নিজের জন্য শান্তনা খুঁজতে গিয়েই লেখাটার শুরু। হয়তো লেখাটা আপনার ভালো না ও লাগতে পারে। পড়ার ইচ্ছা হলে – পড়ুন – তবে ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমার এই লেখাটি সবার জন্য নয়। যারা সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন বালা মসিবতে আছেন হয়তোবা তাঁদের জন্য।
বিবাদ শুরুর বিষয় গুলি এমন হতে পারে:
* অসম্মান, অবহেলা, অবজ্ঞা এবং অবিশ্বাস
* আগে তাকে প্রচুর সময় দিতেন – এখন দিচ্ছেন না – কারণ…
* আগে আপনাকে অনেক সময় দিতো – এখন দিচ্ছে না – কারণ…
* কেউ আপনার পিছনে লেগেছে আপনি তাকে সময় দিচ্ছেন না
* সাথে থেকেও আপনার পিছনে কুৎসা রটাচ্ছে
* ধীরে ধীরে আপনজন বন্ধুদের থেকে আপনাকে আলাদা করে দিচ্ছে (obsession)
* ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি
ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক:
আগে একে অপরকে প্রয়োজন ছিল – এখন আর প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক। সম্পর্ক জোর করে হয় না। জোর করে ধরেও রাখা যায় না। এমনকি বৈধ কাগজ ও এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। জোর করলেই বিপদে পড়বেন – কারণ – এখানে এখন আর সেই আগের প্রয়োজনের আন্তরিকতা নেই। একটু বুঝতে চেষ্টা করুন। সম্পর্ক ধরে রাখার দায়িত্ব – সম্পর্কের সাথে জড়িত সবার। আপনিও এই সম্পর্কের একজন। একজন দায়িত্বপূর্ণ সদস্য। মানুষ সব সময় নিজের সমালোচনা নিজে করতে চায় না। শুনতেও পছন্দ করে না। অভিযোগের আঙ্গুল টা অন্য কারো দিকে দিতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। অন্যকে বিচার করার আগে নিজেকে দেখুন। সম্ভব হলে পরিবর্তন এনে সম্পর্কটা আনন্দময় করে তুলুন। যার ভালোবাসার প্রয়োজন তাকে বেছে নিন। ভালোবাসার জন্যে ক্রীতদাস বনে যাবেন না।
সম্পর্ক শেষ মানে – পৃথিবী এখানেই শেষ নয়।
নিজেকে সামলে নিন। নিজের ভালো অভ্যাস গুলি ধরে রাখুন। কাউকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া – কারো ক্ষতি করার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলুন। বিশ্বাস রাখুন সৃষ্টিকর্তার উপর। প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করে না। সুবিচারের সুষম বন্টনের কোন ফাঁকফোকর নেই প্রকৃতির কাছে।
এখন, যখনই আপনি দমে যাবেন। বিবাদ এড়িয়ে যাবেন। ঝামেলায় জড়াতে চাইবেন না। কেউ কেউ হয়তো আপনার ভালো মানসিকতার সুযোগ নিবে। আত্মীয়তার সুযোগ নিবে কেউ কেউ। যত কঠিনই হউক পরিস্থিতি কখনো কাউকে আপনি:
* অসম্মান করে কথা বলবেন না
* কারো ক্ষতি করার চিন্তা মাথায় রাখবেন না
* ব্ল্যাকমেল করবেন না (প্রমান দিয়ে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় না)
* খারাপের সাথে প্রতিযোগিতায় যাবেন না – নিজে মানুষ থাকুন
মানুষ হয়ে মানুষকে শ্রদ্ধা করতে জানা এবং মানুষের আত্মসম্মান নষ্ট করলে আপনি নিজেও বাদ যাবেন না, বুঝতে শেখা
কারো ক্ষতি করে আপনি মহান হয়ে যাবেন না। বরং অন্যের ক্ষতি করার সকল রকম সুযোগ সুবিধা থেকেও – ক্ষতি না করাটা হলো আপনার “ক্ষমতা”। এর চেয়ে বড় ক্ষমতা পৃথিবীতে আর কিছু হতেই পারে না।
