্রথম দলকে ইচ্ছেমতো ঘুমাতে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দলকে সময়মতো ঘুম থেকে উঠানো হয়। তৃতীয় দলকে অতিরিক্ত আট ঘন্টা জাগিয়ে রাখা হয়। আর চতুর্থ দলকে জাগিয়ে রাখা হয় টানা পাঁচদিন।
আরাম করে ঘুমানো ইঁদুরের মস্তিষ্কে অ্যাস্ট্রোসাইট সক্রিয় ছিলো ৬ শতাংশ সিন্যাপ্সে। আট ঘন্টা ঘুমানো ইঁদুরে ৮ শতাংশ সিন্যাপ্সে সক্রিয় ছিলো অ্যাস্ট্রোসাইট। আর পাঁচ দিন না ঘুমানো ইঁদুরে ১৩.৫ শতাংশ সিন্যাপ্সে অ্যাস্ট্রোসাইট সক্রিয় ছিলো। তার অর্থ হলো ঘুমের অভাবে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে অ্যাস্ট্রোসাইটগুলো।
“ঘুমের অভাব হলে সিন্যাপ্সের কিছু অংশ খেয়ে ফেলে অ্যাস্ট্রোসাইট, এটা আমরা প্রথম বারের মতো দেখাতে ফেরেছি” বলেন এই গবেষণার নিউরোসায়েন্টিস্ট মাইকেল বেলেসি। তবে ঘুমের প্রচন্ড অভাবের সময় এ প্রক্রিয়াটি উপকারী নাকি অপকারী সেটা তারা নিশ্চিত করে বলেন নি।
তবে যে ব্যাপারটি বেশি দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে তা হলো মাইক্রোগ্লিয়ার কার্যক্রম। তারা অতিরিক্ত ঘুমের অভাবের ফলে সক্রিয় হয়।আর এর সক্রিয়তা থেকে দেখা দিতে পারে অ্যালঝেইমার্স এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা ক্ষয় হওয়ার রোগগুলো।
গবেষকেরা লেখেন – অতিরিক্ত ঘুমের অভাব মাইক্রোগ্লিয়ার কোষকে সক্রিয় করে এবং তাদের ফ্যাগোসাইটিক কাজে অনুপ্রেরণা দেয়, নিউরোইনফ্লামেশনের কোনো বড় লক্ষণ ছাড়াই। এ থেকে বোঝা যায় বড় সময়ের জন্য ঘুমের অভাব মাইক্রোগ্লিয়াকে প্রভাবিত করে এবং অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে মস্তিষ্ককে সংবেদনশীল করে তোলে।
সবচাইতে জটিল অঙ্গ মস্তিষ্ক প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে নিজেকে তৈরি করছে, শক্তিশালী হচ্ছে আর ভাঙ্গাগড়ার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।এটি একটি অসীম প্রক্রিয়া যেখানে কিছু কাঠামো ভাঙ্গে আর কিছু নতুন করে তৈরি করে। এ নিয়ে আরো গবেষণা হলে বোঝা যাবে অ্যাস্ট্রোসাইট এবং মাইক্রোগ্লিয়ার সক্রিয়তা মস্তিষ্কের ওপর আসলে কি প্রভাব রাখে। তবে তা জানা পর্যন্ত যথেষ্ট ঘুমানোটাই নিরাপদ।
লেখক ও সমাজকর্মী