প্রশন্নপুর যাবো

ট্রেন ছেড়ে গেছে ভেবেছিলাম
পরে শুনলাম প্রশন্নপুরের ট্রেন এ লাইনে আসেই না!

স্টেশন মাস্টার বড়ই দয়া পরবশ
পড়ন্ত বিকেল হলেও, নিজে এসে শেষে জানিয়েছেন আমায়;

অথচ সূর্য উঠার আগেই আমি যখন টিকেট কিনার খোপে
হাত বাড়িয়ে আধো আলো, আধো ছায়া তেল চিটচিটে গ্রিলে
টিকেটটা হাতে ধরিয়ে – হাতের ঘড়িটা আর মাথার উপর
বিশাল আকাশ টা দেখিয়ে স্টেশন মাস্টার মুচকি হেসেছিলেন!

আপনি মনে হয় স্বর্গ আনতে যাবেন!

মানুষ ও পারে!
তার কি? আমি স্বর্গে না মর্গে! নাক গলিওনা বাবা!!
নিজ কাজে মন দাও – তোমার কাজ তুমি করে যাও তো!!!

আমার বাড়ি থেকে স্টেশন, সে হবে প্রায় ৫ মাইলের কাছাকাছি
যাতায়াত একমাত্র পায়ে হাঁটা – যান চলাচলের উপযুগী এ পথ নয়;
অজ-পাড়াগাঁ, নিকষ কালো অন্ধকার, দুর্গম পথ, দুর্গম যাত্রা, বর্ষার রাত,
ভাগ্যিস জীন ভুতে ভয় নেই তেমন আমার, নেই বিশ্বাস বা অবিশ্বাস
মাথায় শুধু গোমতী – ঠিক যে খানটাতে নদীটা ডাকাতিয়ায় মিশে গেছে।

মধ্যে রাতের পর পরই যাত্রা শুরু করেছি।

সেই যখন থেকে নিজেই নিজেকে কালাপানি, দ্বীপান্তরে পাঠিয়েছি
সেই সাত সমুদ্র তের নদীর পারে – আদিবাসীদের নিজস্ব ভূমিতে
ঠিক সেই থেকেই – সেই থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু প্রশন্নপুরে, ফিরে যাবার।

আমার মা আছেন, আমার বাবা ঘুমাচ্ছেন ওখানে – আমার ভাইয়েরা
আমার বন্ধুরা, আমার জন্মের ঋণ ওই খানে, ওই প্রসন্ন ভূমিতে
আমার চিন্তায় প্রসন্নতা, চেতনায় প্রসন্নতা, প্রসন্নতার স্বর্গ;
শুনেছি চোঁখের জল আসে হৃদয় থেকে বাকি সব মস্তিষ্কে
অথচ আমার হৃদয়টা আজও ভারী হয়ে আছে!

ঝোলা কাঁধে তুলে নিলাম – ফিরতে হবে বাড়ি সন্ধ্যার আগে
আবার অপেক্ষা, আবার অপেক্ষা, আবার অপেক্ষা – আহারে
আমার ভালোবাসার রেল গাড়িটা – সে কোন পথে যায়?
একটু পথের দিশা দিবে, কোথায় সে পথ নির্দেশনা
হায় ভগবান, এ তুমি কাকে বানিয়েছো রেল মন্ত্রী, আমার এই কষ্টের দিনে!

তোমরা কেউ কি জানো ? প্রশন্নপুরের ট্রেনটা ঠিক কোন পথ দিয়ে যায়?
জান কি?