কেউ কারো জন্যে পরিবর্তিত হয় না। পরিবর্তন তার ভিতরে আছে বলেই এখন সেটা প্রকাশ পেয়েছে। “তার জন্যে আজ আমি খারাপ হয়েছি – খারাপ হতে বাধ্য হয়েছি” – এমন কথা থেকে বিরত থাকুন। নিজের দিকে তাকান। নিজেকে শুধরে নিন। আপনি খারাপ হতে না চাইলে – কেউ আপনাকে খারাপ করতে পারবে না।
কার সাথে বন্ধুত্ব করবেন:
“আপনি কাদের সাথে মেলামেশা করেন, আমাকে বললে, আমি বলে দিতে পারবো আপনি কোন ধরণের মানুষ। ” – জোহান উলফগ্যাং ভন গোথ
আমি কার সাথে বন্ধুত্ব করতে পছন্দ করবো? যাঁর নীতি নৈতিকতা (ভ্যালুজ) গুলি আমার সাথে মিলবে। যে আমার মতোই মানুষ হতে চায়, থাকতে চায়। যে আমার দুর্বল জায়গায় গুলিতে ভারসাম্য আনতে সব সময় চেষ্টা করবে। আমি মানুষ হিসাবে বড় হবার জন্যে উৎসাহ দিবে, অনুপ্রাণিত করবে। যার সাথে আমার পছন্দ গুলি নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারবো। জ্ঞানের তৃষ্ণা আছে যার। আমার যে কোন উদ্যেগের সঙ্গী হতে প্রস্তুত। যে আমার সাফল্য উদযাপন করবে, ব্যথিত হবে আমার ব্যর্থতায়। আমি চাই সে হবে “গেট-ইট” ধরণের মানুষ। আমি যে বন্ধুত্ব আশা করবো তার থেকে – তা-ই, সেই বন্ধুত্বই তাঁকে দিয়ে যাবো।
বন্ধু হতে পারে:
* যে আপনার জন্য আছে (স্থান, কাল, পাত্র না ভেবে) যে কোনো সময়
* যে আপনার বিচার করে না
* যে আপনাকে ছোট করে না বা ইচ্ছাকৃতভাবে আপনার অনুভূতিতে আঘাত করে না
* যে আপনার প্রতি সদয় এবং শ্রদ্ধাশীল
* আপনি যার সাহচর্য উপভোগ করেন
* যে অনুগত, যার উপর নির্ভর করা যায়
* যে বিশ্বাসযোগ্য এবং আপনাকে সত্যটাই বলতে চায়, এমনকি যখন আপনার শুনতেও কষ্ট হয়
* যে আপনার হাসিতে হাসে – কান্নায় ব্যাথিত হয়
* যে দুঃসময় আপনার সাথে লেপ্টে থাকে সাহায্য দেয়ার জন্য
* যে আপনাকে হাসায়
* যে আপনার যে কোন কথা শোনার জন্য সময় আছে
* যে আপনি যখন কাঁদেন তখন আপনাকে সান্ত্বনা দেয় এবং আপনার শান্তির জন্য নিজের যে কোন কিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকে
একদিন এক লোক বিদ্যাসাগরকে বলল, ‘অমুকে আপনার পেছনে খুব লেগেছে। সারাক্ষণ আপনার নিন্দামন্দ করছে।’
বিদ্যাসাগর বললেন, ‘অমুকের তো আমার বিরুদ্ধে লাগার কথা নয়। আমি তো তাঁর কোনো উপকার করেছি বলে মনে করতে পারছি না।’
কাকে সাহায্য করবেন :
* যার সাহায্যের সত্যিই প্রয়োজন আছে
* যার কোন ধরণের প্রতিদান আপনি আশা করেন না
* যার বেইমানি আপনি নিতে পারবেন
* যার শত্রুতা আপনার সহ্য সীমার মধ্যে থাকবে
* যাকে সাহায্য করে সব ভুলে যাবার মানসিকতা আপনি রাখেন
সম্পর্কের শূন্যতা:- নিজেকে সময় দিন। নিজেকে নিয়ে, নিজের উপর সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। নির্ভরতা কমিয়ে নিন। ভালো সময়ের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করবেন না।
প্রতিশোধ:
বেশির ভাগ আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ মানুষ। নিজে ঠকেছি মনে হলে আর কিছুতেই শান্তি আসে না। পুরু মানুষটাই আগ্নেগীরির মতো জ্বলতে থাকি। জীবন টাই অসহ্য হয়ে যায় – কখন প্রতিশোধ নেবো। অন্য পক্ষের ধ্বংস দেখবো, মুখিয়ে থাকি আমরা।
সবচেয়ে সুন্দর প্রতিশোধ হচ্ছে কারো প্রতি কোনো ধরনের অভিযোগ, অপবাদ, ক্ষোভ, ঘৃণা না রেখে মানুষটাকে ভুলে যাওয়া। জাস্ট ভুলে যাওয়া। শুধু ভাবুন এই মানুষটা আমার কেউ না। কেউ না। তারপর! তারপর দেখবেন আপনার ভেতর আর কোনো খালিস্থান নাই, অস্থিরতা নাই, আক্ষেপ নাই, হতাশা নাই। ধীরে ধীরে সব সয়ে যাচ্ছে আপনার। ভিতরের অগ্নিগিরিটাও নিবতে শুরু করেছে।
