আমি অসহায় কষ্ট যাতনে
আলো দেখিয়েছি ধরণীর
দশমাস পেটে নিয়ে ঘুরে
সামলে শত কর্ম গৃহিণীর৷
আবার আমি নিজ ভাইকে
করেছি কত স্নেহ
বিপদে-আপদে সান্তনা দিয়ে
পাশে থেকেছি রক্ষীদেহ৷
আমি সমাজের মা-বোন কিবা
কারো আদরের দুলালী
কারোও বা অর্ধাঙ্গিনী-
পরম মমতাময়ী রূপালি৷
এত শত কিছু করেছি অর্জন
বিসর্জন দিয়ে ত্যাগ-তিতিক্ষা
নিজেকে পুড়িয়ে বাঁচিয়েছি প্রাণ
হতে চাইনি তবু সর্বাপেক্ষা৷
চেয়েছি শুধু সন্মান আর
বাঁচার একটু অধিকার
সমাজ আমায় করেছে অবলা
কেড়েছে নারী স্বত্বাধীকার৷
হতে হয়েছে শিকার আমায়
পুত্রের অপমান
বৃদ্ধে এসে ঠাঁই পাই নিকো
নিজ গৃহে আমান
বৃদ্ধাশ্রম যন্ত্রণা কিংবা
জঙ্গলে ফেলা আবর্জনা
নেই মানুষ হিসেবে কোনো সম্মান৷
যখন ছিলাম যুবতী আমি
যৌবনা শাণিত
সয়েছি আমি শত অপমান
ঘৃণ্য চোখে পরিণত৷
রাস্তা-ঘাট আর হাট-বাজার
অফিস, আদালত নেই কোনো ছাড়
চলায় ফেরায় প্রতি কদমে
হয়েছি ললুপ দৃষ্টি শিকার৷
কখনো বা ঘরে, কখনো বাহিরে
স্বামী দ্বারা হয়েছি কিবা
অন্য কাউকে ঘিরে-
হয়েছি নির্যাতিতা
হতে হয়েছে আরো কত কি
উদাহরণ যৌতুক প্রথা৷
সমাজ আমায় শিখিয়েছে
আমি নির্জীব পাথর
প্রতিবাদ করা নেই অধিকার
সয়ে গিয়ে হই কাতর৷
নিজ গৃহেও নিরাপদ নই
জীবন নিয়ে বিব্রত
কখনো আমায় ধর্ষকরূপী করে
হিংস্র থাবায় দেহক্ষত
তাকিয়ে দেখি চারদিকে আছে
হায়েনার দল যত৷
কখনো আমি শিশু-কিশোরী
ফোটেনি জীবন মুকুল
তবু হয়েছি হায়েনার শিকার
প্রাণ হয়ে গেছে নির্মূল৷
সমাজ দেয়নি নিরাপত্তা
আমি খুবলে খাওয়া মৃত
পুড়ে ছারখার হয়েছি কত
নুসরাত-তনুর মত৷
এত বিভৎস চেহারা তবু
ক্ষান্ত নয় কাহিনী
পাষন্ড কেড়ে নিল প্রাণ
কিশোরী হীরা মণি৷
সমাধান কি পাবো মোরা
পার হয়েছে কত প্রমাণ
এভাবে আর অনায়াসে
ঝরে যাবে কত প্রাণ?
আমিতো ছিলাম সন্মান-সম্ভ্রমে
স্বাক্ষী ইতিহাস পূর্বেকার
ধর্ম আমায় দিয়েছে স্বাধীনতা
পূর্ণ করেছে নারী অধিকার৷
মা হিসেবে পেয়েছি আমি তিনগুণ
মর্যাদা স্বীকৃতি
বোন হিসেবে পেয়েছি আমি-
যত্নে বাবা, ভাইয়ের স্মৃতি
বিবি হয়ে আমি অলংকৃত
স্বামী কাঁধে নিয়ে দায়িত্ব
নিরাপদ হয়ে জীবন ধন্য
নারী পরিচয়ে বীরত্ব৷
এখন আবার কটু কথা কয়
ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে
পুরুষ যেন ধোয়া তুলসী
সব দায় ঠেকে নারীর কপাল-
দোষ গিয়ে পড়ে গড়িয়ে৷
এই সুযোগে নামধারী কিছু
নারীচর্চায় ব্রত
পশ্চিমা আজ হাতের মুঠোয়
নীরবে করে দেহক্ষত৷
নারী অধিকার পেতে যদি চাও
ধর্ম দিয়াছে সবি
নতুন তৈরি কোনো ইস্যুতে
দোষ দিওনা ধর্মেরি৷
জীবন কেড়ে জীবন দিবে
আজি এই হোক নীতি
সুষ্ঠু আইন প্রয়োগ করে দিবে
নারী অধিকার স্বীকৃতি৷
আজ হতে আমি সকলের কাছে
সম্মান অধিকারী
“এই পরিচয় না হোক আমার-
আমি অবলা নারী৷”
দেওয়ান মোঃ ছাইফুদ্দিন৷ বাবার নাম মাওঃ ছালাহউদ্দিন দেওয়ান ও মায়ের নাম ছালেহা খাতুন৷ চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলা, ফরক্কাবাদ গুলিশা গ্রামের দেওয়ান বংশের সন্তান৷ বর্তমানে অনার্স করছেন চাঁদপুর সরকারী কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে৷ ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি কবিতা, গজল-সংগীত ও আর্টিক্যাল লেখার প্রতি বেশ ভালোলাগা কাজ করে৷ বলতে গেলে, বরাবরই বাংলা সাহিত্যের প্রতি একটা ঝোঁক রয়েছে তার৷