অস্ট্রেলিয়া দলটি কিছুদিন আগেও অগোঁছালো ছিল।কিন্তু ভারত সফর থেকেই হঠাৎ করে বদলে যেতে থাকে অজিরা। ফিরে পায় তাদের সেই পুরনো ঐতিহ্য। বিশ্বকাপ সামনে রেখে পুরো টিমকে শক্তিশালী করে তারা। বিশ্বকাপও তারা শুরু করে অন্যতম ফেভোরিট হিসেবে।
এই বারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলেছে অজিরা। ১টি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। বাকি ৪ ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে অজিরা। সেই অজিদের সামনে এবার বাংলাদেশ।
নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়া।
আর অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলেছে ৫টি ম্যাচ। যার মধ্যে একটি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। দুটিতে বাংলাদেশ জিতেছে এবং হেরেছে দুটিতে।
সেমিফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।বাকি ৪ ম্যাচের মধ্যে অন্তত ৩ টি তো জিততেই হবে। সেই ৪ ম্যাচে কেবল আফগানিস্তান ছাড়া বাকি তিনটিতেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং পাকিস্তান।
যার প্রথমটিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টনটনের মত ট্রেন্টব্রিজেও যদি বাংলাদেশ জ্বলে উঠতে পারে এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিতে পারে, তাহলে সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যাবে বাংলাদেশের। সে অসম্ভবকে কি সম্ভব করতে পারবে টাইগাররা? পারবে কি অস্ট্রেলিয়ার মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দিতে!
অনেকেই হয়তো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলে কেন অস্ট্রেলিয়াকে পারবে না?
তবে সেই কথায় কান দিচ্ছেন না বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।
তিনি বাস্তবেই থেকে গেলেন।বাস্তব অবস্থা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কথা বলেছেন তিনি।
এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হলে তাদের আগের ম্যাচের মত ভালো খেলতে হবে। নিজেদের উজাড় করে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী একটি দল। তাদের বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে অনেক বেশি ধারালো। স্টার্ক, কামিন্সরা বিশ্বমানের ফাস্ট বোলার। তাদের বোলিংয়ে বৈচিত্র্য অনেক বেশি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মূল বোলিং শক্তির গভীরতা ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের ফাস্ট বোলার বেশি এবং প্রতিটা বোলারেরই বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আছে। যেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছিল না।
কাজেই আমি বিশ্বাস করি, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হলে, আমাদের সামর্থ্যের একদম সেরাটা উপহার দিতে হবে।
মাশরাফির কথার মূল ভাবটাই হচ্ছে, টনটনে ক্যারিবীয় দলের যারা বড় স্কোর গড়েছে, তারা কেউই ইনিংসটাকে টেনে ৫০ ওভার পর্যন্ত নিতে পারেননি এবং যখন হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন তারপররপরই আউট হয়ে গেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দলের ওয়ার্নার, স্মিথ এবং ফিঞ্চরা এর ব্যতিক্রম। তারা সেট হয়ে গেলে সহজে উইকেট দেন না। চেষ্টা করেন ইনিংসটাকে শেষ বল পর্যন্ত নিয়ে যেতে।
একইভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররাও বাংলাদেশের বিপক্ষে অনেক বেশি শর্ট বল করেছেন এবং তাদের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শর্ট বল করে ঘুটিয়ে দেয়ার। সেটাতে তারা সফল হয়নি। এর বাইরে বুদ্ধি খাটিয়ে ইয়র্কার লেন্থে বল করার কাজটি করতে পারেননি ক্যারিবীয়রা।
এ কারণেই টনটনে খেলা শেষে সাকিব বলেলছিলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা শুধু দুটি কাজই করেছেন, হয় খাটো লেন্থে বল ফেলেছে না হয় খুব উপরে আমাদের নাগালের মধ্যেই বল পিচে করিয়েছেন। তাতে করে, আমাদের ভালো খেলা একটু সহজ হয়ে গিয়েছিল। বলার অপেক্ষা রাখে না অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা সে কাজটা সহজে করেন না। তারা বলে প্রচুর বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেন। শুধু শর্ট বল করবেন না, তাদের বলে সুইং আছেন, ইয়র্কার করাতে পারেন। তার চেয়ে বড় কথা অজি দলে কোয়ালিটি স্পিনারও আছেন।
এসব মাথায় নিয়েই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া হচ্ছে ওয়ান অব দ্য বেস্ট ক্রিকেট টিম এবং অনেক টাফ অপোনেন্ট। পুরো দলটাই অনেক বেশি পেশাদার। জিততে হলে, এদেরকে ৩০০ বা তিনশর নিচে রাখতে হবে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা অনেক চৌকস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন আমাদের বিরুদ্ধে বড় স্কোরের ভিত গড়েও ৩২০ এর মধ্যে আটকে গিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া তেমন যদি ভিত পায়, তাহলে ৩২০-এ থাকবে না, ৩৫০-এ চলে যাবে। কারণ তারা অনেক বেশি পেশাদার। একবার উইকেটে কেউ সেট হলে লম্বা ইনিংস খেলতে পারে অনেক বেশি।’
মাশরাফির শেষ কথা, ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হলে আমাদের ১০০ ভাগ দিতে হবে। আর অস্ট্রেলিয়া যাতে ৭০ ভাগের বেশি দিতে না পারে। কারণ দু’পক্ষের শক্তি ও সামর্থ্যের ব্যবধান অনেক। এই দুরত্ব কমাতে আমাদের বেশি ভালো খেলতে হবে।সামর্থ্যের সবটুকু মাঠে প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
লেখক, ক্রীড়া সাংবাদিক ও সমাজকর্মী