সজিবের হাতে কারন দর্শানোর নোটিশটা পড়তেই বেচারা হতভম্ব। চাকুরী জীবনে প্রবেশ করতে না করতেই এ চিঠিটার ওজন নেবার ক্ষমতা এখনো তার হয়ে উঠেনি। নিজেকে কেমন যেন অবিভাবক শূন্য মনে হচ্ছে এই অফিসে। মাথার উপর যেন একটা হিমালয় ভর করেছে তার। পাশের ডেস্কে থাকা তুহিন সাহেব সজিবের এ অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলেই ফেল্লেন- “ভাইজান তো মাত্র এক রান করে ইনিংস শুরু করলেন! আমি কিন্তু এ পর্যন্ত চক্কা হাঁকিয়েছি! কিচ্ছু করার নাই ভাইজান!
করিম সাহেবের (সজিবের বস) সাথে যারা কাজ করেন তারা এরকম দু’এক বছর থেকেই অনেকটা নিরবেই চাকুরী ছেড়ে চলে যান। কারন, করিম সাহেবের অনেক ক্ষমতা এই অফিসে। নিজের ভুল কে তার জুনিয়রের ভুল বলে ম্যানেজমেন্টকে উপস্থাপন করে তাদের ক্যারিয়ারের বারটা বাজাতে তিনি একজন দক্ষ খেলোয়াড়। এইতো সেদিন তার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র তুষারকে তার রুমে নিয়ে বল্লেন, “ তোমার যে বেতন তাতে তুমি ২-৩ মাস বেকার থাকলেও সমস্যা হবে না। কিন্তু আমি আমার এই বেতনে আরেকটা চাকরি কই পাই? তুমি কোন টেনশন নিওনা। আমি তোমারে একটা ব্যাবস্থা করে দিব। আর যতদিন তুমি বেকার থাকবা, আমি তোমারে তোমার বেতনের সমান টাকা তোমার একাউন্টে দেয়ে দেব। তুমি ম্যানেজমেন্ট কে বলবা তুমি এই ভুল টা করেছ।“
কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনা প্রায়ই না ঘটলেও একেবারেই যে ঘটেনা তা নয়। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যাবস্থাপকের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারনে একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় বহুগুন। যেমন কখনো কখনো একটি মানুষই তার প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে আনার জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠে। তাদের বলা হয় – “ব্রান্ড এম্বাসেডর”।
একটা সময় ছিল মানুষ প্রতিষ্ঠানের সুনাম দেখে চাকুরীতে যোগদান করত। কিন্তু দিন বদলের কারনে তথ্যের সহজলভ্যতায় তা পাল্টিয়েছে বহুগুন। চাকুরী প্রার্থীগণ তার ভবিষ্যৎ কোম্পানীর ওয়েব সাইট যেমন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে, তেমনি তার ভবিষ্যৎ বসের লিংকডইন প্রোফাইল ও বিভিন্ন ভাবে তথ্য যোগাড় করেই তার সিদ্ধান্ত নেয়। কারন বলা হয় – “ অধিকাংশ মানুষ এখন কোম্পানী ছেড়ে যায় না, বস ছেড়ে যায়”।
এক্ষেত্রে একজন বসের উচিৎ তার মধ্যে বহুদিনের ধারণ করা সীমাব্দতা গুলো দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার স্কিল যুগোপযোগী করা। কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন প্রয়োজন এমন বই পাঠ করে তার জ্ঞানের ও তথ্য ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করা। জুনিয়রের যে কোন ধরনের ভুল হলে তা তার নিজের বলে ম্যানেজমেন্টের কাছে তুলে ধরা। কারন একজন বস তার জুনিয়রের ভুলের দায় ভার কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না। এতে করে তার জুনিয়র যেমন পরবর্তী সময়ে তার কাজ নিখুঁত ভাবে করতে উৎসাহ পাবে, তেমনি বসের প্রতি তার শ্রদ্ধাও বেড়ে যাবে কয়েক গুন। আসুন, কর্মক্ষেত্রে শুধু একজন “ম্যানেজার “ না হয়ে একজন “লিডার” হই।
(ঢাকা, ২২ই নভেম্বর)
লেখক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মী