বাঁচা এবং বাঁচতে শেখা:
বেঁচে থেকে “না মরে” বাঁচতে পারে কজন? মানসিক অশান্তি নিয়ে বাঁচা মৃত হয়ে বেঁচে থাকার মতোই। প্রফুল্ল পথ বেঁচে নিন, প্রফুল্ল থাকুন। বাঁচার মতো করে বেঁচে থাকুন – শেষ নিঃস্বাশ পর্যন্ত। জীবন আসলেই সুন্দর এবং সুন্দর নির্ভর করে আপনার মানসিকতার উপর।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনোই নিচের আচরণ গুলি এড়িয়ে যাবেন না – না বলুন:
* অসম্মান করে কথা বলা (just kidding টাইপ, কিন্তু সে প্রসঙ্গত বলেছে)
* অকৃতজ্ঞ ব্যাবহার (কি করেছেন?/কারো সাহায্যে নিয়ে চলি না ইত্যাদি)
* অহেতুক আপনার সাথে তুলনা/প্রতিযোগিতা করে কথা বলা
* সকল কাজে আপনার ত্রুটিটাই সামনে নিয়ে আসা
* বিপদে আপনাকে ছেড়ে যায়
* এরোগেন্ট, হিপোক্রেসি আচরণ
অপরাধমূলক কার্যক্রম – মিথ্যা এড়িয়ে চলা:
মিথ্যা এড়িয়ে চললে অনেক অনাগত কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। অনেক সময় আমরা শুভ উদ্দেশ্য মনে রেখে মিথ্যা বলি। সম্ভব হলে পরিহার করুন।
আপনার নামে অনেক খারাপ খারাপ মেসেজ আসতেছে। কে এসব করতেছে, জানেন? আপনি কি তাকে চিনেন? পাঁচ বছর আগে এ ভাবেই শুরু। এবং গুটি কতক কাছের বন্ধুদের কাছে মেসেজ আসতো।
কি ধরণের মেসেজ? না আমি তাকে চিনি না। সত্যি হলো – মেসেজ এবং ব্যাক্তি দুটুকেই আমি চিনি। মিথ্যা বলে সেই বেনামী বন্ধুকে বাঁচাতে চাইলাম।
তার পর পাঁচ বছর পর দেখা গেলো এই পৃথিবীর আর কেউ বাকি নেই – সেই বেনামী ব্যাক্তি টা – সবাইকে মেসেজ দিয়ে তার ষোলোকলা পূর্ণ করে এবার আমার আত্মীয়, নিকট বন্ধুদের কুৎসা করেছে এবং তার এখন বেশ বিরাট একটা গ্রুপ আছে। যারা তাকে বিভিন্নভাবে বানোয়াট তথ্য দিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছে।
প্রথম থেকেই তাকে এবং তার কাজকে সবার চোখের সামনে তুলে ধরলে হয়তো আজ পাঁচ বছর পর এমন অনাকাঙ্খিত অসভ্য অবস্থার সৃষ্টি হতো না। সাবধান! সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিন। সত্য তিতা হলেও, পরবর্তীতে ভীষণ ভাবে বাঁচাবে আপনাকে।
কোথাও কেউ নেই ” আমরা সবাই একা “? না – আমরা কেউই একা নই। আমাদের জন্যে আমরা আছি। আমাদের জন্যে আমরা আমরণই থাকবো। আপনার আপনাকে সঠিক ভাবে ব্যাবহার করুন এবং ভালো থাকুন।
নিজেকে ভালোবাসুন। সবার আগে নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। শান্তি ও স্বস্তি খুঁজে পাবেন। আপনার নিজের মধ্যেই সব লুকিয়ে আছে।
উপসংহার:
বন্ধুত্ব একটি স্বাচ্ছন্দ বোধের সম্পর্ক। মেলামেশা কম বা বেশি, যাই হউক, বন্ধুত্ব থাকে অটুট। বন্ধুত্ব, কি পেলাম, কি দিলাম হিসেবে করে চলে না। বন্ধন থাকে নিরবচ্ছিন্ন, পারস্পরিক, আত্মিক। একটি ভালো বন্ধুত্ব ব্যক্তিগত বিকাশ এবং সুস্থতার জন্য অনন্য। বন্ধুত্ব জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই চরম সত্যটি সকল বিতর্কের উর্ধে। যেখানে সততা, নৈতিকতা প্রধান বিষয়। আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ, সততা, নৈতিকতার উপরই আপনার বন্ধুত্ব নির্ভরশীল। তাই বন্ধুত্বে সততার কোনো বিকল্প নেই।
কবি, কথা সাহিত্যিক, মানবতাবাদী, সমাজকর্মী ও আইটি বিশেষজ্ঞ