[লেখাটি সমাজের সামাজিক অবক্ষয় গুলি তুলে ধরে – সেটায়ার বা ব্যঙ্গধর্মী রচনা। একটু রূপক ভাবে তুলে ধরে লেখা। লেখার প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে মিল থাকলে তা হবে কাকতালীয়]
আমার বাবা মা – অভাবের সংসার – নুন আনতে পান্তা না পুরালেও – স্বচ্ছল নয়। আমাকে লেখা পড়া শিখিয়েছে, সুযোগ পেয়েছি বাইরে এসে লেখা পড়া করার। হয়তো বউকেও নিয়ে এসেছি সাথে। দু’একটা বাচ্চা হয়তো সাথে আছে আমার।
আমার ফেইসবুক কি আমার বাবা, মা, ভাই বোন আছে? আমার পুরানো নিকট বন্ধুরা? হয়তো তারা আছে। হয়তো আমার পরিবারের কারো না কারো ছেলে মেয়ে বন্ধুবান্ধব, কেউ না কেউ আছে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে। এগুলি নিয়ে মাথা ব্যথার হবার মতো মাথা আমার নেই। থাকবে কেন?
আমার ফেসবুকে এলে পাবেন, কি ভাবে আমি সপ্তাহান্তে পরিবার নিয়ে আনন্দ করছি। বন, সমুদ্র, গাছপালা, প্রকৃতি দেখছি। বড় বড় হোটেলে থাকছি। থরে থরে খাবার সাজানো – নানান পদের খাবার – কোনো নামি দামি রেস্তোরাঁ তে বসে দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার খাচ্ছি। আহা উহু করে – রোমান্টিক ছবি গুলি পোস্ট দিচ্ছি। মাঝে মাঝে লাইভ ও করছি। আমার পরিবারের কেউ ওই ছবি গুলি দেখে ফেললে আমার কিছু যায় আসে না। আমার সামর্থ থাকলে আমি তাঁদেরকে সাহায্য করতাম।
যুগযুগ ধরে এই মেয়েটা বা ছেলেটার সাথে আমি প্রেম করছি। আমি এখন প্রাপ্ত বয়ষ্ক, চাকরি করি, বিয়ের বয়েস হয়েছে। হয়ত আমিই আমার সংসারের হাল ধরেছি এখন। হয়ত বাবা, মা, ভাই বোন পরিবারের সবাই এখন আমার মাথা উপর। বলতে গেলে বসে বসে খাচ্ছে। এই সমাজের জন্যেই আমি অসহায় – ফেলে দিতে পারি না। সমাজ!
আমি আমার প্রেমের, সম্পর্কের ঘোষণা দিচ্ছি। রোমান্টিক ছবি পোস্ট দিচ্ছি। কভার ছবিতে প্রেমিক বা প্রেমিকা আর আমি। এতে বাবা, মা, ভাই, বোন সামাজিক কারণে লজ্জিত হলে, আমার কি! আমি কারো খাই না পরি? এতো সামাজিকতার সময় কোথায়? আমার কি এই ভালোবাসার মানুষটির সাথে কোনো সামাজিক বন্ধন হয়েছে? যেমন ধরুন পারিবারিক ভাবে আংটি পরানো বা অন্য কোনো ধরণের এনগেজমেন্ট? শুনুন, আমার এই কাজ গুলি পছন্দ না হলে – আমার সাথে পরিবারের এই লোক গুলি না থাকলেও পারে। আমি কি থাকতে বলেছি?
আচ্ছা, আমার ছেলেমেয়ে যদি আমার অনুমতি না নিয়ে – এই একই কাজ গুলি করে – আমি কি নিজেকে ছোট মনে করবো? সমাজের কাছে হেয় হবো? এতো ভেবে কি লাভ? জানি, জানি, এতো ভেবে – লাইলী মজনুর প্রেম হয় না। এই সমাজ আমাকে কিছু না দিলেও – অনেক দেয়ার আছে আমার। আমি আমার টা দিয়েই যাবো।
আর শুনেন, নিজের কাজে মন দেন – আমাকে নিয়ে আর গবেষণা করতে হবে না ! আমি আপনার খাই না পরি?
শ্রদ্ধা।
- পিতা মাতার জন্যে শ্রদ্ধা
- ভাই বোনদের জন্যে শ্রদ্ধা
- পরিবারের জন্যে শ্রদ্ধা
- আত্মীয় স্বজনের জন্যে শ্রদ্ধা
- বন্ধুবান্ধবের জন্যে শ্রদ্ধা
তথা যে সমাজে বাস করছি, সে সমাজের জন্যে শ্রদ্ধা।
ব্যক্তি হিসাবে এটা আমার দায়িত্ত্ব। আমি আমার এই সামান্য দায়িত্ত্ব টুকুন পালন করছি, করছি কি?
এটা নিতান্তই আমার ব্যাপার, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি, আপনারা দূরে থাকুন।
কবি, কথা সাহিত্যিক, মানবতাবাদী, সমাজকর্মী ও আইটি বিশেষজ্ঞ